ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৯ ভাদ্র ১৪৩১, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৮ সফর ১৪৪৬

আইন ও আদালত

উচ্চ আদালতে ঝুলে আছে আ. লীগ নেতা একরাম হত্যার বিচার

সোলায়মান হাজারী ডালিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪৪ ঘণ্টা, মে ২০, ২০২১
উচ্চ আদালতে ঝুলে আছে আ. লীগ নেতা একরাম হত্যার বিচার ...

ফেনী: ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা একরামুল হক একরাম হত্যাকাণ্ড দেশজুড়ে আলোচিত একটি ঘটনা। জীবিত মানুষকে পুড়িয়ে মারার এ নির্মম ঘটনা আলোড়ন তোলে দেশের সীমানা ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও।

বৃহস্পতিবার (২০ মে) সেই হত্যাকাণ্ডের ৭ বছর অতিবাহিত হতে চলেছে।  

আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের সাত বছর পার হলেও ঝুলে আছে বিচার প্রক্রিয়া। তৎকালীন সময়ে দেশের অন্যতম আলোচিত এই হত্যার বিচার কাজ এখনও শেষ হয়নি। নিম্ন আদালতে রায় ঘোষণার পর উচ্চ আদালতে দণ্ডপ্রাপ্ত ফাঁসির আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানি শুরু হয়নি। এই মামলায় ফাঁসির সাজা পাওয়া ৩৯ জনের মধ্যে এখনও ১৭ জন পলাতক। তাদের এখনো আটক করতে পারেনি পুলিশ।

অন্যদিকে মামলার অন্যতম আসামি বিএনপি নেতা মাহতাব উদ্দিন আহমদ মিনার চৌধুরী, যুবলীগ নেতা জিয়াউল আলম মিস্টারসহ ১৬ জন বেকসুর খালাস পেয়েছেন।

বিচার প্রক্রিয়া ঝুলে থাকায় হতাশা প্রকাশ করেছেন নিহত চেয়ারম্যান একরামের স্ত্রী তাসমীম আক্তার। তবে তিনি আশাবাদী। তিনি জানান, অপরাধীদের বিচার এই মাটিতে হবে। এ বিশ্বাস তার রয়েছে।
 
পুলিশ ও আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের ২০ মে ফেনী শহরের জি এ একাডেমি এলাকায় প্রকাশ্যে একরামুল হকের গাড়ির গতিরোধ করে একদল সন্ত্রাসী। এরপর একরামকে ছুরিকাঘাত, গুলি করে ও গাড়িসহ পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। এই হত্যা মামলায় নিহত একরামের ভাই রেজাউল করিম জসিম বাদী হয়ে স্থানীয় বিএনপি নেতা মাহাতাব উদ্দিন চৌধুরী মিনারকে আসামি করে ৩০-৩৫ জন অজ্ঞাত ব্যক্তির বিরুদ্ধে ফেনী থানায় মামলা করেন।
 
প্রাথমিকভাবে র‌্যাব অভিযান চালিয়ে ঢাকার মিরপুর থেকে কয়েক জন আসামি গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। এরপরই হত্যার ক্লু বের হতে থাকে। গ্রেফতার আসামিদের মধ্যে ১৬ জন আদালতে ১৬৪ ধারায় হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি প্রদান করেন। গোয়েন্দা পুলিশের তৎকালীন ওসি আবুল কালাম আজাদ দীর্ঘ তদন্ত শেষে ৫৬ জনের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের ৩০ আগস্ট আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। ৫৯ জন সাক্ষীর মধ্যে তদন্ত কর্মকর্তাসহ ৫০ জন আদালতে সাক্ষ্য প্রদান করেন। ২০১৮ সালের ১৩ মার্চ ফেনীর তৎকালীন জেলা ও দায়রা জজ আমিনুল হক আলোচিত এ হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে ৫৬ জন আসামির মধ্যে ৩৯ জনের ফাঁসির আদেশ প্রদান করা হয় ও বিএনপি নেতা মাহাতাব উদ্দিন চৌধুরী মিনার ও যুবলীগ নেতা জিয়াউল আলম মিস্টারসহ ১৬ জনকে খালাস দেওয়া হয়।

ফেনী জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) হাফেজ আহম্মদ বলেন, মামলাটি বর্তমানে ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানির জন্য হাইকোর্টে রয়েছে। গত এক বছর কোভিড-১৯ এর কারণে এই মামলার আসামিদের আপিল শুনানি করা সম্ভব হয়নি। ফলে ডেথ রেফারেন্সও পিছিয়ে যাচ্ছে। ফলে রায় কার্যকরে বিলম্বিত হচ্ছে।  
তিনি আরও বলেন, পলাতক আসামীদের বেশির ভাগই বিদেশে পালিয়ে গেছে।  

