ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

আইন ও আদালত

রাবি ভিসির দেওয়া ১৩৮ নিয়োগ স্থগিত

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৬, ২০২১
রাবি ভিসির দেওয়া ১৩৮ নিয়োগ স্থগিত

ঢাকা: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) বিদায়ী উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান মেয়াদের শেষ দিনের আগের রাতে ৫ মে অ্যাডহকে দেওয়া ১৩৮ জন শিক্ষক ও কর্মচারীর নিয়োগ স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট।  

এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে সোমবার (৬ সেপ্টেম্বর) বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন।

আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। তিনি জানান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ভিসি এম আব্দুস সোবহানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির কারণে ব্যবস্থা না নেওয়া কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন উচ্চ আদালত। ৫ মে, ২০২১-এর সব নিয়োগ স্থগিত করেছেন। একইসঙ্গে ২০১৭-এর শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা স্থগিত ও দুদককে ভিসির বিষয়ে ১৪ নভেম্বর আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলেছেন।

বিবাদীরা হচ্ছেন- মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব, ইউজিসির চেয়ারম্যান, দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান, রাবির ভিসি ও রেজিস্ট্রার, অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান।   

আদালতে রিট আবেদনটি দায়ে করেন কনজুম্যার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) পক্ষে আহ্বায়ক স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন।

২০০৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি রাবির ভিসি হিসেবে নিয়োগ পান এম আব্দুস সোবহান। ২০১৩ সারে ২৫ ফেব্রুয়ারি তার মেয়াদপূর্ণ হয়। পরবর্তীতে ২০১৭ সালের ৭ মে ফের তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়। চলতি বছরের ৬ মে তার মেয়াদপূর্ণ হয়।  

কিন্তু মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের দিন রাতে তিনি অ্যাডহক ভিত্তিতে শতাধিক নিয়োগ দেন। এটি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়।  

তবে নিয়োগপত্রে রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আব্দুস সালাম স্বাক্ষর করেননি। রেজিস্ট্রার হিসেবে স্বাক্ষরের নির্বাহী আদেশ দেওয়া হয়েছে সংস্থাপন শাখার উপ-রেজিস্ট্রার ইউসুফ আলীকে। নতুন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারের স্বাক্ষরেই অ্যাডহকে তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অফিস আদেশে দেখা যায়, অ্যাডহকের মাধ্যমে ৯ জন শিক্ষক, ২৩ জন কর্মকর্তা, ৮৫ জন নিম্নমান সহকারী ও ২৪ জন সহায়ক কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। উপাচার্যের নির্বাহী আদেশে সংস্থাপন শাখার উপ-রেজিস্ট্রার ইউসুফ আলী নিয়োগপত্রে স্বাক্ষর করেছেন।  

নিয়োগপ্রাপ্তদের তালিকায় রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সন্তান, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক-বর্তমান নেতাকর্মী ও সাংবাদিক।

নিয়োগের তালিকায় বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট, ১৯৭৩ এর ১২ (৫) ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে নিম্নলিখিত প্রার্থীদের তাদের নামের পাশে বর্ণিত পদ ও স্থানে অস্থায়ী ভিত্তিতে (অ্যাডহক) অনধিক ছয় মাসের জন্য নিয়োগ দেওয়া হলো। এ নিয়োগ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর করা হোক। এছাড়া নিয়োগপত্রে বলা আছে, প্রার্থীদের নিয়োগ যোগদানের দিন থেকে কার্যকর হবে।  
গত বছরের ১০ ডিসেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে উপাচার্যকে দেওয়া চিঠিতে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে সব নিয়োগ স্থগিত রাখতে বলা হয়। তবে উপাচার্য আব্দুস সোবহান দায়িত্বের শেষ দিনে হলেও নিয়োগ দিয়েই ছাড়বেন, এমন আশঙ্কায় গত কয়েকদিনে বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি প্রত্যাশীদের সঙ্গে বিরোধী শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একাধিকবার মুখোমুখি অবস্থান হয়েছে।  

৬ মে দুপুরে পুলিশি নিরাপত্তায় উপাচার্য এম আব্দুস সোবহান ক্যাম্পাস ছাড়েন।

একইদিন অধ্যাপক ড. এম আব্দুস সোবহানের ওই নিয়োগ কার্যক্রম সংক্রান্ত বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

এতে বলা হয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. এম আব্দুস সোবহানের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিষয়ে এর আগে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করে। তদন্ত প্রতিবেদনে উপাচার্যের বিরুদ্ধে নিয়োগ কার্যক্রমসহ আনা অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ গত বছরের ১০ ডিসেম্বর প্রশাসনিক কারণে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের নিয়োগ কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত স্থগিত রাখার জন্য উপাচার্যকে অনুরোধ করা হয়েছিল।
 
কিন্তু উপাচার্য ৬ মে অর্থাৎ তার শেষ কর্মদিবসে মন্ত্রণালয়ের উক্ত নির্দেশনা উপেক্ষা করে বিভিন্ন পদে অবৈধ ও বিধিবহির্ভূতভাবে জনবল নিয়োগ দিয়েছেন মর্মে মন্ত্রণালয় অবহিত হয়েছে, যার পরিপ্রেক্ষিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে, যা অনভিপ্রেত।
 
এতে আরও বলা হয়, বিদায়ী উপাচার্যের অবৈধ জনবল নিয়োগের বৈধতা প্রাপ্তির সুযোগ নেই বিধায় এ সংক্রান্ত বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হলো।
 
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীরকে আহ্বায়ক করে চার সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
 
কমিটির অপর সদস্যরা হলেন- ইউজিসি সদস্য প্রফেসর ড. মো. আবু তাহের, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের যুগ্ম-সচিব মো. জাকির হোসেন আখন্দ ও ইউজিসির পরিচালক (পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়) মোহাম্মদ জামিনুর রহমান।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৬, ২০২১, আপডেট: ১৮২২ ঘণ্টা
ইএস/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad