ঢাকা, রবিবার, ১৩ শ্রাবণ ১৪৩১, ২৮ জুলাই ২০২৪, ২১ মহররম ১৪৪৬

লাইফস্টাইল

স্বপ্নের সিঁড়ি

লাইফস্টাইল ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০১৩
স্বপ্নের সিঁড়ি

ছাত্রছাত্রীরা ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে যোগ্যতা অর্জন করছে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির। তবে অনেকেই সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না কোন বিষয়ে পড়লে তার ভবিষৎ আরও সম্ভাবনাময় ও সফল হবে।

কারণ অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি গোটা দুনিয়াতে যত মানুষ যে কোনো ধরনের কাজ, পেশা এবং যে কোনো বিষয়ে পড়াশোনার সাথে সম্পৃক্ত আছে তার প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ নিজ কর্মক্ষেত্রকে বা নিজ পড়াশোনার বিষয়কে অপছন্দ করে। এই সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসতে ইচ্ছা, যোগ্যতা এবং সামর্থের সাথে নিজের পছন্দের বিষয় নির্ধারণ করতে সহযোগিতা দিতে আপনাদের জন্য থাকছে আমাদের নিয়মিত আয়োজন।

আজকের বিষয় – আন্তর্জাতিক সম্পর্ক। এই বিষয় নিয়ে বিস্তারিত কথা বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ। ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন...

এই বিষয়ে পড়তে হলে ভালো ছাত্র হতে হবে, এটা একটা পূর্বশর্ত। এরপর আমার যা মনে হয় তা হল ইংরেজি ভাষায় দখল থাকতে হবে, এটা এই কারণে যে যেহেতু ‘আন্তর্জাতিক সম্পর্ক’ তাই বেশিরভাগ বই ইংরেজিতে। সেই হিসেবে ইংরেজিতে দক্ষ হলে ভালো। এটা জানিয়ে রাখা দরকার যে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র বিভাগ যেখানে তৃতীয় আরেকটি ভাষা নিতে হয় বাধ্যতামূলকভাবে। মাতৃভাষার পর ইংরেজির বাইরে অন্য আরেকটি ভাষা এখানে বাধ্যতামূলক যা অন্য বিভাগে বাধ্যতামূলক না। এখানে ফ্রেঞ্চ থেকে চাইনিজ, জাপানিজ ভাষা নিতে পারে। ভালো ছাত্র ও ভাষার বাইরে যদি সাধারণ জ্ঞান ভালো থাকে তাহলে সেটা তার কাজে লাগবে।

এটি সামাজিক বিজ্ঞানের অংশ, এখানে পরিসংখ্যানের একটি বাধ্যতামূলক পেপার আছে। ম্যাথমেটিকাল আন্তর্জাতিক সম্পর্কও আছে, বিশেষ করে যারা আর্মসের ওপর কাজ করে, পলিটিক্যাল ইকোনোমিতে কাজ করে তাদের খুব ভালো হয় যদি গানিতিক জ্ঞান ভালো থাকে। সামাজিক বিজ্ঞানের অংশ হিসেবে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি একটি খুব সাধারণ বিষয়।

IR খুব মজার একটি বিষয় কারণ এর ফিল্ড প্রচন্ড পরিবর্তনশীল এবং প্রায় প্রতিদিনই পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় এখন আরব বিশ্বে যে পরিবর্তন হচ্ছে তা খুব স্বাভাবিকভাবেই আন্তর্জাতিক সম্পর্কের আওতায় আসে। এরপর ওবামা দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হল, এর কি প্রভাব পড়বে, মায়ানমারে গিয়ে অং সান সূচির সাথে কথা বলল এই সবই আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যায়। সব সময় পরিবর্তনশীল বিশ্ব হয়ে যায় আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মাথাব্যাথা। সেই হিসেবে প্রতিটি পরিবর্তন আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মধ্যেই। আমাদের প্রধানমন্ত্রী কেন ইসলামাবাদ গেলেন না, ডি-৮ এর সম্মেলনে কি কোনো রাজনীতি ছিল নাকি এই সবই আন্তর্জাতিক সম্পর্কেরই অংশ। সুতরাং প্রতিদিন এতো পরিবর্তন হচ্ছে যে একজন ছাত্র আনএক্সাইটেড হবার সুযোগ থাকে না। সবসময় তাকে চোখ, কান খোলা রাখতে হবে।

এই বিষয় নিয়ে পাশ করার পর যে কোনো ডিসিপ্লিনে চাকরি করতে পারে। ব্যাংকিং থেকে শুরু করে এনজিও তাছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক গবেষণা আছে। এরপর আছে বিসিএস। IR এ পড়া কোনো ছেলে বা মেয়ে যদি বিসিএস দেয় তবে তার বেশ কয়েকটা পেপার কমন থাকে যেহেতু ৪-৫ বছর প্রায় একই রকম পেপার তাদের পড়তে হয়। আমাদের অনেকেই আছেন হয়ত ভিন্ন পেশায় গেছেন তবে সন্দেহ নেই ফরেন অ্যাফ্যায়ার্সের মধ্যেও প্রচুর আছে যারা আন্তর্জাতিক সম্পর্কে পড়া, একাধিক রাস্ট্রদূত আছেন যারা আন্তর্জাতিক সম্পর্কে পাশ করা। এখানে উল্লেখ করা দরকার যে প্রাক্তন রাস্টপতি শাহাবুদ্দীন ছিলেন আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ছাত্র। যদিও পরে অন্য পেশায় চলে গিয়েছেন। মানে এখানে কোন বাঁধা নেই সে কোথায় যাবে, মূল হচ্ছে তার ইচ্ছাটা কী। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক থাকলে তার বড় একটা পারসপেক্টিভ তৈরি হয় যা তাকে যে কোন ডিসিপ্লিনে যেতে সাহায্য করবে। এখন গার্মেন্টস সেক্টরেও অনেকে আছে যারা আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ছাত্র।

