ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৮ ভাদ্র ১৪৩১, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৮ সফর ১৪৪৬

আইন ও আদালত

গৃহবধূকে নির্যাতন: আদালতে সাক্ষ্য দিলেন সেই নারী

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০২১
গৃহবধূকে নির্যাতন: আদালতে সাক্ষ্য দিলেন সেই নারী

নোয়াখালী: নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায় গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন এবং সেই দৃশ্য ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার মামলায় আদালতে সাক্ষ্য দিলেন সেই নারী।

এসময় মামলার দুই আসামি দেলোয়ার হোসেন দেলু ও আবুল কালাম আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) বেলা ১২টায় জেলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক জয়নাল আবেদিনের আদালতে সাক্ষী দেন তিনি।  এরআগে, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন আদালত।

পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মামুনুর রশিদ লাবলু নির্যাতিত সেই নারীর সাক্ষ্য দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আদালতে উপস্থিত থাকা আসামিদের পুনঃরায় কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আগামী ২৩ আগস্ট পরবর্তী শুনানি করা হবে।

এদিকে, বৃহস্পতিবার আদালতে বাদীর সাক্ষ্যগ্রহণের পর আসামিদের ভিডিও ধারণ করতে গেলে গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর চড়াও হয় আসামিরা। পুলিশের উপস্থিতিতে তারা গণমাধ্যমর্কীদের সঙ্গে অশোভন আচরণ এবং মারধরের চেষ্টা করেন।

আদালত সূত্র জানায়, বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নের চাঞ্চল্যকর গৃহবধূ নির্যাতনের ঘটনায় ২০২০ সালের ৬ অক্টোবর নির্যাতিতা ওই নারী বাদি হয়ে দেলোয়ার হোসেন ও আবুল কালমকে আসামি করে বেগমগঞ্জ থানায় একটি মামলা করেন। ওই মামলায় অভিযুক্ত দুই আসামিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরবর্তীকালে মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) স্থানান্তর করা হয়।

রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পিপি অ্যাডভোকেট মামুনুর রশিদ লাবলু। বাদীপক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মোল্লা হাবিবুর রসুল মামুন এবং আসামিপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন, অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন বাদল।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, ২০২০ সালে বেগমগঞ্জের একলাশপুর ইউনিয়নের জয়কৃষ্ণপুর গ্রামে স্থানীয় সন্ত্রাসী দেলোয়ার বাহিনী স্বামীকে গাছের সঙ্গে বেঁধে স্ত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। এতে ব্যর্থ হয়ে গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে প্রহার করে। সেই দৃশ্য মোবাইলে ধারণ করেন অভিযুক্তরা। আহত ওই নারী চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে জেলা সদরে তার বোনের বাসায় পালিয়ে যান।

সেখানে গিয়েও অভিযুক্তরা তার কাছে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন এবং তাদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করার প্রস্তাব দেন। গৃহবধূ এতে রাজি না হওয়ায় আগের ধারণ করা ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছেড়ে দেওয়া হয়।

ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়লে সারাদেশ প্রতিবাদে ফুঁসে ওঠে। তখন নারী নির্যাতন মামলার পাশাপাশি বেগমগঞ্জ থানায় পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে ইসরাফিল, শামছুদ্দিনসহ সাতজনের নামে মামলা হয়। মামলার তদন্ত ভার পায় পিবিআই।

তদন্ত শেষে মামলার এজাহারভুক্ত আসামি ইসরাফিল, শামছুদ্দিন ও এজাহারের বাইরের নুর হোসেন রাসেল ও জামাল উদ্দিন ওরফে প্রবাসী জামালের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করল পিবিআই। প্রমাণ না মেলায় এজাহারভুক্ত পাঁচ আসামিকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিতে আদালতে আবেদন করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা।

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে নারী নির্যাতনের ওই ভিডিও ফাঁসের পর গড়ে ওঠা আন্দোলনে আইন সংশোধন করে ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড করার দাবিটি প্রধান হয়ে উঠে। যে দাবি মেনে নেয় সরকার।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০২১
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।