বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) হত্যাকারী মারুফ রেজা ও শাহীন চৌধুরীর ভাই রেজওয়ান আদালতে ১৬৪ ধারায় হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তাদের জবানবন্দিতে এ তথ্য উঠে আসে।
ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন তাদের জবানবন্দি রেকর্ড করেন। জবানবন্দিতে উঠে আসে যে দুই জা সগিরা ও শাহীনের মধ্যে ছিল পারিবারিক দ্বন্দ্ব। সাগিরার রূপ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ থেকে স্নাতক সম্মান ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিকে ঈর্ষা করতেন শাহীন।
সিদ্ধেশ্বরীর ভিকারুন্নেসা নূন স্কুল থেকে মেয়েকে আনার পথে শাহীনের ভাই রেজওয়ান সগিরাকে রাস্তার মধ্যে চিনিয়ে ও দেখিয়ে দেন শ্যুটার মারুফ রেজাকে। মারুফ আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি করেন সগিরাকে। সগিরার বুক ভেদ করে পিঠ দিয়ে গুলি বেরিয়ে যায়।
এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত ওই এলাকার কুখ্যাত সন্ত্রাসী হরর মুন্না এর আগে ক্রসফায়ারে মারা যান।
তারা আরও জানান, সগিরার ভাসুর ডা. হাসান আলী দীর্ঘদিন চিকিৎসক হিসেবে লিবিয়ায় চাকরি করতেন। স্ত্রী সগিরা নিহত হওয়ার পর বিয়ে করেননি তার স্বামী আব্দুস সালাম চৌধুরী। হত্যাকাণ্ডের সময় সাগিরা-সালাম দম্পতির তিন কন্যা সন্তান ছিল।
দেশে ফিরে পিবিআই এর হাতে গ্রেফতার হওয়া ডা. হাসান এবং শাহীন চৌধুরীও একই আদালতে বুধবার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে নিজেদের জড়িয়ে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি জবানবন্দি দেন।
মামলাটিতে অধিকতর তদন্তের আদেশের বিরুদ্ধে করা ২৮ বছর আগের আবেদন চলতি বছর ২৬ জুন খারিজ করে দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের বেঞ্চ রায়ে ৬০ দিনের মধ্যে মামলাটির অধিকতর তদন্ত শেষ করতে পিবিআইকে নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে তদন্ত শেষ হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে বিচারকাজ শেষ করার নির্দেশ দেন উচ্চ আদালত।
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ১৯৮৯ সালের ২৫ জুলাই সগিরা মোর্শেদ সালাম ভিকারুননিসা নূন স্কুল থেকে মেয়েকে আনতে যাচ্ছিলেন। বিকেল ৫টার দিকে সিদ্ধেশ্বরী রোডে পৌঁছামাত্র মোটরবাইকে আসা ছিনতাইকারীরা তার হাতের সোনার চুড়ি ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। তিনি দৌড় দিলে তাকে গুলি করা হয়। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পথেই সগিরা মোর্শেদ সালাম মারা যান।
ওইদিনই রমনা থানায় অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে মামলা করেন সগিরা মোর্শেদ সালামের স্বামী সালাম চৌধুরী। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী রিকশাচালক জড়িত দু’জনকে শনাক্ত করলেও অজ্ঞাত কারণে মিন্টু ওরফে মন্টু ওরফে মরণ নামে একজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় গোয়েন্দা পুলিশ।
১৯৯১ সালের ১৭ জানুয়ারি আসামি মন্টুর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতের বিচারক আবু বকর সিদ্দীক। সাক্ষ্য নেওয়া হয় সাতজনের।
সাক্ষ্যে বাদীপক্ষ থেকে বলা হয়, তদন্তকালে আসামি মন্টু ও তৎকালীন (১৯৮৯) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মেজর জেনারেল মাহমুদুল হাসানের নিকটাত্মীয় মারুফ রেজা গ্রেফতার হন। কিন্তু মারুফ রেজার নাম বাদ দিয়েই অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।
সাক্ষ্যগ্রহণ চলাকালে মারুফ রেজার নাম আসায় রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে ১৯৯১ সালের ২৩ মে মামলার অধিকতর তদন্তের আদেশ দেন ঢাকার বিচারিক আদালত। ওই আদেশের বিরুদ্ধে মারুফ রেজার রিভিশন আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯১ সালের ২ জুলাই হাইকোর্ট মামলাটির অধিকতর তদন্তের আদেশ ও বিচারকাজ ছয় মাসের জন্য স্থগিত করার পাশাপাশি অধিকতর তদন্তের আদেশ কেন বাতিল করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন।
পরের বছর ২৭ আগস্ট জারি করা রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ওই মামলার বিচারকাজ স্থগিত থাকবে বলে আরেকটি আদেশ দেন হাইকোর্ট। এ মামলার সবশেষ তদন্ত কর্মকর্তা সম্প্রতি বিষয়টি অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের নজরে আনলে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের উদ্যোগ নেয় রাষ্ট্রপক্ষ। এরপর বিষয়টি বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের বেঞ্চে তোলা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০১৯
কেআই/এএ