এছাড়াও এখন পর্যন্ত যারা আন্তর্জাতিক সম্পর্কে পাশ করেছে কিন্তু বেকার এমন দেখা যায়নি। হয়ত বিসিএস এর প্রস্তুতি নিচ্ছে বা বিদেশে যাবে এমন আছে কিন্তু চাকরি না পেয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে এমন শোনা যায়নি। আমাদের দেশে বা বিদেশে চাকরির জন্য যে গুণ গুলো থাকা দরকার যেমন স্মার্ট হতে হবে, আপডেট থাকতে হবে, ভালো ইংরেজি জানতে হবে এই বিষয়গুলো আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ছাত্রদের থাকে তাই যেখানেই ইন্টারভিউ দিতে যায় তার তেমন সমস্যা হয় না।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পৃথিবীর প্রায় সকল উন্নত দেশে আছে। একটা ব্যাপার মনে রাখতে হবে যে উন্নত দেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের লোকের জানতে চায় বাংলাদেশ বা উন্নয়নশীল দেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের লোকের কি ভাবছে। আর তাই আমি মনে করি স্কলারশিপ পাওয়াটাও সহজ হয়ে যায়। এই মুহুর্তে অনেকেই আছেন যারা লেকচারার বা অ্যাসিস্টেন্ট প্রফেসর হিসেবে জয়েন করেছেন, জুনিয়র কলিগ, তারা বিভিন্ন দেশে PhD করছেন বা  মাস্টার্স করছেন। যারা টিচিং প্রফেশনে আসে তাদের জন্য বেশ সহজ স্কলারশিও পাওয়া। আর যারা এদিকে আসেন না সরকারি চাকরি করেন তাদের অনেকেই আছেন যারা বিদেশে গিয়ে ডিগ্রি নিয়েছেন। ছাত্ররা আমেরিকা বা ব্রিটেনে বেশি যায় যদিও বর্তমানে অস্ট্রেলিয়াতেও যাচ্ছে। এর কারণ অস্ট্রেলিয়া প্রচুর স্কলারশিপ দিচ্ছে। এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও অনেকে যাচ্ছেন, এছাড়াও সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক এসব দেশেও গবেষণার সুযোগ রয়েছে।

নতুনদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, একজন ছাত্রের উচিৎ হবে সৃজনশীল হওয়া। আমি এটা বলছি না যে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পড়লেই সৃজনশীল হবে তা না কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পড়া থাকলে পৃথিবীর নানা জায়াগায় যে পরিবর্তনগুলো হচ্ছে তার সাথে সহজে সম্পৃক্ত হতে পারে। যার কারণে তার চিন্তাভাবনাটাও বড় হবার সুযোগ থাকে। কেউ যদি এই সাবজেক্টে পড়তে চায়, ছাত্র হিসেবে বা এমনি পড়তে চায় আমি উৎসাহ দেব, এখন বিশ্বায়নের যুগ। এই যুগে আমি যত বেশি বিশ্বের সাথে সম্পৃক্ত হতে পারি তত বেশি ভালো। তার সাথে এখন সাইবার টেকনোলোজির যুগ। ইন্টারনেট, ফেসবুক, টুইটার বলতে গেলে প্রায় প্রতিটি ঘরেই কিছু না কিছু আন্তর্জাতিক সম্পর্ক আছে। সবাই কোনো না কোনো ভাবে বিদেশের সাথে সম্পর্ক রাখছে। এই বিশ্বায়নের যুগে একজন আর্কিটেকচারের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। কারণ বিশ্বে কি ধরনের পরিবর্তন আসছে তার সাথে আর্কিটেকচারাল ডিজাইনের যে পরিবর্তন আসছে টা জানার জন্য তাকে বাধ্য করছে বিশ্বায়ন সম্পর্কে জানতে। আবার যে অর্থনীতি পড়ে তারও জানা দরকার আর যে পদার্থ পড়ে তাকেও জানতে হয়।  

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পড়ে একজন ছাত্র যেমন উপকৃত হবে তেমনি তার সাথে সাথে গোটা দেশও উপকৃত হবে।  

কৃতজ্ঞতা: এক দল উদ্যমী তরুণের স্বপ্ন, লাইফ কার্নিভাল http://www.lifecarnival.com

বন্ধুরা আপনারা আর কি কি বিষয়ে জানতে আগ্রহী আমাদের জানান https://www.facebook.com/bnlifestyle
mail id: [email protected]

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।