ঢাকা, রবিবার, ১৩ শ্রাবণ ১৪৩১, ২৮ জুলাই ২০২৪, ২১ মহররম ১৪৪৬

লাইফস্টাইল

লালবাগ কেল্লায় অল্প সময়

রফিকুল ইসলাম সাগর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ৬, ২০১৩
লালবাগ কেল্লায় অল্প সময়

ফেইসবুকে `আনলিমিটেড আড্ডা` নামক গ্রুপের ঢাকায় অবস্থানরত বন্ধুরা ঢাকার দর্শনীয় স্থান গুলোতে প্রতিমাসে একবার যে কোনো শুক্রবার আড্ডায় বসি। ঘোষণা অনুযায়ী গত আড্ডা জমাতে গিয়েছিলাম লালবাগ কেল্লায়।

অনেক ছোট থাকতে একবার লালবাগ কেল্লায় গিয়েছিলাম। অনেক বছর আগের কথা ঠিক মনে ছিল না মহাখালী থেকে লালবাগ কেল্লায় যাওয়ার সহজ পথ কোনটা। এক বড় ভাইয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী মহাখালী থেকে ৩ নম্বর বাসে উঠে শাহবাগ পর্যন্ত যাই। শাহবাগ মোড় থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে যাওয়ার রাস্তায় এক রিক্সা চালককে বললাম, মামা লালবাগের কেল্লায় যাইবেন? যামু। ৪০ টাকা ভাড়া চাইল। আমি বললাম, ৩০ টাকা। পরে ৩৫ টাকায় রিক্সা ভাড়া করলাম।

ঘড়ির কাটায় বিকেল ৩ টা বেজে ৩০ মিনিট। যানজটহীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পথে রিক্সা চলছে। আমি এদিক সেদিক তাকিয়ে পারিপার্শিক দৃশ্য আর ভিন্ন ভিন্ন মানুষ দেখছিলাম। রোদ মুক্ত ঠাণ্ডা পরিবেশ। মানুষের হইচই আর রিক্সার ক্রিং ক্রিং হর্নের শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম। লালবাগ এলাকায় কেল্লার কাছাকাছি এসে ছোট রাস্তায় একটু জ্যামে আটকা পরি। পথচারী আর ছোট বড় গাড়ি মিলিয়ে লম্বা জ্যাম। দলে দলে মানুষ নানান সাজে সেজে কেল্লার পথে হেটে যাচ্ছে। সবার মুখে আনন্দের হাসি। চোখে দেখার আগ্রহ।

দেখে বোঝা যাচ্ছিল এ মানুষগুলো লালবাগ কেল্লার দর্শনার্থী। জ্যাম ঠেলে রিক্সা লালবাগ কেল্লার সামনের রাস্তায় পৌঁছালো। সীমানার দেয়াল ঘেষে ছোট রাস্তা। বুঝতে পারলাম একটু সামনেই লালবাগ কেল্লা। বা পাশে অনেক উচু কেল্লার সীমানার দেয়াল। দেয়ালের উচ্চতা যেখানে শেষ হয়েছে সেখান থেকে আরো একটু লোহার শিক মিলিয়ে উচ্চতা। দেয়াল টপকে ভেতরে প্রবেশ করা সম্ভব নয়। কেল্লার মোট তিনটি গেইট। সামনের দিকে দুইটি পিছনে একটি।

লোহার বিশাল বড় এবং মজবুত রাজকীয় গেইট ঘাড় উচু করে দেখতে হবে। দুইটি গেইট সব সময় বন্ধ করে রাখা হয়। একটি গেইট ব্যবহার হয় সকলের প্রবেশ এবং বাহির হওয়ার জন্য। এরই মধ্যে রিক্সা মূল গেইটের সামনে। টিকিট কাউন্টারের সামনে দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভীড়। মানুষের পেছন থেকে এক পা দু পা এগিয়ে টিকেট কাউন্টার থেকে টিকেট কিনে ভেতরে প্রবেশ করি।

ভেতরে প্রবেশ করেই সামনের দিকে বিবি পরীর সমাধি সৌধ দেখতে পেলাম। সামনের দিকে না এগিয়ে কয়েক মিনিট দাঁড়িয়ে রইলাম। আশে পাশে তাকিয়ে দেখলাম দর্শনার্থীদের চলাচল করার পথ, ভেতরের খোলা মাঠ সব কিছু খুব পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন। সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য পথের দু`পাশে আকর্ষণীয় ফুলের গাছ। মাঠের ঘাসগুলো সবুজ সতেজ। ঘাসেও বিভিন্ন ডিজাইন করে ফুলের গাছ। শিশু, তরুণ ও বৃদ্ধ সব বয়সের দর্শনার্থী মিলিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশ। Lalbagh

