ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আইন ও আদালত

‘সম্পূর্ণ রায় না পড়ে মন্তব্য নয়’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯০২ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০১৭
‘সম্পূর্ণ রায় না পড়ে মন্তব্য নয়’ অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম (ফাইল ফটো)

ঢাকা: ‘সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের দেওয়া ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় সার্বিকভাবে পড়ে একটু চিন্তা-ভাবনা করে সবার মতামত দেওয়া উচিৎ’ বলে মন্তব্য করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তিনি বলেছেন, ‘কিছু অংশ পড়ে মন্তব্য নয়’।

নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা ও আচরণ বিধিমালার গেজেট প্রকাশের বিষয়ে আপিল বিভাগে শুনানি শেষে রোববার (২০ আগস্ট) নিজ দফতরে এসব কথা বলেন তিনি।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘এ রায় নিয়ে আমি প্রথম থেকেই ক্ষুব্ধ।

কারণ, সমগ্র জাতি সংসদের কাছে দায়বদ্ধ এবং জবাবদিহি করতে হয়। সেখানে বিচারপতিরা দূরে থাকবেন, এটা তো হয় না’।

শৃঙ্খলাবিধির গেজেট প্রকাশে আরও সময় চাওয়া প্রসঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেল ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘আমি আদালতকে বলেছি, নানা কারণে পরিস্থিতি উত্তপ্ত। এজন্য শৃঙ্খলাবিধি প্রণয়নে লম্বা সময় দেওয়া হোক। তাহলে সার্বিক অবস্থা স্থিতি লাভ করবে। তখন আদালত ০৮ অক্টোবর পর্যন্ত সময় দেন’।

‘পরিস্থিতি উত্তপ্ত কেন?’- সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের মামলার রায় নিয়ে নানা দিক থেকে নানা রকম কথা হচ্ছে, সে কারণে’।

সাংবাদিকরা জানতে চান, ‘এটার জন্য দায়ী কারা’। জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আদালত এ বিষয়ে কাউকে দায়ী করেননি। আগের তারিখে বসার কথা হয়েছিল। সে বিষয়ে জানতে চেয়েছেন’।     

গেজেট প্রকাশ নিয়ে যদি সরকারের সঙ্গে বিচার বিভাগের ওই আলোচনার বিষয়ে কোনো কিছু হয়ে থাকে, তাহলে সংযোগ রক্ষার উদ্যোগ নেবেন বলে জানান মাহবুবে আলম।

তিনি বলেন, ‘আমি তো সব সময়ই বলে আসছি, আমি নীতি-নির্ধারক নই। আমি প্রশাসন ও বিচার বিভাগের মধ্যে সংযোগ রক্ষা করি। আমাকে দু’বিভাগের মধ্যে একটি সেতু বলা হয়। সর্বোচ্চ আদালতে শুনানিতেও বলেছি, আমার তো বসার কথা নয়, আমি এ বিষয়ে কিছু বলতে পারবো না। যদি এ রকম কোনো কিছু হয়ে থাকে, তাহলে আমি উদ্যোগ নেবো’।

এর আগে শুনানিতে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেন, ‘আমরা বিচার বিভাগ ধৈর্য ধরছি, যথেষ্ট ধৈর্য ধরছি’। তিনি এ বিষয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেলকে বলেন, ‘গত তারিখে কি কথা ছিলো? আলাপ-আলোচনা করার কথা হয়েছিলো। কার সঙ্গে কে কে থাকবেন?’
 
জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আইনমন্ত্রী’।   আদালত বলেন, ‘সবাই আপিল বিভাগের বিচারপতি। আমরা ইয়ে এতোই হয়ে গেলাম যে, আলোচনা পর্যন্ত করলেন না?
 
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘মিডিয়াতে অনেক কথা বলেন। আদালতে এসে অন্য কথা বলেন। আপনাকে নয়, আপনাদের বলছি। আপনিই বলেন, কবে কি হবে?…..আপনারা ঝড় তুলছেন। আমরা কোনো মন্তব্য করছি?’

