১৫ এপ্রিল এ চারজনের বিষয়ে সূচনা বক্তব্য ও সাক্ষ্যগ্রহণের দিনও ধার্য করা হয়েছে। বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল সোমবার (৫ মার্চ) এ আদেশ দেন।
এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে প্রসিকিউটর ছিলেন জেয়াদ আল মালুম ও রেজিয়া সুলতানা চমন। আসামি খালেক মণ্ডলের পক্ষে মুজাহিদুল ইসলাম শাহীন ও অপর আসামি সাতক্ষীরার রাজাকার কমান্ডার আব্দুল্লাহ হেল বাকীর পক্ষে অ্যাডভোকেট আব্দুস সাত্তার পালোয়ান শুনানি করেন। পলাতক দুই আসামির পক্ষে ছিলেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী গাজী এমইএইচ তামিম।
গত বছরের ১৯ মার্চ এ মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়। চার আসামির মধ্যে খালেক মণ্ডল গ্রেফতার, কমান্ডার আব্দুল্লাহ হেল বাকী শর্তসাপেক্ষে জামিনে রয়েছেন। বাকি দুই আসামি খান রোকনুজ্জামান ও জহিরুল ইসলাম টেক্কা খান পলাতক।
আনুষ্ঠানিক অভিযোগে আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ, আটক, নির্যাতনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের সাতটি অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ৬ জনকে হত্যা, ২ জনকে ধর্ষণ, ১৪ জনকে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ।
২০১৫ সালের ১৬ জুন ভোরে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার খলিলনগর মহিলা মাদ্রাসায় নাশকতার উদ্দেশ্যে কয়েকজন সহযোগীকে নিয়ে গোপন বৈঠকের অভিযোগে আব্দুল খালেক মণ্ডলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ওই বছরের ২৫ আগস্ট খালেক মণ্ডলের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরায় দায়ের করা মানবতাবিরোধী অপরাধের তিনটি মামলার মধ্যে শহীদ মোস্তফা গাজী হত্যা মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখান ট্রাইব্যুনাল।
শিমুলবাড়িয়া গ্রামের রুস্তম আলীসহ পাঁচজনকে হত্যার অভিযোগে ২০০৯ সালের ০২ জুলাই খালেক মণ্ডলের বিরুদ্ধে মামলাটি করেন শহীদ রুস্তম আলীর ছেলে নজরুল ইসলাম গাজী।
এ মামলার চার আসামিদের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ০৭ আগস্ট থেকে তদন্ত শুরু হয়ে গত ০৫ ফেব্রুয়ারি শেষ হয়। একজন তদন্তকারী কর্মকর্তা ও জব্দ তালিকার সাক্ষীসহ মোট ৬০ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দেবেন।
গত বছরের ০৮ ফেব্রুয়ারি চারজনের বিরুদ্ধে তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেন ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। পরে ৮ মার্চ অন্য তিনজনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল।
১৭ মার্চ দুপুর দেড়টার দিকে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার আলিপুর ইউনিয়নের বুলারাটী গ্রামের বাড়ি থেকে আব্দুল্লাহ-হেল বাকীকে গ্রেফতার করা হয়। ১৯ মার্চ হাজির করা হলে ঢাকায় থাকা ও ধার্য দিনে হাজিরের শর্তে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এম আব্দুর রউফের হেফাজতে ১০৩ বছর বয়স্ক বাকীকে জামিন দেওয়া হয়।
সাত অভিযোগ