কেউ ঘুরে ঘুরে দেখছে, কেউ মাঠে বসে আড্ডা জমিয়েছে আবার কেউ কাউকে খুঁজছে। এদিক থেকে আমি কিছু ছবি তুলে নিলাম। সোজা সামনের পথে এগিয়ে গিয়ে দেখা হয় আনাস বিল্লাহ, আতাউর রহমান ও গাজী খায়রুল আলমের সাথে। আড্ডা জমাতে ওরা আগেই সেখানে উপস্থিত হয়েছিল। আমরা ক`জন মিলে একে একে সব কিছু ঘুরে দেখছিলাম। কিছুক্ষণ পরে আমাদের সাথে যোগ হয় আরো দু`জন সমুদ্র বিপ্লব ও সাইমুন সাদ।

পেছন দিকটায় ছোট একটি লোহার গেইটের সামনে দর্শনার্থীদের ভীড় দেখতে পেয়ে এগিয়ে যাই সেখানে। এটি কেল্লার সুরঙ্গ পথ। এই পথ দিয়ে নাকি বুড়িগঙ্গা নদীর দিকে যাওয়ার গোপন রাস্তা। তবে এখন আর এই পথ ব্যবহার করার সাহস কেউ করে না। এখান দিয়ে গেলে নাকি আর ফিরে আসা যায় না। কেউ যেন যাওয়ার চেষ্টা না করে তাই গেইটে বড় আকারের তালা ঝোলানো। গেইটের এপাশে দাঁড়িয়ে সুরঙ্গের ভেতরের দিকে উঁকি দিলে অন্ধকারে নিচের দিক নামানো ক`টি সিড়ি ছাড়া আর কিছু দেখা যায় না। এটা দেখতেই মানুষের এতো কৌতুহল! এখানে দাঁড়িয়েই মূলত সবাই এই সুরঙ্গের ইতিহাস বলাবলি করে। ছোট শিশুরা তাদের বাবা-মায়ের কাছে জানতে চায় এর ইতিহাস।

এখান থেকে পশ্চিম পাশের মসজিদটি এক নজর দেখে এলাম। কেল্লার পেছনে দক্ষিণ দিকে তিনটি গেইটের আরেকটি গেইট। এটিও এখন আর ব্যবহার হয় না। এই গেইটটিই আমার চোখে সব চেয়ে সুন্দর মনে হয়েছে। সেই আমলের নির্মাণ দেখে মুগ্ধ হতেই হয়। পূর্ব পাশে গিয়ে একটি পুকুর দেখতে পাই। এটিতে একটু পানিও নেই। ওপর থেকে নিচের গভীরতা দেখা যায়। ঘড়ির কাটায় বিকাল ৫টা। চারিদিক থেকে বাশির শব্দ শোনা যাচ্ছিল। দর্শনার্থীদের থাকার সময় শেষ। লালবাগ কেল্লার নিরাপত্তাকর্মীরা বাশি ফু দিয়ে দিয়ে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছিলেন। সাথে হাত দিয়ে ইশারা করে সবাইকে বের হয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিচ্ছিলেন। খুব অল্প সময় তাই এখানে আর আড্ডায় বসা গেলনা। তবে আমরা ঠিক করলাম আরেকদিন লালবাগ কেল্লায় আড্ডা করব। সেদিন সকাল সকাল চলে আসব। সবার সাথে আমরাও একে একে বের হয়ে যাই।

জেনে নিন কিছু তথ্য: লালবাগ কেল্লায় প্রবেশ টিকিট মুল্য ১০ টাকা (বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য) ১০০ টাকা (বিদেশি নাগরিকদের জন্য)।

লালবাগ কেল্লার গ্রীষ্মকালীন (এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর) সময় সূচী হলো: সকাল ১০ টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। আর শীতকালীন (অক্টোবর থেকে মার্চ) সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা। মাঝে ১ টা থেকে ত্রিশ মিনিটের মাধ্যাহ্ন বিরতি। শুক্রবারে মধ্যাহ্ন বিরতি থাকে ১২ টা ৩০ মিনিট থেকে ২টা ৩০ মিটিন পর্যন্ত। রোববার পূর্ণ দিবস, সোমবার অর্ধ দিবস এবং সব সরকারি ছুটির দিনগুলিতে লালবাগ দুর্গ বন্ধ থাকে।

লেখা ও ছবি: রফিকুল ইসলাম সাগর(বাংলানিউজের পাঠক)

for more info: https://www.facebook.com/bnlifestyle

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।