ঢাকা: বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্বিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা মামলায় ২৫ আসামির সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড চায় রাষ্ট্রপক্ষ।
রোববার (২৪ অক্টোবর) ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামানের আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের শেষ দিনে এ আর্জি জানান মামলার চিফ প্রসিকিউটর মোশাররফ হোসেন কাজল।
শুনানিতে তিনি বলেন, এটা কোনো সামান্য বিষয় না। ঘটনার আগে আবরার ফাহাদ গ্রামে চলে যান। আসামিরা তার অপেক্ষায় থাকে। বলতে থাকে, আসুক। তিনি হলে এলে ডেকে নিয়ে যায়। একটা হলে কোর্ট বসায়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ আর মৃদু আক্রমণ করে। আস্তে আস্তে আক্রমণ জোরালো হয়। তার প্রতি কেন এত রাগ? শেষ পর্যন্ত পিটিয়েই মেরে ফেললো!
মোশাররফ হোসেন কাজল আরও বলেন, আমরা ন্যায়বিচার চাই। জুলুম বা অবিচারের পক্ষে আমরা নই। যারা এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা চাই। কেউ ইনোসেন্ট থাকলে আদালত বিষয়টি বিবেচনা করবেন। হলে যারা থাকেন তারা একে অপরের আপন হয়ে যায়। আবরার তাদেরই আপন একজন ছিল। কিন্তু সেই আপনজনকে মেরে ফেললো। যারা অপরাধ করেছে তারা যেন শাস্তির আওতায় আসে। আমরা তাদের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড চাই। আবরারের মা যেন বলতে পারেন, ন্যায়বিচার পেয়েছি। আবরারের স্বজনরা এখনো কাঁদছে।
এরপর বাদীপক্ষের আইনজীবী আব্দুস সোবহান তরফদার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করেন। তবে তার বক্তব্য অসমাপ্ত অবস্থায় সোমবার শুনানির পরবর্তী দিন ধার্য করেন আদালত। এ দিন কারাগারে থাকা ২২ আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়।
২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলে আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় ১৯ জনকে আসামি করে পরের দিন ৭ অক্টোবর চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা করেন আবরার ফাহাদের বাবা বরকত উল্লাহ। ওই বছরের ১৩ নভেম্বর ২৫ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পরিদর্শক ওয়াহেদুজ্জামান।
এই মামলার তদন্ত চলাকালে অভিযুক্ত ২৫ আসামির মধ্যে ২১ জনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তারা হলেন—বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল, সহ-সভাপতি মুহতাসিম ফুয়াদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার, ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিওন, উপ-সমাজসেবা সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল, উপ-আইন সম্পাদক অমিত সাহা, শাখা ছাত্রলীগ সদস্য মুনতাসির আল জেমি, মুজাহিদুর রহমান মুজাহিদ, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভির ও ইসতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, আবরারের রুমমেট মিজানুর রহমান মিজান, শামসুল আরেফিন রাফাত, মনিরুজ্জামান মনির, আকাশ হোসেন, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, মাজেদুর রহমান, শামীম বিল্লাহ, মোয়াজ আবু হুরায়রা, এ এস এম নাজমুস সাদাত এবং এস এম মাহমুদ সেতু। পরে হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্তদের সংগঠন থেকে তাদের বহিষ্কার করে ছাত্রলীগ।
গ্রেফতারদের মধ্যে ইসতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, অমিত সাহা, মিজানুর রহমান মিজান, শামসুল আরেফিন রাফাত ও এস এম মাহমুদ সেতু ছাড়া বাকি সবাই এজাহারভুক্ত আসামি।
মামলার আট আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তারা হলেন—ইফতি মোশাররফ সকাল, মেফতাহুল ইসলাম জিওন, অনিক সরকার, মুজাহিদুর রহমান, মেহেদি হাসান রবিন, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভীর, মনিরুজ্জামান মনির ও এএসএম নাজমুস সাদাত।
মোর্শেদ অমত্য ইসলাম নামে পলাতক এক আসামি পরে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠান।
বর্তমানে পলাতক রয়েছেন তিন আসামি। তারা হলেন—মোর্শেদুজ্জামান জিসান, এহতেশামুল রাব্বি তানিম ও মোস্তবা রাফিদ। এর মধ্যে মোস্তবা রাফিদের নাম এজাহারে ছিল না।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৪, ২০২১
কেআই/এমজেএফ