ঢাকা: বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকের চাকরি জাতীয়করণে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষকে আপিলের অনুমতি দিয়েছেন আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে হাইকোর্টের রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত করেছেন সবোর্চ্চ আদালত।
হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের লিভ টু আপিলের (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) শুনানি নিয়ে সোমবার (১৭ অক্টোবর) প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
হাইকোর্টের সাতটি রায়ে এসব শিক্ষকের সংখ্যা সাড়ে চার শতাধিক। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।
এসব শিক্ষকদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগ, জাল নথি দিয়ে তারা হাইকোর্ট থেকে রায় পেয়েছেন।
জানা যায়, ২০১৩ সালের ১৭ জানুয়ারি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করে।
ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সরকার দেশে বিদ্যমান বিভিন্ন প্রকৃতির বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ এবং কর্মরত শিক্ষকদের চাকরি সরকারিকরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। জাতীয়করণের জন্য প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত বিদ্যালয়গুলোর সম্পদ, অবকাঠামোগত অবস্থা, পাঠদান পরিস্থিতি, শিক্ষকের যোগ্যতা ও নিয়োগ পদ্ধতি বাস্তব যাচাইয়ের মাধ্যমে অধিগ্রহণের উপযুক্ত বিদ্যালয় ও কর্মরত শিক্ষকদের চাকরি সরকারিকরণের বিষয়ে সুপারিশ প্রদানের উদ্দেশ্যে উপজেলা/থানা, জেলা ও জাতীয় পর্যায়ে কমিটি গঠন করা হলো।
ওই সময় সরকার ৪ হাজার ৮২৫টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করে। ওইসব স্কুলে কর্মরত শিক্ষকদের জাতীয়করণের আওতায় আনার নির্দেশ দিয়ে ২০১৬ সালে আরেকটি প্রজ্ঞাপন জারি করে।
এই প্রজ্ঞাপন জারির পর শিক্ষকদের চাকরি জাতীয়করণের জন্য তালিকা প্রস্তুত করে যাচাই-বাছাই কমিটি। কমিটি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষকদের তালিকা প্রস্তুত করে মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। পরে তাদের নামে গেজেটভুক্ত হয়।
তবে গেজেটে নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি এমন অভিযোগে হাইকোর্টে রিট করেন মো. আনোয়ারুল ইসলামসহ ২৬ জন। পরে ৬টি পৃথক রিট করেন কয়েকশত প্রার্থী।
রিটকারীদের দাবি, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, জামালপুর, রংপুর, নারায়ণগঞ্জ, কুষ্টিয়া, নড়াইলসহ বিভিন্ন জেলায় অবস্থিত বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তারা কর্মরত ছিলেন। তাদের নাম যাচাই-বাছাই কমিটির সুপারিশে ছিল এবং তা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু পরে চাকরি জাতীয়করণ তালিকা থেকে বাদ পড়েছে।
ওই সাত রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে হাইকোর্ট সাড়ে চার শতাধিক শিক্ষকের চাকরি জাতীয়করণ করার নির্দেশ দেন।
হাইকোর্টের এই সাতটি রায়ের বিরুদ্ধে পৃথক লিভ টু আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।
আদেশের পর অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন বলেন, প্রথম রিট আবেদনে আবেদনকারী ছিলেন ২৬ জন। এর মধ্যে বিভিন্ন জেলায় ২২ জন শিক্ষকের নিয়োগের তারিখ একই দেখানো হয়েছে। এছাড়া আরো ৬টি রিট আবেদনের অনেক রিট আবেদনকারী শিক্ষকের নিয়োগের তারিখও একই উল্লেখ করা হয়েছে।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, সরকারের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী বেসরকারি শিক্ষকদের নিয়োগ একটি কমিটির মাধ্যমে হবে। যেহেতু কমিটির সাক্ষর পাওয়া যাবে না সেজন্য রিটকারীরা জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন। সেই জালিয়াতিতে দেখা যাচ্ছে এসব রিট আবেদনকারীদের কোন বৈধ নিয়োগপত্র নেই। আবার কিছু রিটকারীরা কিছু নথি হাইকোর্টে দাখিল করেছেন। সেসব নথি ইস্যুর যে তারিখ দেখানো হয়েছে সেই তারিখগুলো ছিল সরকারি ছুটির দিনে (ঈদের ছুটি)। এসব প্রমাণপত্র আমরা আপিল বিভাগে উপস্থাপন করেছি। শুনানি শেষে আপিল বিভাগ হাইকোর্টের সাতটি রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত করে দেন। একটি লিভ দিয়ে বাকিগুলো ট্যাগ করে দিয়েছেন। এখন সবগুলোর শুনানি একসঙ্গে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০১৫৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০২২
ইএস/এএটি