ঢাকা: কার্যালয়ে বসে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা না করে ঘটনাস্থলে গিয়েই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে হবে।
বাল্যবিয়ের ঘটনাকে কেন্দ্র করে নেত্রকোনোর আটপাড়া উপজেলায় দুই শিশুকে সাজা দেওয়ার ঘটনায় বৃহস্পতিবার বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চে এমন পর্যবেক্ষণ দেন।
প্রেমের সম্পর্ক থাকায়, পারিবারিকভাবে ১ আগস্ট নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলার শ্রীরামপাশা গ্রামের নবম শ্রেণির এক ছাত্রীর(১৫ বছর) সঙ্গে মহেশ্বরখিলা গ্রামের একজনের বিয়ের আয়োজন করা হয়। এই বিয়ের খবর পেয়ে সহকারি কমিশনার(ভূমি) রাজিয়া সুলতানা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে পুলিশ পাঠিয়ে তাদের আটক করে নিজ কার্যালয়ে নিয়ে এক মাস করে সাজা দেন। এরপর তাদের গাজীপুর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।
এ নিয়ে ৪ আগস্ট একটি জাতীয় দৈনিকে ‘বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনে দুই শিশুকে দণ্ড’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর ই-মেইলে চিঠি পাঠিয়ে বিষয়টি হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। তাদের মুক্তির নির্দেশনা চাওয়া হয় ওই চিঠিতে। কারো মুক্তির জন্য কোনো বিচারপতির কাছে চিঠি দেওয়ার ঘটনা এই প্রথম। এই চিঠি পাবার পরই ৪ আগস্ট হাইকোর্ট শিশু দু’টিকে তাৎক্ষণিক মুক্তির নির্দেশ দেন। এই আদেশের বিষয় নেত্রকোনার জেলা প্রশাসককে জানাতে সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র ও বিশেষ কর্মকর্তা ব্যারিস্টার মো. সাইফুর রহমানকে নির্দেশ দেন আদালত। এই নির্দেশ পেয়েই জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলেন সাইফুর রহমান। এরই মধ্যে ওই শিশুদের মামলা নিষ্পত্তি করে তাদের মুক্তি দেন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট। একইসঙ্গে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ব্যাখ্যা জানতে চান।
৫ আগস্ট এক আদেশে সংশ্লিষ্ট ভ্রাম্যমান আদালতের বিচারকের দেওয়া ব্যাখ্যার কপি আদালতে দাখিল করতে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের প্রতি নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এই নির্দেশে সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেটের দাখিল করা লিখিত ব্যাখ্যার সত্যায়িত কপি হাইকোর্টে দাখিল করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সহকারী কমিশনার(ভূমি) রাজিয়া সুলতানা ৮ আগস্ট তার লিখিত ব্যাখ্যা দাখিল করেন। তাতে ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চান তিনি। একইসঙ্গে ভবিষ্যতে এরকম ঘটনা ঘটবে না বলে অঙ্গীকার করেন।
এ ব্যখ্যা অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসের মাধ্যমে আদালতে উপস্থাপনের আদালত কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়ে মামলাটি নিষ্পত্তি করে দেন।
আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।
পরে শিশির মনির জানান, আদালত কিছু পর্যবেক্ষণসহ আবেদনটি নিষ্পত্তি করেছেন। পর্যবেক্ষণ হলো-আইন প্রয়োগের ব্যাপারে আরও সতর্ক হওয়া দরকার। সংশ্লিষ্ট আইনের বিষয় যথাযথ প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। কার্যালয়ে বসে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা যাবে না। ঘটনাস্থলেই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে হবে। নিঃশর্ত ক্ষমার আবেদনটি এডিএম নিষ্পত্তি করবেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০২, ২০২১
ইএস/এসআইএস