ঢাকা: নাশকতার অভিযোগে রাজধানীর খিলগাঁও থানার এক মামলায় নোয়াখালীর মোহাম্মদ জহির উদ্দিনের বিরুদ্ধে পরোয়ানা অবৈধ বলে ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট।
বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার (৯ সেপ্টেম্বর) কিছু পর্যবেক্ষণসহ এ রায় ঘোষণা করেছেন।
আদালতে রিট আবেদনকারীপক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।
পর্যবেক্ষণে দেশের সব থানায়-কারাগারে আসামির আঙুল ও হাতের তালুর ছাপ, চোখের মণির সংরক্ষণের মাধ্যমে বায়োমেট্রিক পদ্ধতি পর্যায়ক্রমে চালুর কথা বলেছেন হাইকোর্ট।
হাইকোর্টের একই বেঞ্চ জহির উদ্দিনের রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে গতবছর ১০ মার্চ এক আদেশে ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত থেকে তার বিরুদ্ধে জারি করা গ্রেফতারি পরোয়ানার কার্যকারিতা স্থগিত করেন। একইসঙ্গে নোয়াখালীর ওই জহির উদ্দিন মামলার যথাযথ আসামি কীনা তা তদন্ত করে দুই মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দেন। কিন্তু দীর্ঘদিনের তদন্ত প্রতিবেদন না পাওয়ায় গত ১৮ আগস্ট হাইকোর্ট অসন্তোষ প্রকাশ করেন এবং এবিষয়ে কি অগ্রগতি হয়েছে তা আদালতকে জানাতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
এ অবস্থায় পিবিআই’র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সারোয়ার আলম তদন্ত করে প্রতিবেদন পিবিআইয়ের ডিআইজি কার্যালয়ে দাখিল করেন। সেখান থেকে প্রতিবেদনটি সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে জমা দেওয়া হয়। রেজিস্ট্রার কার্যালয় প্রতিবেদনটি আদালতে দাখিল করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জহির উদ্দিনকে খিলগাঁও থানার মামলায় (নম্বর-১২(৪)১৩) গ্রেফতারি পরোয়ানার আসামি হিসেবে চিহ্নিত করার মতো পর্যাপ্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি। জহির প্রকৃতপক্ষে গ্রেফতারি পরোয়ানার ব্যক্তি নয়। প্রকৃত আসামি মোদাচ্ছের আনছারী ওরফে মোহাদ্দেস।
অ্যাডভোকেট শিশির মনির জানান, রাজধানীর খিলগাঁও থানায় ২০১৩ সালের ৯ এপ্রিল দায়ের হওয়া মামলায় (নম্বর-১২(৪)১৩) পুলিশ নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের শাহজাদপুর গ্রামের আহসান উল্লাহ’র ছেলে মোদাচ্ছের আনছারীকে গ্রেফতার করে। পুলিশের হাতে আটক হবার পর মোদাচ্ছের তার নাম-ঠিকানা গোপন করে নিজেকে নোয়াখালীর বসুরহাট পৌরসভাধীন আজগর আলী মোল্লা বাড়ি মসজিদ রোড এলাকার মোহাম্মদ আব্দুল কাদেরের ছেলে মোহাম্মদ জহির উদ্দিন নামে পরিচয় দেয়। এরপর ওইবছরের ৩১ অক্টোবর মোদাচ্ছের জামিনে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে পালিয়ে যায়। সে জহির উদ্দিন নামেই আদালতে জামিনের আবেদন করেছিল।
এদিকে পুলিশ তদন্ত শেষে জহির উদ্দিনসহ অপরাপর আসামিদের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয়। এরপর ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত ২০১৭ সালের ১১ অক্টোবর জহিরের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। এ অবস্থায় জহির উদ্দিন যথাযথ আইনগত প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট কারা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে মূল আসামি মোদাচ্ছের আনছারীর ছবি এবং শারীরিক বর্ণনাসহ বিভিন্ন তথ্যাদি সংগ্রহ করে।
এ বিষয়ে শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার রায় দেন হাইকোর্ট।
রায়ের পরে শিশির মনির জানান, আদালত পর্যবেক্ষণসহ রুল চূড়ান্ত ঘোষণা করেছেন। আবেদনকারী জহির উদ্দিনের বিরুদ্ধে জারিকৃত পরোয়ানা অবৈধ এবং আইন বহির্ভূত হিসেবে ঘোষণা করেছেন।
পর্যবেক্ষণে আদালত উল্লেখ করেন
১. বিদ্যমান ব্যবস্থার সঙ্গে সব থানায় আসামির হাতের আঙুল ও তালুর ছাপ, চোখের মণি, বায়োমেট্রিক পদ্ধতির প্রচলন করা।
২. গ্রেফতারের পর আসামির সম্পূর্ণ মুখের ছবি ধারণ ও কেন্দ্রীয় তথ্যভাণ্ডারে সংরক্ষণ করা।
৩. দেশের সব কারাগারে আঙুল ও হাতের তালুর ছাপ, চোখের মণির সংরক্ষণের মাধ্যমে বায়োমেট্রিক তথ্য সংরক্ষণ সিস্টেম চালু করা।
আদালত এ বিষয়গুলো পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করতে বলেছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৯, ২০২০
ইএস/কেএআর