কুষ্টিয়া: কুষ্টিয়ার দৌলতপুর থানার আলোচিত এক হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত প্রধান আসামি কথিত পীর সৈয়দ তাছের আহমেদের (৬০) বদলে তারই এক ভক্ত আসামি হিসেবে আদালতে আত্মসমর্পণের অভিযোগ মিলেছে। ৎ
গত ১৭ অক্টোবর কুষ্টিয়া জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম সেলিনা খাতুনের আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করলে আদালত জামিন না মঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এ সময় আদালতে উপস্থিত ওই হত্যা মামলার বাদী ও সাক্ষীর পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয় আসামি সৈয়দ তাছের আহমেদ সেজে যিনি আদালতে আত্মসমর্পন করেছেন তিনি প্রকৃত ব্যক্তি নন। তিনি ভুয়া তাছের। প্রকৃত তাছের আহমেদ এখনও পলাতক।
মামলার বাদী আব্দুর রাজ্জাক ও সাক্ষী রেজাউলের করা অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে কারান্তরীণ তাছেরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গত ২৫ অক্টোবর আদালতে রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) দৌলতপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শফিকুল ইসলাম।
আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করার পর কারান্তরীণ তাছেরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে নেয় পুলিশ। তিনদিনের জিজ্ঞাসাবাদে ওই ব্যক্তি নিজেকে নাজিম উদ্দিন ফকির (৬৫), পিতা করীম আলী, বাড়ি দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর বলে জানিয়েছেন। দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসির উদ্দিন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান,‘রিমান্ডের জবানবন্দীর সত্যতা যাচাইয়ে শুক্রবার (২৯ অক্টোবর) সকালে সরেজমিনে নাজিম উদ্দিন ফকিরের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি। এতে নিশ্চিত হয়েছি গত ১৪ অক্টোবর সকালে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে হত্যা মামলায় সৈয়দ তাছের আহমেদ হিসেবে যিনি আত্মসমর্পণ করেন তিনি আসলে নাজিম ফকির।
তিনি আরও জানান, ভক্ত হিসেবে দীর্ঘদিন ধরেই তাছের আহমেদের দরবারে নাজিম ফকিরের যাতায়াত ছিল। সেই সূত্রে প্রকৃত আসামি সৈয়দ তাছের আহমেদের কথায় এবং কিছু আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে নজিম উদ্দিন ফকির এমনটা করেছেন বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
কুষ্টিয়া কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক ইমরান হোসেন জনান, গত ৬ জুন সকালে উপজেলার কল্যাণপুর গ্রামের কথিত পীর সৈয়দ তাছের আহমেদের দরবারে মোবাইল চুরির অভিযোগে স্থানীয় হরিনগাছী গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে রাশেদুল ইসলাম রাশেদকে (২৮) পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় নিহতের বাব বাদী হয়ে উপজেলার চরদিয়া গ্রামের মৃত আজের উদ্দিন মালিথার ছেলে সৈয়দ তাছের আহমেদকে প্রধান আসামি করে ৬ জনের নামোল্লেখসহ দৌলতপুর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
ওই মামলায় এজাহারভুক্ত ৫ আসামিকে পুলিশ গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করতে সক্ষম হলেও প্রধান আসামি সৈয়দ তাছের আহমেদ ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যান।
কুষ্টিয়া জেলা জজ আদালতের প্রধান কৌশুলি (পিপি) অনুপ কুমার নন্দী বলেন, আদালতে প্রকৃত আসামির বদলে অন্য ব্যক্তি ভুয়া আসামি হয়ে আত্মসমর্পণ করেছেন এমন কথা জেনেছি। প্রকৃত তথ্য জানতে ইতোমধ্যে মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে আদালত প্রকৃত তাছের আহমেদ এবং ভুয়া তাছের আহমেদের (নাজিম উদ্দিন ফকির) জাতীয় পরিচয়পত্র পরীক্ষা করে রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তদন্তে এমন প্রমাণ পেলে অবশ্যই এই অপরাধে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে বৃহষ্পতিবার (২৮ অক্টোবর) রিমান্ড শেষে বিকেলে আদালতে হাজির করলে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জবানবন্দী দিয়েছেন নাজিম উদ্দিন ফকির।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫৫ঘণ্টা, ২৯ অক্টোবর, ২০২১
এমএমজেড