সিজিএম ভবন নির্মাণ প্রকল্পের ঠিকাদার ও রাঙামাটি গণপূর্ত বিভাগের দুই প্রকৌশলীর যোগসাজশে প্রকল্প শেষ হওয়ার আগেই টাকা উঠিয়ে নিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়।
এদিকে, গণপূর্ত বিভাগ, চট্টগ্রাম জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোসলেহ্ উদ্দিন আহাম্মদে রাঙামাটি সদরে প্রায় ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সিজিএম আদালতের ছয়তলার ভবনটি পরিদর্শনে গিয়ে অনিয়মের প্রমাণ পেয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত দুই প্রকৌশলীকে ২০১৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি শোকজ করে কৈফিয়ত তলব করেছেন।
শোকজ হওয়া ওই দুই প্রকৌশলী হলেন- রাঙামাটি গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এএসএম সানাউল্লাহ ও একই বিভাগের তৎকালীন কর্মরত উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. জহির রায়হান। একই সঙ্গে অনিয়মের অভিযোগে প্রকল্পটির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ডেল্টা সিভিল ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড কনস্ট্রাকশনকেও শোকজ করা হয়। শোকজ হওয়া দুই প্রকৌশলী পৃথকভাবে অনিয়মের বিষয়টি স্বীকার করে কৈফিয়তের জবাবও দিয়েছেন।
নির্বাহী প্রকৌশলী এএসএম সানাউল্লাহ এবং উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. জহির রায়হান শোকজের জবাবে লেখেন- রাঙামাটি চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন নির্মাণ প্রকল্পের কাজে বেশকিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়েছে। নির্মাণ প্রকল্পে অতিপুরাতন সাটারিং দ্বারা ঢালাই কার্যসম্পাদন করা হয়। ভবনের উত্তর দিকে ত্রুটিপূর্ণ সাটারিংয়ের কারণে ঢালাই কংক্রিট বেরিয়ে পড়ে কলামের সাইজ ত্রুটিপূর্ণসহ ঢালাই কাজসহ ভবনের প্রচুর হানিকম্ব সৃষ্টি হয়েছে। পরে হানিকম্ব স্থানে আস্তর দ্বারা বন্ধ করা হয়েছে। পুরো প্রকল্পের অগ্রগতি অত্যন্ত দুর্বল।
সরেজমিনে দেখা যায়, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ডেল্টা সিভিল সিভিল ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন লিমিটেড নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই নির্মাণকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। চারতলা ভবনের একাংশের ছাদ দেওয়া ফ্রেম দিচ্ছেন গুটি কয়েক শ্রমিক দিয়ে। ভবনের পশ্চিম দিকে অধিকাংশ পিলারের হানিকম্বের যে অভিযোগ ছিল সেখানে কোনো মতে সাটারিং ঢালাই দিয়ে কাজ শেষ করা হয়েছে।
গণপূর্ত বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের ২ অক্টোবর থেকে রাঙামাটিতে সিজেএম আদালত ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। গণপূর্ত বিভাগের দুই প্রকৌশলী ও ঠিকাদার যোগসাজশে মোটা অংকের টাকা লেনদেনের মাধ্যমে পাহাড় চূড়ায় ঝুঁকিপূর্ণভাবে ভবনটি নির্মাণ কাজ শুরু করে। ভবনটি নির্মাণের আগে ল্যাব টেস্টে যেসব রড, সিমেন্ট, বালি ও ইট ব্যবহার দেখানো হয়েছে তার কোনটাই এখানে ব্যবহার করা হয়নি। ভবন নির্মাণে পিপিআর নীতিমালা ও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আদেশ পুরোপুরি উপেক্ষা করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি মন গড়াভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। দুই দফা সময় বাড়ানো পরও কাজ শেষ হয়েছে মাত্র ৪৫ শতাংশ।
ডেল্টা সিভিল ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী মোমিনুল হককের মোবাইলে ফোন করা হলে তিনি ফোন কেটে দেন।
রাঙামাটি গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এএসএম সানাউল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, রাঙামাটি আদালত ভবন নির্মাণকাজ নিয়ে যেসব অভিযোগ উঠেছিল তা সমাধান করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে কাজের মান ঠিক রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে অনেক আগে, দ্বিতীয় দফার মেয়াদও শেষ দিকে, বিলও ছাড় করা হয়েছে, এখনো কাজের অগ্রগতি নেই এমন প্রশ্নে বিষয়টি ‘সিক্রেট’ বলে জবাব দেন সরকারি এই প্রকৌশলী।
২০১৯ সালের ০৫ সেপ্টেম্বর ‘রাঙামাটিতে আদালত ভবন নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ’ শিরোনামে বাংলানিউজে একটি সংবাদ প্রকাশ হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০৯ ঘণ্টা, জুলাই ১২, ২০২০
এনটি