এ বিষয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) পক্ষে অ্যাডভোকেট ইয়াদিয়া জামান ও অ্যাডভোকেট শাহীনুজ্জামান শাহীন রোববার (১২ জুলাই) এ রিট আবেদন দাখিল করেন।
রিটে স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশ মহাপরিদর্শক, চাঁপাইনবাবগঞ্জের পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়েছে।
আবেদনে আফসার আলীর মৃত্যুর ঘটনায় জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা এবং তার পরিবারকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
রিট আবেদনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আইনজীবী শাহীনুজ্জামান।
দৈনিক যুগান্তরে ৮ জুলাই প্রকাশিত ‘থানায় আসামির মৃত্যু পুলিশে ভিন্ন বক্তব্য’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, রোববার (৫ জুলাই) সদর উপজেলার সুন্দরপুর বাগডাঙ্গা শুকনাপাড়া এলাকা থেকে ১ কেজি ১৯৫ গ্রাম হেরোইনসহ আফসার আলীকে আটক করে র্যাব। সদর থানায় মামলার পর সোমবার এক দিনের রিমান্ডে এনে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছিল পুলিশ। পরে কারা হেফাজতে তার মৃত্যু হয়।
পরে আফসারের স্ত্রী জুলেখা বেগম বলেন, অভাবের সংসারে মনোমালিন্য চলছিল তাদের মধ্যে। শেষ পর্যন্ত কয়েকদিনের অভুক্ত স্বামী শুক্রবার বাড়ি থেকে বের হয়ে যান, আর ফেরেননি। বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ-খবর নিলেও তার খবর পাইনি। সোমবার সকালে জানতে পারি থানায় আটক আছেন তিনি।
তিনি অভিযোগ করেন, অভাব-অনটনের সুযোগে সোর্স ওয়াসিম আর মোহন তার স্বামীকে কৌশলে মাদক দিয়ে ধরিয়ে দিয়েছে। পরে র্যাবের হাতে ধরা পড়ে। সোমবার থানায় দেখা করতে গেলে সন্তানদের সামনেই হাতকড়া পরা অবস্থায় একজন পুলিশ কর্মকর্তা তাকে মারধর করছিল।
তিনি দাবি করেন, পুলিশই আমার স্বামীকে হত্যা করেছে। স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর মঈদুল ইসলাম জানান, আফসার আলী কর্মঠ আর নিরীহ প্রকৃতির মানুষ ছিলেন। রিকশা-ভ্যান চালিয়ে সংসার চালাতেন। ফাঁসি দিয়ে আত্মহত্যার কোনো কারণ দেখি না। সকালে তো তার স্ত্রী তাকে দেখে এসেছেন। তাছাড়া থানা হেফাজতে কীভাবে ফাঁসি দিল বা ফাঁসি দেওয়ার পজিশন কোথায় পেলো? সেটাই এখন ভাবার বিষয়। সে যে গ্রেফতার হয়েছে সেটিও আমি জানতাম না।
রাত সাড়ে ১২টার দিকে থানা থেকে তার মৃত্যুর খবর জানানো হয়। এদিকে কর্তব্যরত চিকিৎক ডা. রুহানী আখতার জানান, হাসপাতালে নিয়ে আসার পর হঠাৎ বুকে ব্যথা শুরু হয়। চিকিৎসাও দেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু কিছুক্ষণ পর তিনি মারা যান।
গলায় তার পেঁচিয়ে আত্মহত্যার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, না এমন তো না, এ ব্যোঁরে আমি কিছু জানি না। বুকের ব্যথাজনিত কারণে তার মৃত্যু হয়েছে।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউর রহমান জানান, সন্ধ্যা ৭টার দিকে রিমান্ডে তাকে থানায় আনা হলে অসুস্থ বোধ করেন। তারপরই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। রিমান্ডে এনে হত্যার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন- এটা সঠিক নয়, আমাদের সিসি ক্যামেরা ফুটেজ আছে আপনারা দেখতে পারেন।
তবে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহবুব আলম খান ভিন্ন কথা বলেছেন। তিনি থানায় সাংবাদিকদের জানান, থানা হাজতের বারান্দায় স্ট্যান্ড ফ্যান ছিল। সেটির তার ছিঁড়ে বাথরুমে গিয়ে প্লাস্টিকের পাইপের সঙ্গে ঝুলে সে আত্মহত্যা করেছে। সিসি ক্যামেরার মনিটরে দেখতে পেয়ে ডিউটি অফিসার তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। এসময় সাংবাদিকরা সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ এবং ঘটনাস্থল দেখতে চাইলে তিনি তা দেখাতে অপারগতা প্রকাশ করেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪০ ঘণ্টা, জুলাই ১২, ২০২০
ইএস/এএ