ঢাকা: ফারমার্স ব্যাংকের প্রায় চার কোটি টাকা অর্থ আত্মসাত ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার ১১ বছর কারাদণ্ড হয়েছে। এই অর্থ তিনি যে দুজন ব্যক্তিকে দিয়ে ঋণ অনুমোদনের মাধ্যমে উত্তোলন করেন, তাতে নিয়মনীতির কোনো তোয়াক্কা করা হয়নি বলে জানান দুর্নীতি দমন কমিশনের কৌঁসুলি মীর আহমেদ আলী সালাম।
মঙ্গলবার (০৯ নভেম্বর) দুপুরে রায় ঘোষণার পর প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, এখানে ক্রেডিট পলিসিকে পুরোপুরি লঙ্ঘন করা হয়েছে। কোনো নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা করা হয়নি। সাধারণভাবে কোনো ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলতে গেলে অনেকরকম নিয়মনীতি আছে। প্রস্তাবনা পাঠাতেই কয়েক মাস লেগে যায়, সেখানে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই প্রস্তাবনা পাঠানো হলো এবং ওইদিনই কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সেই তা অনুমোদন হয়ে চলে আসলো।
ঋণ অনুমোদনে অস্বাভাবিকতার বিবরণ তোলে ধরে তিনি বলেন, এসকে সিনহা দুজন সাধারণ মানুষকে দিয়ে অ্যাকাউন্ট করিয়েছিল ফারমার্স ব্যাংকে। এই অ্যাকাউন্ট থেকে একইদিনে অর্থাৎ যেদিন সকাল বেলা অ্যাকাউন্ট খোলা হয় সেদিন সন্ধ্যা বেলা আড়াই কোটি করে পাঁচ কোটি টাকা ঋণের আবেদন করা হয়। পরের দিন সকালে সিবি/সিআইবি রিপোর্ট ছাড়াই কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ঋণ অনুমোদন হয়ে যায়। কোনো রকমের কোনো কাগজপত্র ছাড়াই রিকয়েরমেন্ট পূরণ না করে ঋণ অনুমোদনের জন্য হেড অফিসে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়। হেড অফিস একইদিনে অনুমোদনপত্র একইদিনে শাখা অফিসে পাঠায় এবং ওই একইদিনে তাদের অ্যাকাউন্টে চার কোটি টাকা দেওয়া হয়।
সেই টাকা পরবর্তীতে এসকে সিনহার অ্যাকাউন্টে জমা হয় উল্লেখ করে মীর আহমেদ আলী সালাম বলেন, চার কোটি টাকা উত্তোলনের সঙ্গে সঙ্গেই তা পে-অর্ডার করা হয় এবং সেই টাকা এসকে সিনহার সোনালী ব্যাংক সুপ্রিম কোর্ট শাখার অ্যাকাউন্টে জমা দেওয়া হয়। জমা টাকা ক্যাশ করে একাংশ উত্তরা শাহজালাল ব্যাংকে তার ভাই ও ভাতিজার যে অ্যাকাউন্ট ছিল সেখানে জমা দেন। এছাড়া তিনি সঞ্চয়পত্র কিনেছেন এবং অন্যান্য কাজে ব্যয় করেছেন এগুলো সমস্ত কাগজপত্র আমরা আদালতে জমা দেই।
তিনি আরও বলেন, আমরা প্রসিকিউশন অভিযোগ প্রমাণে সফল হয়েছি বলেই রায়ে মানি লন্ডারিংয়ের কারণে সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহাকে সাত বছরের এবং অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গে কারণে চার বছরের সাজা হয়েছে। দুটি সাজাই একত্রে চলবে। অন্যান্য আসামিদের ক্ষেত্রে ফারমার্স ব্যাংকের সাবেক এমডি একেএম শামীম আহমেদকে চার বছর এবং বাকি সাত আসামিকে তিন বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন। এছাড়া ৪৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড ও ৭৮ লাখ টাকা যেটা আমরা ফ্রিজ করে রেখেছিলাম, তা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্তের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৯, ২০২১
কেআই/এমজেএফ