ঢাকা, সোমবার, ১৪ শ্রাবণ ১৪৩১, ২৯ জুলাই ২০২৪, ২২ মহররম ১৪৪৬

লাইফস্টাইল

রোমাঞ্চকর রোভারিং

সুমন মজুমদার, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৭, ২০১২
রোমাঞ্চকর রোভারিং

স্কাউট শব্দটির সাথে আমরা আনেকেই ছাত্রজীবন থেকে পরিচিত হলেও রোভার স্কাউটিং বিষয়টি অনেকেরই অজানা। স্কাউটিং’র মোট ৩টি ধাপের মধ্যে রোভার স্কউটিংও অন্যতম।

১৯০৭ সালে স্যার রবার্ট স্টিফেনসন স্মিথ লর্ড ব্যাডেন পাওয়েল যখন শিশু কিশোরদের জন্য স্কাউটিংয়ের প্রচলন করেন তখনো কিš‘ রোভার স্কাউটিং নামে কোন ধাপ ছিলো না।

তখন লর্ড ব্যাডেন পাওয়েল কেবল শিশু ও কিশোরদের জন্যই স্কউটিং’র দ্বার উন্মুক্ত রেখেছিলেন। কিš‘ কালের পরিক্রমায় স্কাউটিং এতটাই জনপ্রিয় হয়ে উঠে যে যুবকরা এই আন্দোলনে শরিক হতে আগ্রহ প্রকাশ করে। স্যার ব্যাডেন পাওয়েল নিজেও বিশ্বাস করতেন যুবকরাই ভবিষ্যতের কর্ণধার। ফলে শিশু কিশোরদের পাশাপাশি ১৮ থেকে ২৫ বছর বয়সিদের জন্য ১৯১৮ সালে শুরু হয় রোভার স্কউটিং এর যাত্রা। ১৯৭৪ সালে বিশ্ব  স্কাউট সং¯’ার সদস্যপদ লাভের পর এ যাত্রায় বাংলাদেশের তরুণরাও যোগ দেয়। আর রোভারিং এ মেয়েদের যাত্রা শুরু হয় ১৯৯৪ সাল থেকে।

এক আইন ও প্রতিজ্ঞার পৃথিবী:
পৃথিবীর সকল স্কাউটরা এক প্রতিজ্ঞায় বিশ্বাসী। রোভার স্কাউটরাও সেই প্রতিজ্ঞা নিয়েই তাদের শুরু করে তাদের রোমাঞ্চকর পথচলা। তিন আঙ্গুলের বিশেষ ভাতৃত্বের সংকেতে একজন রোভার প্রথমেই প্রতিজ্ঞা নেয়-আমি আমার আত্মমর্যাদার ওপর নির্ভর করে প্রতিজ্ঞা করছি যে, সৃষ্টিকর্তা ও দেশের প্রতি কর্তব্য পালন করতে, সর্বদা অপরকে সাহায্য করতে, স্কাউট আইন মেনে চলতে আমি আমার যথাসাধ্য চেষ্টা করব।

অবশ্য এর আগে তরুণদের মানসিক, দৈহিক ও আধ্যাতিক শুদ্ধির জন্য আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে নিজেকে এই প্রতিজ্ঞার ধারক ও বাহক হিসেবে করে নিতে হয় পরিশিলিত। রোভারিং মূল মন্ত্র সেবা। তবে সেই সেবার মধ্যে প্রথমেই প্রাধান্য দেয় আত্ম সেবাকে। তারপর আসে সমাজ সেবা। এছাড়া রোভাররা স্কাউটের ৭টি আইনও মেনে চলে অক্ষরে অক্ষরে।

আইন ৭টি হলো- স্কাউট আত্মমর্যাদায় বিশ্বাসী, স্কাউট সকলের বন্ধু, স্কাউট বিনয়ী ও অনুগত, স্কাউট জীবের প্রতি সদয়, স্কাউট সদা প্রফুল্ল, স্কাউট মিতব্যায়ী, স্কাউট কথা, চিন্তা ও কাজে নির্মল। এছাড়া তরুণ রোমাঞ্চপ্রিয়তার কথা মাথায় রেখেই করা হয়েছে এর সিলেবাসও। ফলে যে কোন তরুণকে এই বিষয়ে আগ্রহী করে তোলাও সহজ। সিলেবাসে রয়েছে ক্যাম্পিং, আউটিং, সমাজসেবা, র‌্যাম্বলিং, হাইকিংসহ মজার সব বিষয়। এছাড়া নানা সময় রোভারদের অগ্নিকাণ্ডসহ বিভিন্ন বিপদকালীন পরি¯ি’তিতে উদ্ধার কাজ, দক্ষতা উন্নয়ন, নেতৃত্ব বিকাশে স্কাউট বেসিক, এডভান্স কোর্স করানো হয়। সুযোগ আছে স্কাউট হিসেবে দেশ বিদেশের নানা রোভার মুট ও ক্যাম্পে যোগ দেয়ারও।

