ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

আইন ও আদালত

গ্রন্থে বিকৃতি: বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তাদের সতর্ক করে রায়

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২১ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০২১
গ্রন্থে বিকৃতি: বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তাদের সতর্ক করে রায়

ঢাকা: বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস গ্রন্থের ‘বিকৃতি’ নিয়ে জারি করা রুল নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর হাইকোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার (১৮ মার্চ) এ রায় দেন।

আদালত গ্রন্থ প্রকাশের সঙ্গে যুক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের ভবিষ্যতের জন্য সতর্ক করে দিয়েছেন।  

আদালত বলেছেন, এ ইতিহাস বিকৃতি আমাদের সবার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটিয়েছে। ফলে রিট আবেদনকারীর মামলা করার যথেষ্ট কারণ ছিল। এরইমধ্যে আদালতের নির্দেশে সব বই সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়েছে। এছাড়া সংশ্লিষ্টরা নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ায় মামলাটি নিষ্পত্তি করা হলো।  

আদালতে রিট আবেদনকারীর পক্ষে আইনজীবী ছিলেন ব্যারিস্টার জ্যোর্তিময় বড়ুয়া। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার কাজী মাইনুল হাসান ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল নাসিম ইসলাম রাজু।

রায়ের পর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার কাজী মাঈনুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস’ নামক গ্রন্থে বঙ্গবন্ধুর ছবি না দেওয়ায় কারণে ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগে একটি রিট আবেদন করা হয়। আজ আদালত কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়ে ওই রিট আবেদনটি নিষ্পত্তি করে রায় দিয়েছেন।  

উল্লেখযোগ্য পর্যবেক্ষণ হলো, এ রকম ইতিহাস বিকৃতি ইচ্ছাকৃতভাবেই করা হোক আর অনিচ্ছাকৃতভাবে হোক, এটা আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটিয়েছে। আর এ বিষয়ে অপরাধ প্রমাণিত। তারপরও তারা বইটি সংগ্রহ করে ধ্বংস করেছে, মহামান্য আদালতের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছে। এ কারণে আদালত অবহেলার জন্য দায়ীদের সতর্ক করে রিট আবেদনটি নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন বলে জানান এ ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল।  

বইটি নিয়ে আলোচনা সমালোচনা ওঠার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে এক ব্যাখ্যায় বলা হয়, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস’ গ্রন্থের পাণ্ডুলিপি তৈরি ও প্রকাশনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় ২০১৩ সালের জুন মাসে। এ বিষয়ে তখন উপদেষ্টা কমিটি ও সম্পাদনা নামে দু’টি কমিটি গঠিত হয়। ওই কমিটি দু’টি পাণ্ডুলিপি চূড়ান্তের পর গ্রন্থটি ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রকাশিত হয়। গ্রন্থটি প্রকাশনার পরপরই এতে কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যত্যয় পরিদৃষ্ট হলে বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর গ্রন্থটির বিতরণ বন্ধের নির্দেশ দেন এবং গ্রন্থটি রিভিউয়ের জন্য একজন ডেপুটি গভর্নরের নেতৃত্বে একটি রিভিউ কমিটি গঠন করেন।

এর মধ্যে ড. কাজী এরতেজা হাসানের রিটের পর ২০১৮ সালের ২ অক্টোবর রুল জারি করে এ ঘটনা তদন্তে অর্থ সচিবকে একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

এ আদেশ অনুসারে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (অর্থ বিভাগ) ড. মো. জাফর উদ্দীনকে আহ্বায়ক করে চার সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়।

তদন্ত প্রতিবেদনের মতামত অংশে বলা হয়, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ ব্যাংকের নামকরণ করেন। ...গ্রন্থটির দ্বিতীয় অধ্যায়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিবৃত রয়েছে। এ কারণে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি হিসেবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস বইয়ে অন্তর্ভুক্ত করা অত্যাবশ্যক ছিল। বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট বঙ্গবন্ধুর ছবি খুঁজে পাওয়া যায়নি-এ যুক্তিতে বঙ্গবন্ধুর ছবি বইয়ে অন্তর্ভুক্ত না করার বিষয়টি অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত। গ্রন্থটিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি অন্তর্ভুক্ত না করায় ইতিহাস বিকৃত হয়েছে মর্মে কমিটি মনে করে। ’

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘গ্রন্থটিতে তদানিন্তন পকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান ও তদানিন্তন পূর্ব পাকিস্তান গভর্নর মোনায়েম খানের ছবি সংযোজন না করা শ্রেয় ছিল এবং সেটি সবার ভুল মর্মে বইটির সম্পাদক স্বীকার করেন। ’

বাংলাদেশ সময়: ২১২০ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০২১
ইএস/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।