এখনো পলাতক ১৭ আসামি

আদালত ও পুলিশ সূত্রে বলা হয়, মামলার ১৭ আসামি বর্তমানে অধরা। এছাড়া রুটি সোহেল নামে এক আসামি রায় ঘোষণার আগেই র‌্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা যায়।

এ ব্যাপারে ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিজাম উদ্দিন জানান, একরাম হত্যা মামলার পলাতক আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশ সবসময় তৎপর রয়েছে। তবে পলাতক আসামিরা দেশে না বিদেশে রয়েছে এ ব্যাপারে কিছু জানা নেই।

মৃত্যুদণ্ড পাওয়া পলাতক ১৭ জন হলেন- ফুলগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহিদ চৌধুরী, আবিদুল ইসলাম আবিদ, চৌধুরী মো. নাফিজ উদ্দিন অনিক, আরমান হোসেন কাউসার, জাহেদুল হাসেম সৈকত, জিয়াউর রহমান বাপ্পি, জসিম উদ্দিন নয়ন, এমরান হোসেন রাসেল ওরফে ইঞ্জি. রাসেল, রাহাত মো. এরফান ওরফে আজাদ, একরাম হোসেন আকরাম, শফিকুর রহমান ময়না, কফিল উদ্দিন মাহমুদ আবির, মোসলেহ উদ্দিন আসিফ, ইসমাইল হোসেন ছুট্টু, মহিউদ্দিন আনিছ, বাবলু ও টিটু।

এদের মধ্যে জামিন নিয়ে বেরিয়ে যান জাহিদ চৌধুরী, এমরান হোসেন রাসেল, জাহেদুল হাসেম সৈকত, চৌধুরী মো. নাফিজ উদ্দিন অনিক, আবিদুল ইসলাম আবিদ, জিয়াউর রহমান বাপ্পি ও আরমান হোসেন কাউসার।  

যারা গ্রেফতারই হননি

ইসমাইল হোসেন ছুট্টু, কফিল উদ্দিন মাহমুদ আবির, রাহাত মো. এরফান ওরফে আজাদ, শফিকুর রহমান ময়না, একরাম হোসেন আকরাম, মহিউদ্দিন আনিছ, মোসলেহ উদ্দিন আসিফ, টিটু ও বাবলুকে গ্রেফতারই করা যায়নি।

২০১৮ সালের ১৩ মার্চ এ মামলার ৩৯ আসামির মৃত্যুদণ্ড দেয় আদালত। সাজাপ্রাপ্ত ৫৬ আসামির মধ্যে বিভিন্ন সময় পুলিশ ৪৫ জনকে গ্রেফতার করে। তবে এদের মধ্যেও জামিন নিয়ে পালিয়ে গেছে আট আসামি। শুরু থেকেই ধরা যায়নি নয় আসামিকে।

কারাগারে রয়েছেন ২২ জন

একরাম হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে ২২ জন বিভিন্ন কারাগারে রয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন হত্যার পরিকল্পনাকারী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির আদেল, ফেনী পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল্লাহিল মাহমুদ শিবলু, সাজ্জাদুল ইসলাম পাটোয়ারী ওরফে সিফাত, আবু বক্কার সিদ্দিক ওরফে বক্কর, মো. আজমির হোসেন রায়হান, মো. শাহজালাল উদ্দিন শিপন, জাহিদুল ইসলাম জাহিদ ওরফে আজাদ, কাজী শানান মাহমুদ, মীর হোসেন আরিফ ওরফে নাতি আরিফ, আরিফ ওরফে পাঙ্কু আরিফ, রাশেদুল ইসলাম রাজু, মো. সোহান চৌধুরী, জসিম উদ্দিন নয়ন, নিজাম উদ্দিন আবু, আবদুল কাইউম, নুর উদ্দিন মিয়া, তোতা মানিক, মো. সজিব, মামুন, রুবেল, হুমায়ুন ও টিপু।

খালাস পেয়েছেন ১৬ জন

অন্যদিকে মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন ১৬ জন। তারা হলেন- বিএনপি নেতা মাহতাব উদ্দিন আহম্মেদ চৌধুরী মিনার, পৌর যুবলীগের সাবেক যুগ্ম-আহবায়ক জিয়াউল আলম মিস্টার, একরামের একান্ত সহযোগী আওয়ামী লীগ নেতা বেলাল হোসেন পাটোয়ারী ওরফে টুপি বেলাল, মো. আলমগীর ওরফে আলউদ্দিন, আবদুর রহমান রউপ, সাইদুল করিম পবন ওরফে পাপন, জাহিদ হোসেন ভূইয়া, ইকবাল হোসেন, মো. শাখাওয়াত হোসেন, শরিফুল ইসলাম পিয়াস, কালা ওরফে কালা মিয়া, নুরুল আবসার রিপন, মো. ইউনুস ভূইয়া শামীম ওরফে টপ শামীম, মো. মাসুদ, কাদের ও ফারুক।  

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৪ ঘণ্টা, মে ২০, ২০২১
এসএইচডি/এইচএডি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।