তবে আমমোক্তারনামার শর্ত ভঙ্গ করে নিজের ছেলের নামে সম্পত্তি হস্তান্তর করে দেন ওই ব্যক্তি। এমন অভিযোগ করে সেই সম্পত্তির মালিকানা ও দখল পেতে এবার আদালতের দ্বারস্থ হলেন লেখকের দুই সন্তান ইরাজ ওয়ালীউল্লাহ এবং সিমিন ওয়ালীউল্লাহ।
রোববার (১৯ জানুয়ারি) ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ উৎপল ভট্টাচার্যের আদালতে হাজির হয়ে মামলাটি দায়ের করেন তারা। মামলায় সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর দেড়শ কোটি টাকা মূল্যের গুলশানের বেদখল সম্পত্তির মালিকানা ও দখল চাওয়া হয়। একইসঙ্গে অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা হিসেবে জমির ওপর যে কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণ এবং সম্পত্তির আকারের পরিবর্তন বা ক্ষতিসাধনের ওপর অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞারও আবেদন করা হয়।
মামলায় তাদের আত্মীয় ও গৃহনির্মাণ ব্যবসায়ী কে জেড ইসলামসহ ৫ জনকে মূল বিবাদী করা হয়েছে। তারা হলেন- কে জেড ইসলামের স্ত্রী খাদিজা ইসলাম, ছেলে রাইয়ান কামাল, অপর ছেলে রাহাত কামাল, নির্মাণ বিল্ডার্স অ্যান্ড ডেভেলপার্স লিমিটেড।
এ ছাড়া মামলায় রাজউক, গৃহায়নও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব, ঢাকার জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সহ ৬ জনকে মোকাবেলা বিবাদী করা হয়।
বিচারক বাদীর বক্তব্য শুনে, ওই সম্পত্তির ওপর কোনো প্রকার স্থাপনা নির্মাণসহ যে কোনো ধরনের পরিবর্তন সাধন বা হস্তান্তরের ওপর কেন নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে না, তা জানতে চেয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন। আগামী দুই দিনের মধ্যে বিবাদীদের এই নোটিশের বিষয়ে জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আদালতে বাদীপক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী রানা দাশগুপ্ত, চিত্তরঞ্জন বল ও দীপঙ্কর ঘোষ। পরে আদেশের বিষয়টি আইনজীবী দীপকঙ্কর ঘোষ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
মামলার আরজি থেকে জানা যায়, বাংলা সাহিত্যের প্রখ্যাত কথা সাহিত্যিক প্রবাসে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত ছিলেন। সেই সূত্রে ফরাসি নাগরিক আন মারী ওয়ালীউল্লাহকে তিনি বিয়ে করেন। তাদেরই দুই সন্তান ইরাজ ওয়ালীউল্লাহ এবং সিমিন ওয়ালীউল্লাহ। তারা দুজনই চাকরিসূত্রে প্যারিসে থাকেন। বাদীগণ ফ্রান্স ও বাংলাদেশের দ্বৈত নাগরিক।
ওয়ালীউল্লাহ ১৯৭০ সালের ১২ মার্চ গুলশান মডেল টাউনের ১০ নম্বর প্লটের সিইএন (বি), ৯৬ নম্বর সড়কে ১ বিঘা ২ কাঠা জমি এবং তার ওপর দুই তলা ভবন জনৈক মোহাম্মদ আশরাফীর কাছ থেকে হস্তান্তর সূত্রে মালিকানা পান। রাজউকের এই সম্পত্তির ৯৯ বছরের জন্য লিজ সূত্রে মালিক ছিলেন জনৈক মোহাম্মদ আশরাফী।
মুক্তিযুদ্ধ শেষ হওয়ার আগেই ওয়ালীউল্লাহ মারা যান। এ সময় স্ত্রী আন মারী ছিলেন ফ্রান্সের নাগরিক, অপরদিকে দুই সন্তান ছিলেন অপ্রাপ্ত বয়স্ক। এ অবস্থায় এই সম্পত্তি দেখাশুনার জন্য আন মারী তার স্বামী সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর মামাতো ভাই তাদের পরিবারের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি কে জেড ইসলামকে আমমোক্তারনামা দেন।
পরবর্তী সময়ে তার ছেলে-মেয়ে প্রাপ্ত বয়স্ক হলে কে জেড ইসলামের বরাবরে নতুন আরেকটি আমমোক্তারনামা দেয়া হয়। আমমোক্তারনামা সূত্রে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পেয়ে কে জেড ইসলাম ওই বাড়িতেই পরিবারসহ থাকতেন। আন মারী ও তার দুই সন্তান ঢাকায় এলে কে জেড ইসলামের সঙ্গেই ওই বাড়িতে উঠতেন।
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর দুই সন্তান ও তাদের মা আন মারী ওয়ালীউল্লাহ নালিশী সম্পত্তিতে দখল থাকা অবস্থায় ১৯৯৭ সালের ১২ জুলাই আন মারি মারা যান। মৃত্যুর আগেই মায়ের সঙ্গে তার দুই সন্তানও ঐ সম্পত্তিতে নিজ নাম জারি করে মালিকনা প্রাপ্ত হন। তখনও আমমোক্তারনামা সূত্রে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব তাদের চাচা কে জেড ইসলামের কাছেই ছিল।
আরজিতে আরও বলা হয়, ২০১৭ সালের ১৬ এপ্রিল ফ্রান্স থেকে ঢাকায় আসেন ইরাজ ওয়ালীউল্লাহ এবং সিমিন ওয়ালীউল্লাহ। উদ্দেশ্য ছিল, নিয়ম অনুযায়ী মৃত মা আন মারীকে বাদ দিয়ে সম্পত্তিটি নিজেদের নামে নামজারি করা।
তবে ঢাকায় এসে তারা ওই বাড়িতে গেলে জনতে পারেন যে জায়গা ও বাড়িটি কে জেড ইসলাম তার বড় ছেলে রাইয়ান কামালের কাছে আমমোক্তার নামার শর্ত লঙ্ঘন করে হস্তান্তর করেছেন। তবে সম্পত্তিটি নিজের নামে নামজারি করতে রাজউকে গিয়ে ব্যর্থ হন রাইয়ান কামাল। এরপর রাজউকের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিট করেও নাম জারির আদেশ পাননি।
এমতাবস্থায় সৈয়দ ওয়ালী উল্লাহর এই দুই সন্তান সম্পত্তিটি মালিকানার ঘোষণা এবং আমমোক্তারনামার শর্ত লঙ্ঘন করে দেয়া হস্তান্তর দলিল বাতিল চেয়ে এই মামলা করলেন সৈয়দ ওয়ালী উল্লাহর দুই সন্তান।
বাংলাদেশ সময়: ২১২৯ ঘণ্টা, জানয়ারি ১৯, ২০২০
কেআই/এজে