নিজ বাস ভবনে সোমবার (৮ জুন) এক ব্রিফিংয়ে এ দাবি করেছেন ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ এ আইনজীবী। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক এ সভাপতি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান পদেও রয়েছেন।
খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, আমি দাবি করবো অবিলম্বে সব আদালতগুলো খুলে দেওয়া হোক এবং নির্দিষ্ট নীতিমালা দেওয়া হোক। কয়টি মামলা, কোন কোর্ট শুনবে, কি ধরনের শোনা হবে ইত্যাদি। আপনারা দেখেছেন, হাইকোর্টের কোর্ট রুম অনেক বড়, বিরাট কোর্ট। সেখানে আমরা দু’তিনজন, চারজন করে আইনজীবী থাকলে, আমরা যদি মেইন্টেন করি, আমি মনে করি সরকার যে উদ্দেশ্যে কোর্ট বন্ধ রেখেছে সে উদ্দেশ্য ব্যহত হবে না। তবে একটা জিনিস করতে হবে হাইকোর্টে অনেক সংখ্যক বিচারপ্রার্থী আসে, তাদের সঙ্গে অনেক লোক যাতে না আসেন সেটা নিশ্চিত করতে হবে। এটা সীমিত করতে হবে।
‘করোনার এ ব্যাধি কবে শেষ হবে তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। তাই দীর্ঘ দিন ধরে আদালত বন্ধ থাকতে পারে না। এতে বিচারপ্রার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং আইনজীবীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিষয়টি বিবেচনা করে প্রধান বিচারপতি অবিলম্বে কোর্ট খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা নেবেন’ বলে আশা প্রকাশ করেন খন্দকার মাহবুব হোসেন।
বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতে সাধারণ ছুটিতে আদালত বন্ধ রেখে ভার্চ্যুয়াল কোর্ট চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয় গত ২৬ এপ্রিল ।
এজন্য সুপ্রিম কোর্টের রুলস কমিটি পুনরায় গঠন এবং ভার্চ্যুয়াল কোর্ট চালু করার জন্য প্রয়োজনীয় আইনগত প্রতিবন্ধকতা দূর করতে পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
ওই দিন প্রথমবারের ভিডিও কনফারেন্সে প্রধান বিচারপতির সভাপতিত্বে ফুলকোর্ট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কনফারেন্সে সংযুক্ত ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের ৮৮ জন বিচারপতি। এ অবস্থায় গত ৭ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভপতিত্বে গণভবনে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘আদালত কর্তৃক তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ ২০২০’ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়।
২ দিন পর ৯ মে ভার্চ্যুয়াল কোর্ট সম্পর্কিত অধ্যাদেশ জারি করা হয়। অধাদেশে বলা হয়, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ বা ক্ষেত্রমত হাইকোর্ট বিভাগ, সময় সময়, প্র্যাকটিস নির্দেশনা (বিশেষ বা সাধারণ) জারি করতে পারবে।
অধ্যাদেশে আরও বলা হয়, ফৌজদারি কার্যবিধি বা দেওয়ানি কার্যবিধি বা আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনে ভিন্নতর যাই থাকুক না কেন, যেকোনো আদালত এ অধ্যাদেশের ধারা ৫ এর অধীন জারি করা প্র্যাকটিস নির্দেশনা (বিশেষ বা সাধারণ) সাপেক্ষে, অডিও-ভিডিও বা অন্য কোনো ইলেক্ট্রনিক পদ্ধতিতে বিচারপ্রার্থী পক্ষরা বা তাদের আইনজীবী বা সংশ্লিষ্ট অন্য ব্যক্তি বা সাক্ষীদের ভার্চ্যুয়াল উপস্থিতি নিশ্চিত করে যেকোনো মামলার বিচার বা বিচারিক অনুসন্ধান বা দরখাস্ত বা আপিল শুনানি বা সাক্ষ্যগ্রহণ বা যুক্ততর্ক গ্রহণ বা আদেশ বা রায় দিতে পারবে। ’
অডিও-ভিডিও বা অন্য কোনো ইলেক্ট্রনিক পদ্ধতিতে বিচারপ্রার্থী পক্ষ বা তাদের আইনজীবী বা সংশ্লিষ্ট অন্য ব্যক্তি বা সাক্ষীদের ভার্চ্যুয়াল উপস্থিতি নিশ্চিত করা ছাড়া অন্যান্য বিষয়ের ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধি বা ক্ষেত্রমতে দেওয়ানি কার্যবিধি অনুসরণ করতে হবে।
কোনো ব্যক্তির ভার্চ্যুয়াল উপস্থিতি নিশ্চিত করা হলে ফৌজদারি কার্যবিধি বা দেওয়ানি কার্যবিধি বা অন্য কোনো আইনের অধীন আদালতে তার সশরীরে উপস্থিতির বাধ্যবাধকতা শর্ত পূরণ হয়েছে বলে গণ্য হবে।
পরে ১০ মে ভিডিও কনফারেন্সে সব বিচারপতিদের সঙ্গে বৈঠকের পর (ফুলকোর্ট) সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে একটি চেম্বার কোর্ট এবং হাইকোর্ট বিভাগে কয়েকটি বেঞ্চ গঠন করেন প্রধান বিচারপতি।
করোনা ভাইরাসের কারণে গত ২৬ মার্চ থেকে সরকারি আদেশের সঙ্গে মিল রেখে আদালত অঙ্গনেও সাধারণ ছুটি ছিলো। পরে দফায় দফায় সাধারণ ছুটিরও মেয়াদ বাড়ানো হয়। সর্বশেষ গত ১৬ মে দেওয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে সাধারণ ছুটির মেয়াদ ৩০ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়। তবে সরকার ৩০ মে’র পর সাধারণ ছুটি আর বাড়ায়নি।
তবে কোর্ট না খুলে ভার্চ্যুয়াল আদালত ১৫ জুন পর্যন্ত অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত দেন সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৮ ঘণ্টা, জুন ০৮, ২০২০
ইএস/ওএইচ/