ঢাকা, শুক্রবার, ১৬ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

আইন ও আদালত

২১ বছর পর যে আইন বাতিলে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের পথ খুলল

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০২২
২১ বছর পর যে আইন বাতিলে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের পথ খুলল

ঢাকা: ২৬ বছর আগের আজকের দিনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনিদের দায়মুক্তি, খন্দকার মোশতাকের অবৈধভাবে ক্ষমতা ও অবৈধ কর্মকাণ্ডের বৈধতা দিয়ে করা ইনডেমনিটি আইন বাতিল করা হয়।

আর এ অবৈধ আইন বাতিলের মধ্যে দিয়ে দীর্ঘদিন পর সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যার খুনিদের বিচারের পথ খোলে।

আইনজ্ঞদের মতে, জঘন্যতমভাবে বিচারহীনতার সংস্কৃতি খুনিদের দায়মুক্তি দেওয়া, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করা, এই সকল বিষয় ছিল ইনডেমনিটি আইনের মধ্যে। আর এ আইন বাতিলের মধ্যে দিয়ে জাতি কলঙ্কমুক্ত হয় এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট সপরিবারে হত্যা করা হয়। এরপর রাষ্ট্রপতির আসনে বসেন খন্দকার মোশতাক। আর খুনিদের রক্ষায় জারি করেন কুখ্যাত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ।

পরে জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে সাংবিধানিক বৈধতা দেয়। এ কারণে দীর্ঘ একুশ বছর সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা এবং জেল হত্যাকাণ্ডের তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া শুরুই করা যায়নি। কিন্তু ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে ১২ নভেম্বর ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করে।

এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক শ ম রেজাউল করিম বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসেন খন্দকার মোশতাক। তিনি নিজেকে রাষ্ট্রপতি দাবি করেন। আইন অনুযায়ী তিনি রাষ্ট্রপতি ছিলেন না। কারণ সংবিধান বলে, রাষ্ট্রপতি না থাকলে উপ রাষ্ট্রপতি দায়িত্ব নেবেন। উপ রাষ্ট্রপতি না থাকলে স্পিকার দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর উপ রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বা স্পিকার আব্দুল মালেক উকিলকে দায়িত্ব না  দিয়ে স্বঘোষিত রাষ্ট্রপতি হন মোশতাক।

সুপ্রিম কোর্টের এ আইনজীবী বর্তমানে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ শ ম রেজাউল করিম বলেন, খন্দকার মোশতাক স্বঘোষিত রাষ্ট্রপতি এবং বঙ্গবন্ধুর খুনিদের সুযোগ সুবিধা দিলেন। আর এটাকে স্থায়ী করার জন্য ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর একটি অর্ডিন্যান্স জারি করান। যেটাকে বলে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ।

এরকম অধ্যাদেশ জারির জন্য সংবিধান অনুযায়ী বৈধ রাষ্ট্রপতি হতে হবে। আর অধ্যাদেশ যেন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক না হয়। এখানে মোশতাক আইনসংগত রাষ্ট্রপতি ছিলেন না। ফলে অধ্যাদেশ জারির ক্ষমতা তার ছিল না। তর্কের খাতিরে তাকে যদি রাষ্ট্রপতি বলি তারপরও তার এই অধ্যাদেশ জারি করে খুনিদের দায়মুক্তি দেওয়ার চেষ্টা করেছেন, যারা অপরাধ করেছেন তাদের কোনো প্রশ্ন করা যাবে না, তাদের কোনো বিষয় নিয়ে আদালতের মুখোমুখি হওয়া যাবে না এই যে বিধান করে তিনি অর্ডিন্যান্স জারি করলেন এটা ছিল সম্পূর্ণ রূপে সংবিধান পরিপন্থি।  

শ ম রেজাউল করিম আরও বলেন, এটাকে ১৯৭৯ সালের এপ্রিলে জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি থাকাকালে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোর দেখিয়ে সংসদে পাস করে আইনে পরিণত করা হয়। চূড়ান্তভাবে জিয়াউর রহমানের স্বাক্ষরে  সংবিধানের অংশে পরিণত করে। যেটা পঞ্চম সংশোধনী হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। এটা কোনোভাবে গ্রহণ করা যায় না। সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। কারণ সংবিধান বলছে কেউ অপরাধ করে পার পাবে না। সবাই আইন অনুযায়ী বিবেচিত হবে। কিন্তু ওই অর্ডিন্যান্সকে আইন করে বলা হলো বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার করা যাবে না। এবং ১৫ আগস্ট থেকে জিয়াউর রহমানের নির্বাচন হওয়ার আগ পর্যন্ত ১৯৭৯ সালের এপ্রিল পর্যন্ত তারা যা কিছু করেছেন এগুলো বৈধতা দেওয়ার জন্য এ আইন করেছেন। এ কারণে অবৈধ ক্ষমতার গ্রহণের বিচার এবং বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচারের পথ রুদ্ধ ছিল।

তিনি বলেন,বলতাম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে ১৯৯৬ সালে ইনডেমনিটি আইনকে বাতিল করেন। বাতিলের পরে একটি দুঃখজনক ঘটনা ঘটে। এই বাতিলের বিরুদ্ধে রিট করা হয়। সুপ্রিম কোর্টে এ রিটের আইনজীবী ছিলেন জামায়াত নেতা ব্যারিস্টার কোরবান আলী। হাইকোর্টের বিরুদ্ধে আবার আপিল বিভাগেও যাওয়া হয়। আপিল বিভাগে শুনানির পর বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচারের পথ প্রশস্ত হয়। জঘন্যতমভাবে বিচারহীনতার সংস্কৃতি খুনিদের দায়মুক্তি দেওয়া, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করা এই সকল বিষয় ছিল ইনডেমনিটি আইনের মধ্যে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০২২
ইএস/এসআইএস
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।