প্রথম অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ১৮ আগস্ট সকাল ৮টার দিকে বেতনা নদীর পাড়ে বুধহাটা খেয়াঘাটে আফতাবউদ্দিন ও সিরাজুল ইসলামকে রাজাকার কমান্ডার ইছাহাক (মৃত) ও তার সহযোগীরা গুলি করে হত্যা করেন। পরে স্থানীয় খলিলুর রহমান, মো. ইমাম বারী, মো. মুজিবর রহমান ও ইমদাদুল হককে রাজাকার বাহিনীর নির্যাতন কেন্দ্র ডায়মন্ড হোটেলে নিয়ে নির্যাতন করা হয়।
দ্বিতীয় অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের পহেলা ভাদ্র ধুলিহর বাজার থেকে ধরে কমরউদ্দিন ঢালীকে দড়ি দিয়ে বেঁধে নিয়ে যান ১০/১২ জন রাজাকার সদস্য। তাদের নেতৃত্বে ছিলেন সাতক্ষীরা মহকুমার রাজাকার কমান্ডার এম আব্দুল্লাহ আল বাকী ও খান রোকনুজ্জামান। পরে ঢালীর মরদেহ পাওয়া যায় বেতনা নদীর পাড়ে।
তৃতীয় অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের পহেলা ভাদ্র বুধবার বিকেল ৩টা থেকে সাড়ে ৩টার দিকে রাজাকার কমান্ডার আব্দুল্লাহ আল বাকী, রোকনুজ্জামান খানসহ ৪-৫ জন মিলে সবদার আলী সরদারকে চোখ বেঁধে পিকআপভ্যানে তুলে নিয়ে যান। পরে আর তার সন্ধান মেলেনি।
চতুর্থ অভিযোগে বলা হয়েছে, সোহেল উদ্দিন সানা তার বড় ছেলে আব্দুল জলিল সানাকে সঙ্গে নিয়ে পহেলা ভাদ্র বুধহাটা বাজার অতিক্রমের সময় রাজাকার কমান্ডার ইছাহাক (মৃত) ও তার সঙ্গী রাজাকারদের হাতে আটক হন। পরে তাদের ডায়মন্ড হোটেলে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। সোহেল ও সানার সন্ধান আর মেলেনি।
পঞ্চম অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ৭ আষাঢ় সকাল ৭টার দিকে আবুল হোসেন ও তার ভাই গোলাম হোসেন নিজেদের বাড়ির পাশে হালচাষ করছিলেন। সকাল ৯টার দিকে গোলাম হোসেন বাড়িতে নাস্তা খেতে এলে আসামি আব্দুল খালেক মণ্ডল ও জহিরুল ইসলাম টেক্কা খানসহ ১০/১২ জন রাজাকার সদস্য তাকে ধরে নিয়ে পাশের পাটক্ষেতে গুলি করে হত্যা করেন।
ষষ্ঠ অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ০২ ভাদ্র সকালে বাশদহ বাজারের ওয়াপদা মোড় থেকে মো. বছির আহমেদকে ধরে নিয়ে নির্যাতনের পর তার বুড়ো আঙুলের রগ কেটে দেন রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা।
সপ্তম অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের জৈ্যষ্ঠ মাসের মাঝামাঝি কোনো এক সময়ে আসামি আব্দুল খালেক মণ্ডল ও রাজাকার কমান্ডার জহিরুল ইসলাম টেক্কা খান একদল পাকিস্তানি সৈন্যকে সঙ্গে নিয়ে কাথণ্ডা প্রাইমারি স্কুলে স্থানীয় গ্রামবাসীদের ডেকে মিটিং করেন। সেই মিটিংয়ে বলা হয়, যারা আওয়ামী লীগ করেন এবং যারা মুক্তিযুদ্ধে গেছেন তারা ‘কাফের’। এরপর তারা কাথণ্ডা ও বৈকারি গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেওয়া ব্যক্তিদের বাড়ি-ঘর লুট করে জ্বালিয়ে দেন। সে সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দুই সদস্য মৃত গোলাম রহমানের স্ত্রী আমিরুনকে তার বাড়ির রান্নাঘরের পেছনে আটকে ধর্ষণ করেন। এছাড়া বৈকারি গ্রামের ছফুরা খাতুনকে মৃত শরীয়তউল্লাহর ফাঁকা বাড়িতে নিয়ে ধর্ষণ করেন চার পাকিস্তানি সৈন্য।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৯ ঘণ্টা, মার্চ ০৫, ২০১৮
ইএস/এএ