ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

নির্বাচনী এলাকা ছেড়েছেন কিনা টুকু, জানতে চান হাইকোর্ট 

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০২১
নির্বাচনী এলাকা ছেড়েছেন কিনা টুকু, জানতে চান হাইকোর্ট 

ঢাকা: পাবনার বেড়া পৌরসভার নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি তথা সংসদ সদস্য (এমপি) হিসেবে শামসুল হক টুকু নির্বাচনী এলাকায় অবস্থান না করতে রিটার্নিং অফিসারের দেওয়া চিঠি কার্যকর হয়েছে কিনা তা ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জানাতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

ওই নির্বাচনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল বাতেনের করা রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে সোমবার (২২ নভেম্বর) বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান ও মো. সাইফুল আলম।  

পরে খুরশীদ আলম খান বলেন, রিটার্নিং অফিসার সংসদ সদস্য শামসুল হক টুকুকে নোটিশ দিয়েছেন। এ বিষয়ে রোববার (২১ নবেম্বর) দৈনিক কালের কণ্ঠে ‘মায়াদয়া করব না, পিষে দেব’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। সেটিও আদালতে দেখিয়েছি। আদালত পাবনার রিটার্নিং অফিসারের প্রতি আদেশ দিয়েছেন। ১৪ নভেম্বর দেওয়া চিঠি কতটুকু প্রতিপালিত হচ্ছে তা ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেদন দিয়ে জানাতে বলেছেন হাইকোর্ট। বৃহস্পতিবার আবার মামলাটি কার্যতালিকায় আসবে।

সংসদ সদস্যের নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ করার বৈধতা নিয়ে রিট করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল বাতেন।

দৈনিক কালের কণ্ঠের প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘আমি মায়াদয়া করব না কিন্তু, পিষে দেব। ’ পাবনার বেড়া পৌরসভা নির্বাচনে নৌকার বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী এক মেয়র পদপ্রার্থীর সমর্থককে এই হুমকি দেন ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় সংসদ সদস্য মো. শামসুল হক টুকু।

শুক্রবার সকালে বেড়া পৌর এলাকার বৃশালিখা পশ্চিমপাড়ার রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন স্বতন্ত্র মেয়র পদপ্রার্থী আবদুল বাতেনের সমর্থক, আওয়ামী লীগ কর্মী ইয়ামিন আলী।

এ সময় তিনি পাবনা-১ আসনের সংসদ সদস্য শামসুল হক টুকুর সামনে পড়েন। তখন ইয়ামিনকে এই হুমকি দেন শামসুল হক। বেড়া পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন শামসুল হক টুকুর ছেলে আসিফ শামস।

এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন শামসুল হকের সহোদর আবদুল বাতেন এবং ভাইয়ের মেয়ে সাদিয়া আলম। আবদুল বাতেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি এবং এখন বেড়া পৌরসভার মেয়র। সাদিয়া আলম শামসুল হকের বড় ভাই বদিউল আলমের মেয়ে। একই পরিবারের তিনজন মেয়র পদপ্রার্থী হওয়ায় বেড়া আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন।

নিজের সন্তানকে ভোটে জেতানোর জন্য নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে এলাকায় অবস্থান করছেন শামসুল হক। তার বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষের নেতাকর্মীদের হুমকি ও এলাকা ছাড়ার অভিযোগও উঠেছে।

কালের কণ্ঠের হাতে আসা একটি ভিডিওতে দেখা যায়, ইয়ামিনকে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন শামসুল হক। আবদুল বাতেনের পক্ষ নেওয়ায় ইয়ামিনকে হুমকি দিয়ে শামসুল হক বলেন, ‘ওখানে যাবি না। তোগোরে পুলিশ দিয়ে মারতেও আমার ভয় লাগে, খারাপ লাগে। যে কয়টাকে মারবনে, চার-পাঁচটাকে...একটা আমিনুল, দেহিসনে কী অয়। ’

নারকেলগাছ প্রতীকের প্রার্থী আবদুল বাতেনের নির্বাচনী ক্যাম্পে না যেতে নির্দেশ দিয়ে শামসুল হক বলেন, ‘যাবি, না যাবি না? আজকে নৌকার মিছিল করবি। নৌকা হলো জাতির প্রতীক। আর ওই শালা খেজুরগাছ সেদিন ছিল আউয়াল আজ হলো বাতেন (এ সময়ে পাশ থেকে একজন বলেন, খেজুরগাছ নয়, নারকেলগাছ)। ...ওখানে বসবি ক্যা? মালপাতি দেয়?’

