ঢাকা, সোমবার, ১৪ শ্রাবণ ১৪৩১, ২৯ জুলাই ২০২৪, ২২ মহররম ১৪৪৬

লাইফস্টাইল

ঐতিহ্যবাহী খামারপাড়ার দই

রূপক আইচ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫৬ ঘণ্টা, মার্চ ১৯, ২০১২
ঐতিহ্যবাহী খামারপাড়ার দই

ভোজন বিলাসী মানুষের কাছে মিষ্টি হিসেবে দারুণ জনপ্রিয় মাগুরায়  বিখ্যাত খামারপাড়ার দই।

কেবল মাগুরা নয় রাজধানীসহ সারাদেশেই এই দইয়ের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

বিয়েসহ যে কোন অনুষ্ঠান ও অতিথি আপ্যায়নে ঐতিহ্যবাহী খামারপাড়ার দই একটি অনন্য খাদ্য উপকরণ হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে। প্রায় শত বছর ধরে এই দইয়ের জনপ্রিয়তার মূল কারণ হচ্ছে খাটি দুধ ও অন্যান্য উপকরণের যথাযথ সংমিশ্রন। খামারপাড়ার অশ্বিনী ঘোষের বাবা বীরনাথ ঘোষ গত শতকের প্রথমদিকে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এ এলাকায় দই তৈরি শুরু করেন। বর্তমানে অশ্বিনী ঘোষ ও তার ছেলে অসিত ঘোষ তিন পুরুষ ধরে তাদের পৈত্রিক পেশা ধরে রেখেছেন দই তৈরির কাজ।

দই তৈরির রেসিপি সম্পর্কে জানতে চাইলে খামারপাড়ার শ্রীকৃষ্ণ দধি ভান্ডারের মালিক অশ্বিনী ঘোষের ছেলে অসিত ঘোষ বাংলানিউজকে বলেন, ‘যে কোন খাবারই সুস্বাদু করে তুলতে কিছু গোপন বিষয় থাকে। খামারপাড়ার দই তৈরিতেও তার ব্যতিক্রম নয়। আমরা আমাদের নির্দিষ্ট গোয়ালার বাইরে থেকে পারতপক্ষে দুধ সংগ্রহ করি না। জমাট হওয়া দই ফ্রিজিং ছাড়াই কমপক্ষে ৫দিন ভালো থাকে।

অসিত বলেন, দই তৈরিতে আমাদের খরচ যদিও একটু বেশি পড়ে। তবে বিক্রি বেশি হওয়ায় এবং আমরা নিজেরাই দই তৈরির বেশির ভাগ কাজ করি বলে লাভ কম হলেও আমরা তা পুষিয়ে নিতে পারি। এ দই তৈরি, বাজারজাত, দুধ সরবরাহসহ বিভিন্ন কাজে খামারপাড়াসহ এ এলাকার কমপক্ষে ১০০টি পরিবার জড়িত। এছাড়া দই বিক্রির মাটির পাতিল তৈরি ও সরবরাহ করেও অনেকে জীবিকা নির্বাহ করেন।

খামারপাড়া আদি দধি ভান্ডারের মালিক দুলাল ঘোষ(৭০) বলেন- আমাদের তৈরি এক হাড়ি দইও কোনদিন ঘরে পড়ে থাকে না। যা তৈরি করি তাই বিক্রি হয়ে যায়। এ এলাকার যে কোন পরিবারের লোকজন ঢাকা, খুলনা কিংবা বিদেশে থাকলেও যাবার সময় তাদের খামারপাড়ার দই নিয়ে যাওয়া চাইই। তাছাড়া বিয়ে বা যে  কোন সামাজিক অনুষ্ঠানে আমরা দই সরবরাহ করে থাকি। সেক্ষেত্রে আসপাশের প্রায় ৫/৬ টি জেলায় আমরা নিয়মিত দই সরবরাহ করে থাকি। তিনি আরও জানান- সাধারণত আমরা প্রতিদিন কমপক্ষে ১মন দই তৈরি ও বিক্রি করি। তবে বিয়ে বা সামাজিক অনুষ্ঠানের মৌসুমে তা কয়েকগুন বেড়ে যায়। দীর্ঘ ৬০ বছর ধরে আমি এ ব্যবসার সাথে জড়িত আছি।

খামারপাড়া বাজারের প্রাক্তন কৃতি খেলোয়াড় অমল বিশ্বাস জানান- ‘স্বাদ, গন্ধ ও স্থায়ীত্বে খামারপাড়ার দই অনন্য। যে কেউ এ দই নিয়ে দূর দুরান্তে তাদের আত্মিয় স্বজনের কাছে চলে যেতে পারেন। এ জন্য আমরা দেশের বাইরে বিশেষ করে ভারতে যেতে হলে এ দই নিয়ে যাই। তাছাড়া এ এলাকার অনেক পরিবারের লোকজনই ইউরোপ আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছেন। তারা দেশে এসে বিদেশে ফেরত যাওয়ার সময় এ দই নিয়ে যান। এ দই এত সুন্দরভাবে জমাট বাধে যে দীর্ঘক্ষণ উপুড় করে রাখলেও তা ভেঙ্গে পড়ে না।

দুলাল ঘোষের ছেলে দিনেশ ঘোষ বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমাদের এলাকার বিদেশে থাকনে এমন কয়েকজন ব্যক্তির সাথে আমার কথা হয়েছে। খামারপাড়ার বিখ্যাত এ দই তারা বিদেশের বিভিন্ন বাজারে বাজারজাত করার পরিকল্পনা আমাকে জানিয়েছেন। আগামী কোরবানীর ঈদের সময় দেশে এসে তারা আমাকে এ বিষয়ে চূড়ান্তভাবে জানাবেন। আশা করছি আমাদের এ দই বিদেশে রপ্তানি করতে পারলে অনেক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব হবে। তবে সেক্ষেত্রে সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন হবে।

খামারপাড়া দই ভোজন রসিকদের কাছে অত্যন্ত সুপরিচিত হওয়ায় এটির চাহিদা ক্রমশঃ বাড়ছে। প্রতি কেজি দইয়ের উৎপাদন খরচ পড়ছে প্রায় ১০০ টাকা। বিক্রি হচ্ছে পাইকারী ১২০ দরে। যার খুচরা মূল্য প্রতি কেজি ১৩০ টাকা। স্বাদ, জনপ্রিয়তা এবং চাহিদার কারণে এই শিল্পটি অত্যন্ত দাপটের সাথে ৯ দশকেরও বেশি সময় ধরে জেলায় টিকে আছে।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।