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘না, আপনারা করেননি’।

প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে ছয় বিচারপতির আপিল বেঞ্চ অ্যাটর্নি জেনারেলের সময়ের আবেদন মঞ্জুর করে গেজেট প্রকাশে আগামী ০৮ অক্টোবর পর্যন্ত সময় দেন।

শুনানির শুরুতে ফের সময় চেয়ে আবেদনটি জানান মাহবুবে আলম।

এ সময় এ মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার এম আমীর উল ইসলাম বলেন, ‘আমার আবেদনটির শুনানি করুন’।  

জবাবে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমরা বিচার বিভাগ ধৈর্য ধরছি, যথেষ্ট ধৈর্য ধরছি।   আজকে একজন কলামিস্টের লেখা পড়েছি…সেখানে ধৈর্যের কথা বলা আছে। পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট প্রধানমন্ত্রীকে ইয়ে (অযোগ্য) করেছেন। সেখানে কিছুই (আলোচনা-সমালোচনা) হয়নি। আমাদের আরও পরিপক্কতা দরকার’।  

পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টের ওই রায় নিয়ে সর্বোচ্চ আদালতের বক্তব্য প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

এর আগে ০৬ আগস্ট দুই সপ্তাহ সময় দিয়ে আলাপ-আলোচনা করার কথা বলেছিলেন সর্বোচ্চ আদালত। কিন্তু এর মধ্যে সরকার ও আদালতের মধ্যে কোনো আলাপ-আলোচনা হয়নি।

গত ৩০ জুলাইও প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা আদালতে অ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, ‘রোববার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত (৩০ জুলাই থেকে ৩০ আগস্ট) দুপুর ২টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত আমি এবং আপিল বিভাগের বিচারপতিরা আপনাদের (সরকার) সময় দেবো। বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা ও আচরণ বিধিমালা নিয়ে আর রশি টানাটানি নয়। আইনমন্ত্রীসহ সরকারের যেকোনো বিশেষজ্ঞ আসবেন, বৈঠকে বসবো। আপনিও থাকবেন’।
 
১৯৯৯ সালের ০২ ডিসেম্বর মাসদার হোসেনের মামলায় (বিচার বিভাগ পৃথককরণ) ১২ দফা নির্দেশনা দিয়ে রায় দেওয়া হয়। ওই রায়ের ভিত্তিতে নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়নের নির্দেশনা ছিল। আপিল বিভাগের এ নির্দেশনার পর গত বছরের ০৭ মে আইন মন্ত্রণালয় একটি খসড়া শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধি প্রস্তুত করে সুপ্রিম কোর্টে পাঠায়।

গত বছরের ২৮ আগস্ট শুনানিকালে আপিল বিভাগ খসড়ার বিষয়ে বলেন, শৃঙ্খলা বিধিমালা সংক্রান্ত সরকারের খসড়াটি ছিলো ১৯৮৫ সালের সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালার হুবহু অনুরূপ। যা মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পরিপন্থী।

এর পরই সুপ্রিম কোর্ট একটি খসড়া বিধিমালা করে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠান। গত ১৬ জুলাই প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে এ সংক্রান্ত গেজেট শিগগিরই প্রস্তুত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন আইনমন্ত্রী। পরে ফের ২৭ জুলাই বিকেলে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে খসড়াটি হস্তান্তর করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
 
কিন্তু গত ৩০ জুলাই সকালে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে ছয় বিচারপতির বেঞ্চ আইনমন্ত্রীর দেওয়া খসড়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আইনমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হলো। তিনি খসড়া দিয়ে গেলেন। আমি তো খুশি হয়ে গেলাম। যদিও খুলে দেখিনি। কিন্তু এটা কী!’

এরপর বৈঠক ডেকেছিলেন আপিল বিভাগ।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০১৭
ইএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।