মঙ্গলবার (১৪ জুলাই) বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিমের বেঞ্চে তার জামিন আবেদনের ওপর শুনানি হয়। আবেদনের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আব্দুল মতিন খসরু।
শুনানি শেষে মো. বশির উল্লাহ বাংলানিউজকে জানান, আদালত আসামি মারুফ রেজাকে জামিন না দিয়ে আবেদনটি নিয়মিত বেঞ্চে (কোর্ট খোলার পর) উপস্থাপন করতে বলেছেন।
হত্যাকাণ্ডের ৩০ বছর পর গত ১৪ জানুয়ারি ঘটনার রহস্য উদঘাটন করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চার জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। মামলার আসামিরা হলেন- নিহত সগিরা মোর্শেদের ভাসুর ডা. হাসান আলী চৌধুরী, তার স্ত্রী সায়েদাতুল মাহমুদা ওরফে শাহীন, হাসান আলীর শ্যালক আনাস মাহমুদ ওরফে রেজওয়ান ও মারুফ রেজা। এক হাজার ৩০৯ পৃষ্ঠার ওই অভিযোগপত্রে রাষ্ট্রপক্ষে মোট ৫৭ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।
এরপর গত ৯ মার্চ অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে একই আদালত অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য ১৫ মার্চ দিন ঠিক করেন। তবে ১৫ মার্চ আসামিপক্ষ সময় আবেদন করায় ঢাকার মহানগর দায়রা জজ কেএম ইমরুল কায়েস শুনানির নতুন দিন ১৬ এপ্রিল ঠিক করেন। এর মধ্যে করোনা পরিস্থিতিতে আর শুনানি হয়নি।
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ১৯৮৯ সালের ২৫ জুলাই সগিরা মোর্শেদ সালাম ভিকারুননিসা নূন স্কুল থেকে মেয়েকে আনতে যাচ্ছিলেন। বিকেল ৫টার দিকে সিদ্ধেশ্বরী রোডে পৌঁছামাত্র মোটরবাইকে করে ছিনতাইকারীরা তার হাতের সোনার চুড়ি ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। সে সময় তিনি দৌড় দিলে তাকে গুলি করে ছিনতাইকারীরা। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান সগিরা মোর্শেদ সালাম।
ওই দিনই রমনা থানায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন সগিরা মোর্শেদের স্বামী সালাম চৌধুরী। পরবর্তী সময়ে এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী রিকশাচালক হত্যাকাণ্ডে জড়িত দুই জনকে শনাক্ত করলেও অজ্ঞাত কারণে মিন্টু ওরফে মন্টু ওরফে মরণ নামে একজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় গোয়েন্দা পুলিশ।
১৯৯১ সালের ১৭ জানুয়ারি আসামি মন্টুর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতের বিচারক আবু বকর সিদ্দীক। সাক্ষ্য নেওয়া হয় সাত জনের। সাক্ষ্যে বাদীপক্ষ থেকে বলা হয়, তদন্তকালে আসামি মন্টু ও তৎকালীন (১৯৮৯) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মেজর জেনারেল মাহমুদুল হাসানের নিকটাত্মীয় মারুফ রেজা গ্রেফতার হন। কিন্তু মারুফ রেজার নাম বাদ দিয়েই অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।
সাক্ষ্যগ্রহণ চলাকালে মারুফ রেজার নাম আসায় রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে ১৯৯১ সালের ২৩ মে মামলার অধিকতর তদন্তের আদেশ দেন ঢাকার বিচারিক আদালত। ওই আদেশের বিরুদ্ধে মারুফ রেজার রিভিশন আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯১ সালের ২ জুলাই হাইকোর্ট মামলাটির অধিকতর তদন্তের আদেশ ও বিচারকাজ ছয় মাসের জন্য স্থগিত করার পাশাপাশি অধিকতর তদন্তের আদেশ কেন বাতিল করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। পরের বছর ২৭ আগস্ট জারি করা রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ওই মামলার বিচারকাজ স্থগিত থাকবে বলে আদেশ দেন হাইকোর্ট।
এ মামলার সর্বশেষ তদন্ত কর্মকর্তা সম্প্রতি বিষয়টি অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের নজরে আনলে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের উদ্যোগ নেয় রাষ্ট্রপক্ষ। এরপর বিষয়টি বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের বেঞ্চে তোলা হলে আদালত স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে নেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৪ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০২০
ইএস/এইচজে