ঢাকা: স্বাস্থ্যবিধি মেনে কীভাবে নিয়মিত আদালত চালু করা যায় সে বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি, সিনিয়র আইনজীবী ও বর্তমান নির্বাচিত কমিটির সদস্যদের সঙ্গে প্রধান বিচরপতির আলোচনা চেয়েছেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন।
বুধবার (৮ জুলাই) এক সংবাদ সম্মেলনে এমন মত ব্যক্ত করেছেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, লকডাউন পরবর্তী সময়ে জীবন-জীবিকার কথা চিন্তা করে সরকারের পক্ষ থেকে অফিস, দোকানপাট, মিল, কল-কারখানা, বাস, লঞ্চসহ বিভিন্ন ট্রান্সপোর্ট খুলে দেওয়া হয় এবং ঈদেও বাড়ি যওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়।
‘এ অবস্থায় সাময়িক ব্যবস্থা হিসেবে প্রধান বিচারপতি স্বল্পসংখ্যক বিচারপতিদের নিয়ে ভার্চ্যুয়াল আদালত চালু করেন। নিঃসন্দেহে এটা একটি ভালো কাজ হয়েছে এবং এজন্য প্রধান বিচারপতি প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য। ’
জয়নুল আবেদীন বলেন, এই ব্যবস্থার সঙ্গে সারা বাংলাদেশের তিন শতাংশ আইনজীবী সম্পৃক্ত হতে পারেনি। পাঁচ শতাংশ জনগণও এর সুফল ভোগ করতে পারেনি। এই কারণে সাধারণ আইনজীবীরা অত্যন্ত ক্ষোভের সঙ্গে বিষয়টি লক্ষ্য করছে যে, ভার্চ্যুয়াল পদ্ধতিকে একটা স্থায়ী ব্যবস্থার দিকে নিয়ে হচ্ছে। সেজন্য সংসদে আইনও পাস করতে যাচ্ছে। এটা সাধারণ আইনজীবী ও বার (আইনজীবী সমিতি) সংশ্লিষ্ট সব আইনজীবীরা এই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে অবস্থান নিয়েছে। যে কারণে সাধারণ আইনজীবীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এই ক্ষোভের সুরাহা হওয়া দরকার।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে কীভাবে নিয়মিত আদালত চালু করা যেতে পারে বিষয়ে কিছু মতামত তুলে ধরেন সুপ্রিম কোর্ট বারের তিন বারের নির্বাচিত সাবেক এই সভাপতি।
এক. ভার্চ্যুয়াল আদালত পরিচালনা কোনো চিরস্থায়ী ব্যবস্থা হতে পারে না। ভার্চ্যুয়াল ব্যবস্থা সাময়িক হতে পারে। সব সময় থকতে পারে তবে সাময়িকভাবে।
দুই. মানুষ ও আইনজীবীদের দাবি আদলত খুলে দেওয়া। সেজন্য আমি মনে করি স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিশেষ ব্যবস্থায় আদালত খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করা উচিত, যাতে সাধারণ আইনজীবীরা বিচারপ্রার্থী মানুষের পক্ষে কাজ করতে পারে।
তিন. সব বিচারপতিদের মোশন (মামলা গ্রহণের) ক্ষমতা দিয়ে প্রাথমিকভাবে, পরীক্ষামূলকভাবে সপ্তাহে অন্তত তিন দিন নির্দিষ্ট করে নিয়মিত আদালত চালানোর ব্যবস্থা নিতে পারে। যদি প্রধান বিচারপতি মনে করেন।
চার. আইনজীবীরা ও বিচারপতিরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে আদালতে উপস্থিত হতে পারেন। তার কারণ মানুষের জীবনও অনেক মূল্যবান। জীবিকারও প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
পাঁচ. স্বাস্থ্যবিধি কীভাবে বাস্তবায়ন করা যেতে পারে সে ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি এবং সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন যৌথভাবে সিদ্ধান্ত ও ব্যবস্থা নিতে পারে। যাতে স্বাস্থবিধির কেনো ব্যাঘাত সৃস্টি না হয়।
ছয়. বর্তমানে এই ব্যবস্থা চলাকালীন কোনো সদস্য নন এরূপ কোনো আইনজীবী আদালতে প্রবেশ করতে না পারে, তা আইনজীবী সমিতি বিষয়টি নিশ্চিত করবেন।
সাত. যেহেতু সুপ্রিম কোর্টের কোনো অরিজিনাল জুরিসডিকশন নেই, তাই মক্কেল তার নিযুক্ত আইনজীবীর সঙ্গে আদালত অঙ্গনের বাইরে আলোচনা করবেন।
আট. নিম্ন আদালতগুলোও একই পদ্ধতিতে খোলা রাখার ব্যবস্থা করতে পারেন।
নয়. বিচার ব্যবস্থার স্বার্থে, দেশের স্বার্থে আমাদের সবার দায়িত্ব আছে মেধাসম্পন্ন আইনজীবীদের এই পেশায় টিকিয়ে রাখা। সেজন্য বাস্তব পদক্ষেপ নিতে হবে।
জয়নুল আবেদীন বলেন, আদালত কীভাবে চালু করা যায়, সে বিষয়ে প্রধান বিচারপতিকে উদ্দেশ্যে করে বলছি অনতিবিলম্বে সাবেক সভাপতি সিনিয়র আইনজীবীদের সঙ্গে এবং বর্তমান নির্বাচিত কমিটির সদস্যদের সঙ্গে একটি আলোচনার ব্যবস্থা করবেন। সে আলোচনায় বেরিয়ে আসবে কীভাবে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে আদালত চালনো যায়।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০৬ ঘণ্টা, জুলাই ০৮, ২০২০
ইএস/এএ