ঢাকা: কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা পৌরসভা নির্বাচন চলাকালে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে স্থানীয় এসপির ‘অসৌজন্যমূলক’ আচরণের ঘটনার সময় উপস্থিত থাকা প্রিজাইডিং অফিসারকে নিরাপত্তা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
বৃহস্পতিবার (২১ জানুয়ারি) বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন।
তিনি বলেন, প্রিজাইডিং অফিসার নিরাপত্তা চেয়েছেন। আদালত ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত অফিসার এবং তার পরিবারের নিরাপত্তা বিধানের জন্য পুলিশের মহাপরিদর্শককে নির্দেশ দিয়েছেন।
এক প্রশ্নে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘ভার্চ্যুয়াল কোর্টে সংযুক্ত হয়ে সে অভিযোগ করেছে গতকাল কিছু লোকজন তাকে নিয়ে গিয়ে কিছু কাগজপত্রে সই নিয়েছেন। ’
ওই প্রিজাইডিং অফিসার স্থানীয় উপজেলার যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. শাহজাহান আলী।
এর আগে ভেড়ামারা পৌরসভা নির্বাচন চলাকালে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মহসিন হাসানের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগের ঘটনায় বুধবার (২০ জানুয়ারি) বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার (এসপি) এসএম তানভীর আরাফাতকে তলব করেন।
আগামী ২৫ জানুয়ারি তাকে হাইকোর্টে হাজির হয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে নিয়ে স্বপ্রণোদিত হয়ে রুলসহ এ আদেশ দেন।
তার একদিন পর নিরাপত্তা চেয়ে আদালতে যুক্ত হন প্রিজাইডিং অফিসার।
গত ১৬ জানুয়ারি ভেড়ামারা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। পরদিন কুষ্টিয়ার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মহসিন হাসান নির্বাচন কমিশনে একটি অভিযোগ দেন। ওই অভিযোগের একটি অনুলিপি সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছেও দেওয়া হয়।
অভিযোগে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মহসিন হাসান বলেন, “কুষ্টিয়া ভেড়ামারা পৌরসভা নির্বাচনে দায়িত্ব পালনের সময় জনৈক ভোটারের অভিযোগের ভিত্তিতে ভেড়ামারা পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করি। সেখানে কয়েকজনকে ভোটকেন্দ্রের বুথের ভেতর পোলিং এজেন্টদের সাথে বসে থাকতে দেখি। তাদের পরিচয়পত্র দেখাতে বললে তারা প্রিজাইডিং অফিসারের স্বাক্ষরিত এ ফোর সাইজের কাগজ দেখান। প্রিজাইডিং অফিসারের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলার সময় ওই কেন্দ্রে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার এস এম তানভীর আরাফাত ৪০/৫০ জন বিভিন্ন পদধারী পুলিশ ফোর্সসহ আসেন। তিনি প্রবেশ করেই প্রিজাইডিং অফিসারকে উচ্চস্বরে তলব করেন।
এসময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমানসহ কয়েকজন ফোর্স প্রিজাইডিং অফিসারকে আমার সাথে কথা বলতে না দিয়েই তাকে আমার সামনে থেকে নিয়ে যাওয়ার জন্য চাপাচাপি করেন। তখন আমি আমার নিজের পরিচয় বলি এবং কথা শেষ হলে প্রিজাইডিং অফিসারকে নিয়ে যেতে বলি। একথা বলার পরও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ধমক দিয়ে প্রিজাইডিং অফিসারকে আমার সামনে থেকে পুলিশ সুপারের সামনে নেওয়ার সময় পুলিশ সুপার আমার দিকে অগ্রসর হন এবং তিনি আমাকে উচ্চস্বরে জিজ্ঞেস করেন আপনি কে? কী করেন এখানে?
আমি পরিচয় দিলে তিনি আরও ক্ষিপ্তস্বরে আমাকে বলেন, আপনি এখানে কী করেন? বেয়াদব, বের হয়ে যান এখান থেকে। পুলিশ সুপার ও তার ফোর্সদের আক্রমণাত্মক, চরম অসৌজন্যমূলক ও মারমুখী আচরণে হতচকিত ও কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে তখন দাঁড়িয়ে থাকি। এরপর তিনি তার ফোর্সসহ আমার সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় পুনরায় আমাকে উদ্দেশ্য করে একাধিকবার বলেন, এসব লোকদের কে পাঠায় এখানে! বেয়াদব ছেলে। এখানে কাজ কী আপনার? বের হয়ে যান এখান থেকে। তারা কেন্দ্র থেকে চলে যাওয়ার পর আমি বিষয়টি ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করি। ”
বাংলাদেশ সময়: ১৫১১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০২১
ইএস/এইচএডি/