ঢাকা, সোমবার, ১৫ পৌষ ১৪৩১, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

লাইফস্টাইল

হুমকির মুখে!

শারমীনা ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৬ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০১৪
হুমকির মুখে!

আমরা যখনই পোশাক কেনার কথা ভাবছি গাউছিয়া,  নিউমার্কেট বা বসুন্ধরা সিটি, যমুনা ফিউচার পার্ক যে শপিং সেন্টারেই যাচ্ছি দোকানী আমাদের প্রথমে সুন্দর একটি অ্যালবাম খুলে দিচ্ছেন।

রঙচঙে সুন্দর সুন্দর নারী মডেল জমকালো সব পোশাক পরে নানা ভঙ্গিতে পোশাকের সৌন্দর্য তুলে ধরছেন।


আর পুতুলে পরানো এক্সক্লুসিভ পোশাক তো হাত দিয়ে ছোঁয়াই মানা। তাদের গায়ে নির্লজ্জের মতো লেখা থাকে কারিনা, ক্যাটরিনা বা কুসুম-কুমুদ-কলিকা।  

আকাশ ছোঁয়া দামের পোশাকগুলো এসেছে সেই যাদের কাছ থেকে মুক্ত হতে আমরা হারিয়েছি লাখ লাখ আপনজন, সেই পাকিস্তান থেকে। আর বাকীগুলো বন্ধু! দেশ ভারতের।

আগ্রাসন কী শুধু এক জায়গায়, আমাদের প্রতিটি ঘরে এখন টিভি সিরিয়াল দেখার ধুম। বাড়িতে কোনো নারী অতিথি বেড়াতে এলে অবাক হই সবাই বসে গল্প করছি, হঠাৎ ব্যস্ত হয়ে টিভি রুমে ছুঁটছেন, ৭টায় গোপি(স্টারপ্লাসের সিরিয়ালের নায়িকার নাম) এটা তো দেখতেই হবে। তারা শপিং-এ গিয়ে বলেন, সিরিয়ালে রাশি যে শাড়িটি “অমুক” পর্বে পরেছিল ওটাই তার চাই।

কোনো বিয়ের অনুষ্ঠানে গেলে কী দেখি? বউ থেকে শুরু করে বিয়ে বাড়ির নারী অতিথিদের সাজ পোশাক দেখে মনে হয় সিরিয়ালের শুটিং চলছে। পোশাকের তালিকা করলে ২০০জন নারীর মধ্যে ৫জনও দেশি শাড়িতে দেখা যায় না।

পোশাকে বিদেশি আধিপত্যে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আসলে আমাদের তাঁত শিল্প। অন্য কোথাও আমাদের দেশি পোশাক পাঠাতে হলে ট্যাক্স দিয়ে অনেক খরচ পড়ে। কিন্তু প্রতিবেশি দেশগুলো থেকে চোরাই পথে পোশাক এসে আমাদের শপিংমলে ঢুকে যাচ্ছে।

দেশের নাম করা ফ্যাশন হাউস নগরদোলার প্রধান নির্বাহী আলী আফজাল দুঃখ করে বলেন, এভাবে বিদেশি পোশাক আমাদের দেশের বাজার দখল করে নিচ্ছে যে, স্বাতন্ত্র বজায় রেখে দেশি পোশাক ধরে রাখাও বেশ কষ্টের। দিনের পর দিন ক্ষতি পুষিয়ে নিয়ে ব্যবসা করা মধ্যম মানের ফ্যাশন হাউসগুলোর জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশি পোশাক শিল্পের সঙ্গে জড়িত দেশের লাখ লাখ পরিবার জীবিকা হারালে পুরো দেশের জন্যই তাদের পুনর্বাসন করা কঠিন হয়ে যাবে। তিনি বলেন, এখনও সময় আছে সচেতন ভাবে আমাদের দেশীয় এতিহ্য, সাধারণ ব্যবসায়ী ও তাঁতীদের টিকিয়ে রাখার। আর এজন্য সরকারকে দ্রুত উদ্যোগ নিয়ে সঠিক ট্যাক্স দিয়ে পোশাক আনার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।

আমরা নিজের দেশকে, দেশের এতিহ্যকে ভালোবাসি। আমাদের জামদানী বিশ্বসেরা, আমাদের টাঙ্গাইল শাড়ির সুনাম রয়েছে দেশ জুড়ে, তাঁত-সুতি কাপড়গুলো গুণে-মানে ও আরামে এখনও সেরা। কিন্তু আমাদের দেশি পোশাকগুলো শুধুমাত্র অতোটা জমকালো না হওয়ায় পিছিয়ে পড়ছে।

বিদেশি পোশাকের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করতে আমাদের দেশি হাউসগুলো ভীত নয়। তবে প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে নিজেদের কাপড় পাশ কাটিয়ে সেই ভারত-পাকিস্তানের পোশাকের কপি করতেই যেন আমরা ব্যস্ত হয়ে উঠছি।  
 
বন্ধুরা আরও নানা বিষয়ে জানতে ও আপনার মতামত জানাতে https://www.facebook.com/bnlifestyle লাইফস্টাইল বিভাগে লেখা পাঠাতে পারেন  [email protected]

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।