হুমকির বিষয়ে জানতে চাইলে ইয়ামিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমি শুক্রবারই পরিবারসহ এলাকার বাইরে চলে এসেছি। এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না। ’

বিদ্রোহী প্রার্থী আবদুল বাতেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমার কর্মী ও সমর্থকদের এলাকা ছাড়া করার চেষ্টা করছেন সংসদ সদস্য ও তার ছেলে। এলাকায় তাদের জনসমর্থন নেই। তারা প্রশাসনিক ক্ষমতা ব্যবহার করে নির্বাচনে জয়ের চেষ্টা করছেন। ’

স্বতন্ত্র মেয়র পদপ্রার্থী সাদিয়া আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমার কর্মীরাও এখন প্রকাশ্যে আমার সঙ্গে হাঁটতে ভয় পায়। স্থানীয় সংসদ সদস্য এলাকায় অবস্থান করে প্রকাশ্যে হুমকি দিয়ে বেড়াচ্ছেন। বলছেন যে নৌকায় ভোট না দিলে এলাকা শ্মশান বানিয়ে দেবেন। ’

বেড়া পৌরসভা নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার মাহবুবুর রহমান ১৪ নভেম্বর শামসুল হককে একটি চিঠি পাঠান।  

সেখানে বলা হয়, ‘সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি নির্বাচনী এলাকায় প্রচারণা বা নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবেন না। বেড়া পৌরসভা সাধারণ নির্বাচন প্রভাবমুক্তভাবে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে পৌরসভা (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা অনুযায়ী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি তথা সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচনী এলাকায় অবস্থান না করার জন্য আপনাকে বিনীতভাবে অনুরোধ করা হলো। ’

নির্বাচন কর্মকর্তার চিঠি পাওয়ার পরের দিন ১৫ নভেম্বর সকালে শামসুল হক বৃশালিখা পল্টন সমাজের আয়োজনে এক দোয়া ও আলোচনা সভায় অংশ নেন।

আচরণবিধি লঙ্ঘন করে নির্বাচনী এলাকায় অবস্থানের বিষয়ে শুক্রবার রাতে কালের কণ্ঠের প্রশ্নের জবাবে শামসুল হক টুকু বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন আমাকে চিঠি দিয়ে বলেছে যে ‘আমি যেন নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে চলি, আর সম্ভব হলে যেন এলাকার বাইরে থাকি। ’ কিন্তু আমি তো এলাকার মানুষ, আমি যাবটা কোথায়? আমি এখানকার ভোটার। আমি নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে কোনো কাজ করব না।

প্রতিদ্বন্দ্বী মেয়র পদপ্রার্থীর এক সমর্থককে পিষে মেরে ফেলার হুমকির বিষয়ে জানতে চাইলে শামসুল হক বলেন, ‘এটা ঠিক না। আমি সেটা বলব কেন? এগুলো মিথ্যাচার। ’ পুলিশের ভয় দেখানোর প্রসঙ্গে শামসুল হক বলেন, ‘আমার তো কর্মী বাহিনীই আছে। পুলিশ লাগবে কেন?’

নিকটাত্মীয়দের বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শামসুল হক বলেন, ‘এটাই তো গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। এগুলো আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ই দেখা যাচ্ছে। ’

জানতে চাইলে বেড়া পৌরসভা নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার মাহবুবুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘উনাকে এরই মধ্যে আমরা চিঠি দিয়েছি। আশা করি, উনি আজ (শনিবার) এলাকা ছেড়ে যাবেন। না হলে আমরা পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেব। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৩২৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০২১
ইএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।