ঢাকা: পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার খারিজ্জমা ইসহাক মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ৯ এসএসসি পরীক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার চেয়ে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
নোটিশে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার মো. ইসমাইল রহমানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে এবং প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে ১০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।
শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) ই-মেইলযোগে এ নোটিশ পাঠানো হয়।
শিক্ষা সচিব, জনপ্রশাসন সচিব, পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক, সহকারী কমিশনার মো. ইসমাইল রহমান, খারিজ্জমা ইসহাক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কেন্দ্র সচিব নুসরাত জাহানকে ল অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশন ট্রাস্টের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের তিন আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির, আইনজীবী মো. রোকনুজ্জামান এবং নাইম সরদার এ নোটিশ পাঠান।
পরে ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির জানান, নোটিশে নয় শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ অবিলম্বে প্রত্যাহারসহ পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া, প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে ১০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের জন্য সহকারী কমিশনার মো. ইসমাইল রহমানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। আগামী ১২ ঘণ্টার মধ্যে ব্যবস্থা না নিলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
তিনি আরও জানান, কোমলমতি শিক্ষার্থীদের এভাবে বহিষ্কার করায় শিক্ষার্থী এবং তাদের পরিবার যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তেমনি দেশের প্রত্যেক বিবেকবান ব্যক্তিকে আলোড়িত করেছে। ঘটনা দৃষ্টিতে প্রতীয়মান হয় যে সংশ্লিষ্ট সহকারী কমিশনার ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিপীড়নমূলক, বেআইনী এবং অযাচিত ও ষড়যন্ত্রমূলক ভাবে নয় শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করেছেন।
বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সকালে গলাচিপা উপজেলার খারিজ্জমা ইসহাক মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে।
ওইদিন সকালে পরীক্ষার শুরুতে খাতা বিতরণের পাঁচ/১০ মিনিটের মধ্যেই ঠুনকো অভিযোগে একটি কেন্দ্রে নয় পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার করে সমালোচনার মুখে পড়েছেন পটুয়াখালী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইসমাইল রহমান।
বহিষ্কৃত নয় শিক্ষার্থীর মধ্যে সাতজন খাতায় রোল এবং রেজিস্ট্রেশন নম্বর ছাড়া কিছুই লেখেনি। বাকি দু’জনের একজন দুটি এবং অপরজন তিনটি প্রশ্নের উত্তরের বৃত্ত ভরাট করেছে।
অভিভাবক, শিক্ষক ও পরীক্ষার্থীরা এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তারা জানান, পরীক্ষা শুরুর কিছুক্ষণ আগে কেন্দ্রে উপস্থিত হন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইসমাইল রহমান। তারপর কক্ষ পরিদর্শন শুরু করে ঠুনকো অভিযোগে একের পর এক শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করেন তিনি।
বহিষ্কৃত পরীক্ষার্থী ও মধ্য হরিদেবপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মোকসেদুল বলে, আমি সকালে বৃষ্টির মধ্যে ভিজে তাড়াহুড়ো করে শেষ সময়ে হলে ঢুকেছিলাম। খাতা পাওয়ার পর দাঁড়িয়ে স্বাভাবিক হয়ে সব কিছু ঠিক করে বসতে যাব, তখনই এসে আমাকে বহিষ্কার করেছেন ম্যাজিস্ট্রেট।
বহিষ্কৃত পরীক্ষার্থী ইমা আক্তার বলে, ম্যাজিস্ট্রেট স্যারকে দেখে ভয়ে আমার হাত কাঁপতে কাঁপতে কলমটা পড়ে যায়। কলম তুলতে নিচু হতেই, তিনি আমার খাতা নিয়ে যান এবং হেড স্যারের রুমে বসিয়ে রাখেন।
আরেক পরীক্ষার্থী মো. শোয়েব সরদার বলে, আমাদের অপরাধ আমরা জানি না। আমরা কোনো অসদুপায় অবলম্বন করিনি। খাতায় লেখাই শুরু করিনি। তার প্রমাণ আমাদের খাতা চেক করলে পাওয়া যাবে। তিনি কেন আমাদের সঙ্গে এমন করেছেন, জানি না। তার পা ধরেও আমরা কোনো সহায়তা পাইনি।
অভিভাবক সোহরাব সরদার ও চুন্ন মিয়া বলেন, আমরা এখন ছেলে-মেয়েদের পাহারা দিয়ে রাখি, তারা অনেক কান্নাকাটি করে। যখন তখন আত্মহত্যার মত দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
এ বিষয়ে খারিজ্জমা ইসহাক মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্রের হল সুপার ও খারিজ্জমা ইসহাক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুসরাত জাহান মনি বলেন, পরীক্ষা শুরুর পাঁচ থেকে ছয় মিনিটের মধ্যেই ১০ জনকে বহিষ্কার করা হয়। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আমাদের মৌখিকভাবে জানিয়েছেন যে শিক্ষার্থীরা দেখা দেখি করছিল বলে বহিষ্কার করা হয়েছে। তবে ১০ শিক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র একজন এমসিকিউ উত্তর পত্রের দুটি ও অপরজন তিনটি উত্তর ভরাট করেছে। বাকি সাতজন শুধুমাত্র রোল এবং রেজিস্ট্রেশন নম্বরের ঘর পূরণ করেছে। আমি স্যারকে অনুরোধ করেছিলাম যে দুইজনের উত্তর পত্রে উত্তরের ঘর পূরণ করেছে তাদের বহিষ্কার করেন, কিন্তু তিনি সবাইকেই বহিষ্কার করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইসমাইল রহমান বলেন, বিভিন্ন কারণে তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে। অনেকেই দেখাদেখি করছিল এবং প্রশ্ন এক্সচেঞ্জ করছিল। এ কারণে তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে।
>>আরও পড়ুন: প্রথম দিনে ১০ পরীক্ষার্থী ও ৫ শিক্ষক বহিষ্কার, অথচ বরিশাল বোর্ডে লেখা শূন্য
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২২
ইএস/এসএ