ঢাকা: ধর্ষণের অভিযোগে করা এক মামলায় ভুল আইনে বিচারের শিকার ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার আব্দুল জলিলকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হাইকোর্টের নির্দেশ স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত।
রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার (১২ আগস্ট) আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ১০ সপ্তাহের জন্য হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেছেন বলে জানিয়েছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ।
২০০১ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর প্রতিবেশীর পাঁচ বছর বয়সী এক শিশুকে প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণের অভিযোগে পরদিন চরফ্যাশন থানায় ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(১) ধারায় মামলা করা হয়। ওই মামলায় ভোলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল ২০০৪ সালের ৩০ আগস্ট আবদুল জলিলকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড এবং দশ হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করেন।
এ রায়ের বিরুদ্ধে আবদুল জলিল হাইকোর্টে জেল আপিল করেন। হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ ওই জেল আপিল মঞ্জুর করে জলিলের দণ্ডাদেশ বাতিল করে মামলাটি পুনঃবিচারের জন্য বিচারিক আদালতে পাঠান।
এরপর ২০১০ সালে ৮ মার্চ ভোলার অতিরিক্ত দায়রা জজ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(১) ধারায় আব্দুল জলিলকে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড এবং ২০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ছয় মাসের সশ্রম কারাদণ্ড দেন।
রায়ের বিরুদ্ধে জলিল পুনরায় জেল আপিল করলে ২০১৫ সালের ১৫ ডিসেম্বর রায় দেন হাইকোর্ট। ওই রায়ে জলিলকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার এবং জলিলের দণ্ডাদেশ বাতিল করে অন্য কোনো মামলায় গ্রেপ্তার না থাকলে তাকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে নির্দেশ দেন।
পরের বছর এ রায় প্রকাশিত হয়। রায়ে আদালত বলেছেন, স্বীকৃত মতে অপরাধ সংঘটনের তারিখে আব্দুল জলিলের বয়স ছিল ষোল। তদন্তকারী কর্মকর্তার তদন্ত অনুযায়ী অভিযোগপত্র দাখিলের দিন আসামির বয়স ছিল ১৫ বছর। সংশ্লিষ্ট সময়ে কার্যকর শিশু আইন ১৯৭৪ এর ধারা ২(জি) অনুযায়ী ষোল বছরের নিম্ন বয়স্ক একজন ব্যক্তিকে শিশু হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। এ কারণে দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি জলিল শিশু আইন ১৯৭৪ এর বিধান অনুযায়ী তার প্রকৃত বয়স নির্ধারণ পূর্বক বিচার প্রাপ্তির অধিকারী ছিল। কিন্তু তাকে তার এই অধিকার হতে বঞ্চিত করে সাধারণ আইনে তার বিচার সংগঠন করায় সে (জলিল) সংবিধানের ৩১ অনুচ্ছেদ প্রদত্ত আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার হতে বঞ্চিত হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০২১
ইএস/এমজেএফ