ঢাকা: স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে অনতিবিলম্বে সুপ্রিম কোর্টসহ সারাদেশের আদালতসমূহ নিয়মিতভাবে চালু করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রধান বিচারপতিকে অনুরোধ জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি।
বুধবার (০৮ জুলাই) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির কার্যকরী কমিটির এক সভা শেষে এ বিষয়ে নেওয়া সিদ্ধান্তসমূহ প্রধান বিচারপতি বরাবরে পাঠানো হয়।
প্রধান বিচারপতি বরাবরে পাঠানো ওই চিঠিতে বলা হয়, গত ১২ মার্চ, থেকে অদ্যাবধি সুপ্রিম কোর্টের নিয়মিত ছুটি এবং ভয়াবহ করোনা পরিস্থিতিতে দেশব্যাপী সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটির কারণে দেশের সর্বোচ্চ আদালতসহ সারাদেশের আদালতসমূহে নিয়মিত বিচার কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
এই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির জন্য আমরা কেউই প্রস্তুত ছিলাম না। ১২ মার্চ থেকে অদ্যাবধি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ৩৫ জন সদস্য মৃত্যুবরণ করেছেন। তাদের অনেকেরই করোনা উপসর্গ ছিল। এছাড়া দেশব্যাপী অনেক বিজ্ঞ আইনজীবী করোনার কারণে মুত্যুবরণ করেছেন। অসুস্থ হয়েছেন শতাধিক আইনজীবী। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিসহ নিম্ন আদালতের অনেক বিচারক, কর্মকর্তা-কর্মচারী আক্রান্ত হয়েছেন। নিম্ন আদালাতের বিচারকের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। এটি আমাদের প্রত্যেকের জন্য গভীর উদ্বেগের বিষয়।
এমন পরিস্থিতিতেও ইতোমধ্যে সরকার সাধারণ ছুটি বাতিল করেছে। সরকারি-বেসরকারি অফিস, ব্যাংক, কলকারখানা, মার্কেট ও গণপরিবহন চালু হয়েছে। কিন্তু স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়মিত আদালতের মাধ্যমে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়নি। ফলে, একদিকে যেমন আইনজীবীরা যথাযথভাবে তাদের পেশা পরিচালনা করতে পারছেন না ও আর্থিক সংকটে পতিত হচ্ছেন, অন্যদিকে বিচারপ্রার্থী সাধারণ মানুষও ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
চিঠিতে আরও বলা হয়, একথা অনস্বীকার্য যে, অনিবার্য পরিস্থিতির কারণেই ভার্চ্যুয়াল আদালতের সৃষ্টি। তবে আমাদের তথ্যানুযায়ী, অধিকাংশ আইনজীবী নানা সীমাবদ্ধতার কারণে ভার্চ্যুয়াল আদালতে মামলা করার সুযোগ পাচ্ছেন না। এছাড়া ভার্চ্যুয়াল আদালতে আগাম জামিনের মতো অতীব গুরুত্বপুর্ণ আইনি ব্যবস্থাপনা না থাকায় বিচারপ্রার্থী জনগণ ব্যাপক পুলিশি হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
এসব বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির করণীয় বিষয়ে কার্যকরী কমিটির এক জরুরি সভা বুধবার ৮ জুলাই অনুষ্ঠিত হয়েছে। কার্যকরী কমিটির সদস্যরা বিদ্যমান পরিস্থিতি বিস্তারিতভাবে আলোচনা করে নিয়মিত আদালত চালুর ব্যাপারে করণীয় সম্পর্কে কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেয়।
সিদ্ধান্তগুলো হলো— ভার্চ্যুয়াল আদালত নিয়মিত আদালতের বিকল্প হতে পারে না। সুতরাং স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে অনতিবিলম্বে নিয়মিত আদালত চালুর পক্ষে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির কার্যকরী কমিটি অতিমত প্রকাশ করে।
যেহেতু করোনার ভয়াবহতার কারণে ইতোমধ্যে আদালতের মূল্যবান সময় অপ্রত্যাশিতভাবে নষ্ট হয়ে গেছে। সুতরাং এ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ২০২০ সালের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের বাৎসরিক ছুটি এবং সকল আদালতের ডিসেম্বরের ছুটি বাতিল করতে হবে এবং পরবর্তী বছরগুলোতে আদালতের ঐচ্ছিক ছুটিও কমিয়ে আনতে হবে।
নিয়মিত আদালত চালুর পূর্বে স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যবস্থা ও নীতিমালা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের ব্যবস্থা করতে হবে। যতদিন পর্যন্ত নিয়মিত আদালত চালু করা সম্ভব হচ্ছে না ততদিন পর্যন্ত সকল আইনজীবী যেন পেশা পরিচালনার সুযোগ পান সেটি নিশ্চিত করতে হবে এবং এ লক্ষ্যে বিদ্যমান ভার্চ্যুয়াল কোর্টের সংখ্যা, পরিধি এবং বিচারিক সময়সীমা বৃদ্ধি করতে হবে। বিচারপ্রার্থী মানুষের ন্যায় বিচার নিশ্চিত করার জন্য ভার্চ্যুয়াল আদালতেও আগাম জামিন চালু করতে হবে।
বালাদেশ সময়: ১৭২৬ ঘণ্টা, জুলাই ০৮, ২০২০
ইএস/এমজেএফ