রোমাঞ্চকর পথচলা:
সারা দেশকে বাংলাদেশ স্কাউটসের ভাগ করা ৭টি অঞ্চলের মধ্যে রোভার অঞ্চল অন্যতম। মূলত রোভার অঞ্চলই রোভার সিলেবাস প্রবর্তন করে থাকে। রোভার সিলেবাসের ৩টি স্তর রয়েছে। প্রথম স্তর হলো সদস্যস্তর। রোভার হিসেবে একজন তরুণ-তরুণী দিক্ষা গ্রহণের পর এই স্তরের সিলেবাস সম্পন্ন করে। এ স্তরের সিলেবাসের একএকটি ধাপ অতিক্রম করার পুরষ্কার হিসেবে দেয়া হয় ব্যাজ। ব্যাজগুলোর মধ্যে সেবা ব্যাজ অন্যতম। এরপরের স্তর প্রশিক্ষণ। এ স্তরে রোভারদের জন্য রয়েছে অনেক রোমাঞ্চকর বিষয়। তারমধ্যে র‌্যাম্বলিং অন্যতম।

র‌্যাম্বলিং ব্যাজ অর্জন করতে হলে পায়ে হেঁটে ১০০ মাইল পথ অতিক্রম করতে হয়। অথবা নৌকায় বা সাইকেলে করেও র‌্যাম্বলিং করা যায়। তবে সে ক্ষেত্রে পথের দূরত্ব বেড়ে যায়। প্রশিক্ষণের পরের স্তর হলো সেবা। এটিই মূলত রোভার স্কাউটিং এর সর্বো”চ স্তর। এ স্তর পার হতে হলে সবাইকে অর্জন করতে হয় সমাজ সেবা, দক্ষতা পারদর্শিতা, প্রকল্পসহ আরো বেশ কয়েকটি ব্যাজ। এরপর রয়েছে রোভার স্কাউটিং এর সর্বো”চ পুরষ্কার প্রেসিডেন্ট রোভার স্কাউট এ্যাওয়ার্ড। এই এ্যাওয়ার্ডের জন্য প্রত্যেতকে তার ৩ স্তরের কর্মকান্ডের ওপর লগ বই তৈরি করে জেলা স্কাউট ও অঞ্চল অফিস থেকে পাস করিয়ে নিতে হয়। তারপর সংশ্লিস্ট ওই রোভার পরীক্ষার মাধ্যমে এ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনিত হলে একটি বিশেষ দিনে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি নিজ হাতে তাকে ওই এ্যাওয়ার্ড ব্যাজ পরিয়ে দেন।

এতো গেলো কেবল সিলেবাসের বিষয়। এছাড়াও রোভারদের জন্য প্রতিবছর আয়োজন করা হয় বিভিন্ন সমাবেশ বা রোভার মুট। এসকল মুটে যারাই একবার অংশগ্রহণ করে তারা সাধারণত উন্মুক্ত কোন স্খানে তাবুবাস করে থাকে। সেখানে ব্যাব¯’া থাকে অনেক বুদ্ধিদিপ্ত প্রতিযোগিতার। থাকে কম্পাস দেখে ও কদম গুণে অজানার পথে যাত্রার জন্য হাইকিংয়ের মত রোমাঞ্চকর বিষয়।

এছাড়া রাতে গোল হয়ে ঘিরে বসে ক্যাম্পফায়ারের আনন্দ রোভাররা ছাড়া আর কজনই বা পায়। শুধু মুট নয়, রোভার অঞ্চল প্রতিবছর চট্টগ্রামে রোভারদের জন্য আয়োজন করে এডভেঞ্চার ক্যাম্প। এই ক্যাম্পে অজানা উঁচু নিচু পাহাড়ে হেঁটে যাওয়া, পাত্র ছাড়া রান্না করে খাওয়া, ছোট্ট ডিঙ্গিতে করে প্রবল স্রোতে কর্ণফুলী নদী পাড়ি দেয়ার মত বিষয়গুলোতো এখানে রইলই।

কিভাবে হবেন রোভার    
১৮ থেকে ২৫ ছর বয়সি যে কোন ছেলে বা মেয়ে চাইলেই রোভার স্কাউটিং এর এই মহান এবং রোমাঞ্চকর আন্দোলনে যোগ দিতে পারেন। দেশের অনেক কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়েই পড়াশুনার পাশাপাশি এখন রোভার ইউনিট খোলা হয়েছে। যারা এ সুযোগ পা”েছন না তাদের হতাশ হবার কিছু নেই। কারণ তাদের জন্য রয়েছে প্রচুর ওপেন রোভার স্কাউট দল। সেখানে চাইলেই যোগ দিতে পারেন আপনি।

তবে রোভারিং করতে সবচেয়ে যা প্রয়োজন তা হলো ই”েছ এবং ভালো কাজের আগ্রহ। দেশের অনেক রোভারদের আদর্শের পথে চলার শিক্ষা দেওয়া হয়। এই শিক্ষা ধারণ করে স্কাউটরা পরবর্তী জীবনে সফলতার দিকে এগিয়ে যায়। তরুণ প্রযন্মকে সঠিক দিক নির্দেশনা দিতে সম্প্রতি সরকারি মহল থেকেও রোভারিং, বিএনসিসির মত প্রতিষ্ঠানে যোগ দিতে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে।  
এজন্য রোভার ও বিএনসিসি সদস্যদের মূল পরীক্ষার সাথে অতিরিক্ত ১০ নাম্বার যোগেরও ব্যব¯’া রাখা হয়েছে। তাই পড়াশুনার পাশাপাশি আপনি চাইলেই যোগ দিতে পারেন এই মহান আন্দোলনে।






বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।