ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

‘বারবার আসা সম্ভব নয়, যতদিন ইচ্ছা সাজা দিয়ে দিন’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৫, ২০১৮
‘বারবার আসা সম্ভব নয়, যতদিন ইচ্ছা সাজা দিয়ে দিন’ খালেদা জিয়া

ঢাকা: ‘আমি খুবই অসুস্থ। আমার পক্ষে বারবার আদালতে আসা সম্ভব নয়। আগেও আপনারা আমার বিচার করেছেন, এখনও করছেন। আপনাদের যতদিন ইচ্ছা আমাকে সাজা দিয়ে দিন। আমি আর এখানে আসতে পারবো না।’

বুধবার (০৫ সেপ্টেম্বর) জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার শুনানিতে কারাগারে বন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আদালতে এসব কথা বলেন।

এর আগে দুপুর সোয়া ১২টার দিকে খালেদা জিয়াকে হুইল চেয়ারে করে পুরাতন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে স্থাপিত অস্থায়ী আদালতে হাজির করা হয়।

এ সময় তার পরনে ছিল হাল্কা গোলাপি রংয়ের শাড়ি। চোখে ছিলো রোদচশমা। আদালত চলাকালে বেশ বিমর্ষ ছিলেন তিনি। তার ডান হাত কাঁপছিলো। এ সময় তার গৃহপরিচারিকা ফাতেমা সঙ্গে ছিলেন।

আদালত এজলাসে ওঠার আগে পর্যন্ত খালেদা জিয়া তার অন্যতম আইনজীবী গোলাম মোস্তফা খানের সঙ্গে কথা বলেন। দুপর ১২টা ২২ মিনিটে এজলাসে ওঠেন বিচারক।

এ সময় দুদকের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোশারফ হোসেন কাজল আদালতকে বলেন, মামলাটি যুক্তিতর্কের পর্যায়ে আছে। কারা অভ্যন্তরে আদালত বসানোর বিষয়ে গতকাল (০৪ সেপ্টেম্বর) গেজেট হয়েছে। গেজেটের বিষয় আমি ব্যক্তিগতভাবে খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়াকে অবগত করি। রাতে তার বাসায় গেজেট পৌঁছে দিয়েছি।  

‘আজ (বুধবার) সকালে খালেদার আইনজীবীরা আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে উপস্থিত হয়েছেন জেনে তাদের বিষয়টি জানিয়ে এসেছি। কারা অভ্যন্তরে মামলার বিষয়টি তারা জানেন। সুতরাং মামলার কার্যক্রম শুরু করা যেতে পারে। ’

বিচারক মামলার আসামি জিয়াউল ইসলাম মুন্নাকে তার আইনজীবীর কথা জিজ্ঞাসা করেন। বিচারক বলেন, ‘আপনারা অন্তর্বর্তীকালীন জামিনে রয়েছেন। জামিনের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন না করলে তো আপনাদের জামিন বাতিল হয়ে যাবে। ’ 

এ সময় ঢাকা বারের সভাপতি ও খালেদার অন্যতম আইনজীবী গোলাম মোস্তফা খান আদালতকে বলেন, এ মামলার আসামিপক্ষের সিনিয়র আইনজীবীরা এখানে আদালত হওয়ার বিষয়ে অবহিত নন। তারা না আসায় আসামিপক্ষের কোনো দরখাস্ত দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। সুতরাং মামলাটি যে পর্যায়ে আছে তেমনই রেখে পরবর্তী আর একটি তারিখ নির্ধারণ করা যেতে পারে।

এ সময় খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমি খুবই অসুস্থ। আমি পা নিচে ঝুলিয়ে বসতে পারি না। আমাকে পা উপরে তুলে বসতে হয়। আমার পক্ষে বারবার আদালতে আসা সম্ভব নয়। আগেও আপনারা আমার বিচার করেছেন, এখনও করছেন। আপনাদের যতদিন ইচ্ছা আমাকে সাজা দিয়ে দিন। আমি আর এখানে আসতে পারবো না। ’

শুনানি শেষে ঢাকার ৫ম বিশেষ জজ আদালতের বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান সব আসামির জামিনের মেয়াদ বাড়িয়ে আগামী ১২ ও ১৩ সেপ্টেম্বর মামলাটি শুনানির জন্য পরবর্তী দিন ধার্য করেন।

পরে খালেদা জিয়া উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, এখানে মামলার সিদ্ধান্ত হয় সাতদিন আগে। মামলার আগের দিন কেন গেজেট প্রকাশ করতে হলো? এখানে কোনো ন্যায় বিচার নেই। ইচ্ছামতো বিচার চলছে।

এদিকে মামলার শুনানি উপলক্ষে সকাল থেকেই কারাগারের আশপাশে নেওয়া হয় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পুরাতন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রশাসনিক ভবনের ৭ নম্বর কক্ষ ও আশেপাশের কক্ষকে নতুন করে রং করা হয়। ফলস সিলিং করা হয়। জানালায় লাগানো হয় নতুন পর্দা।

গোটা এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারে অতিরিক্ত পুলিশে মোতায়েন করা হয়। বন্ধ রাখা হয় পুরাতন কারাগারের সামনের সড়কে যান চলাচল ও আশপাশের দোকানপাট।  

মঙ্গলবার (০৪ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিভাগ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার বিচার সম্পন্ন করতে ঢাকার পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারে অস্থায়ী আদালত স্থাপন করে গেজেট প্রকাশ করে।

ওই গেজেটে বলা হয়, ‘নিরাপত্তাজনিত কারণে’ সরকারি আলিয়া মাদ্রাসার মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী আদালত থেকে পুরাতন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রশাসনিক ভবনের কক্ষ নম্বর-৭ কে অস্থায়ী আদালত ঘোষণা করা হয়েছে। এখন থেকে সেখানেই খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া চ্যারিটেবল দুর্নীতি মামলার বিচার কাজ সম্পন্ন হবে।   

গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় দণ্ডিত হওয়ার পর থেকে পুরাতন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি আছেন খালেদা জিয়া। এরপর থেকে তারিখ পড়লেও ‘অসুস্থ থাকায়’  চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় আদালতে হাজির হতে পারেননি তিনি।

চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় মোট আসামি চারজন। খালেদা ছাড়া অভিযুক্ত অপর তিন আসামি হলেন- খালেদা জিয়ার তৎকালীন রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছ চৌধুরীর তৎকালীন একান্ত সচিব বর্তমানে বিআইডব্লিউটিএ-এর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।

এ মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন মোট ৩২ জন সাক্ষী। ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা করা হয়। এ ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগে এ মামলা করেছে দুদক।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৫, ২০১৮/আপডেট: ১৬৩৭ ঘণ্টা
এমআই/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।