ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত স্বপ্নপুরী 

মো. আমিরুজ্জামান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০২৩
দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত স্বপ্নপুরী 

নীলফামারী স্বপ্নপুরী থেকে ফিরে: দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত স্বপ্নপুরী। ঈদের দিন থেকে চলছে এই অবস্থা।

৬-৭ মাইলের যানবাহনের জট ঠেলে যেতে হচ্ছে বিনোদন পার্ক স্বপ্নপুরীতে। পুরো স্বপ্নপুরীতে মানুষের ঢল। তিল ধারণের ঠাঁই নেই স্বপ্নপুরীতে। ঈদের ছুটিতে কেউ এসেছেন পরিবার নিয়ে, কেউবা বন্ধু-বান্ধব নিয়ে, কেউ আবার স্বামী-স্ত্রী সন্তান নিয়ে।

বলছি দিনাজপুর জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলার কুশদহ ইউনিয়নের স্বপ্নপুরীর কথা। কী নেই সেখানে। কর্তৃপক্ষ মনের মাধুরী দিয়ে সাজিয়েছেন স্বপ্নপুরীকে। এখানে রয়েছে টয়ট্রেন, স্পিডবোর্ড, বরফের জগত, টেলিকম বাট, সুপার জেট, গা ছমছম করার মতো ভূতের বাড়িসহ শিশুদের নানা ধরনের রাইড। ফিজবি, ড্রাগন ও শান্তা মারিয়া নামে তিনটি রাইড রয়েছে। গর্ভবতী নারী ও দুর্বল হার্টের মানুষকে এগুলোতে না চড়ার পরামর্শ কর্তৃপক্ষের। এসব রাইডে ২০-৫০ টাকায় একজন উঠতে পারেন।  

স্বপ্নপুরীতে রয়েছে মিনি চিড়িয়াখানা, কৃত্রিম প্রাণিজগত এলাকা, ঘাস ও ফুলের আচ্ছাদনে তৈরি সুন্দর গালিচা, স্বাধীনতাকে স্মৃতিবহ করে রাখতে তৈরি করা হয়েছে স্বাধীনতা এমনি এমনি আসেনি স্তম্ভ, হাতি, নানা ফুলের সমাহার, ট্রেন, কেবল কার, রংধনু, নান্দনিক বিভিন্ন নামে আবাসিক কটেজ, শহীদ বেদী, ১৯৭১ -এর শহীদদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভ, প্যাডেল নৌকায় ঘুরে বেড়ানো, কৃত্রিম শাপলা, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাঁকুর, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম, নানা ধরণের ফুল, ঘোড়ার গাড়ি চড়ার আনন্দ, সৌরজগত, নভোথিয়েটার, স্বপ্নপুরী মালিকের আলিশান বাংলো ও নয়ানাভিরাম মসজিদ ইত্যাদি। প্রতিটি শিল্পকর্ম নিখুঁতভাবে তুলে ধরেছেন শিল্পী। অনেক রাইড বসানো হয়েছে কিন্ত ওপরের আচ্ছাদন এখনও দেওয়া হয়নি। স্বপ্নপুরীকে আরও আকর্ষণীয় করে গড়ে তোলার কাজ করছেন কর্তৃপক্ষ।  

স্বপ্নপুরীতে প্রবেশে প্রতিজনকে ১০০ টাকা গুণতে হয়। বাস, মিনিবাস, ট্রাক প্রতিটি ১০০ টাকা, মাইক্রোবাস, পিকআপভ্যান, জিপ, ইজিবাইক, সিএনজি অটোরিকশা প্রবেশে ৫০ টাকা দিতে হয়। কটেজ ভাড়া নিতে আগাম বুকিং করা যায়। ভেতরে রয়েছে ভালো ভালো হোটেল। সেখানে খাওয়া-দাওয়ার পাশাপাশি অর্ডার দিয়ে খাবার নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।  

দিনাজপুর সদর থেকে ৫২ কিলোমিটার এবং ফুলবাড়ী উপজেলা শহর থেকে ১২ কিলোমিটার পূর্বে নবাবগঞ্জ উপজেলার আফতাবগঞ্জ এলাকার প্রত্যন্ত পল্লী অঞ্চলের গহীন বন ও মজা পুকুর সংস্কার করে প্রায় ১০০ একরের বেশি জমির ওপর নির্মিত উত্তরবঙ্গের মনোরম ছিমছাম ভ্রমণ কেন্দ্র স্বপ্নপুরী।  

নবাবগঞ্জ উপজেলার কুশদহ ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান, সাংস্কৃতিক ও প্রকৃতি প্রেমিক দেলোয়ার হোসেনের ব্যক্তিগত উদ্যোগে একটি পিকনিক কর্নার গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়ে ১৯৮৯ সালে কাজ শুরু করেন। ১৯৯০ সাল থেকে যাত্রা শুরু করে স্বপ্নপুরী। এছাড়া ১৯৫২-৭১ সাল পর্যন্ত আন্দোলন ও সংগ্রামের চিত্র আর্টিফিসিয়ালের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মকে জানানোর জন্য দেয়ালে দেয়ালে বা দর্শণীয় স্থানে ম্যূরাল চিত্র তৈরি করা হয়। এসব তদারকির জন্য সার্বক্ষণিকভাবে দিবারাত্রি আগত ভ্রমণকারী মেহমানদের নিরাপত্তাসহ সার্বিক কাজ করে যাচ্ছেন শ্রমিক ও কর্মচারিরা।  



ইতোমধ্যে ২০-২৫টি চলচ্চিত্র, নাটক ও মিউজিক ভিডিওর স্যুটিং হয়েছে এখানে। এছাড়া দেশ ও বিদেশের অনেক গুণী রাজনৈতিক, বুদ্ধিজীবী, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব স্বপ্নপুরী ঘুরে গেছেন। স্বপ্নপুরীকে মানুষের কাছে স্বপ্নের মতো সাজানোর পরিকল্পনা কর্তৃপক্ষের দীর্ঘমেয়াদী। এ পিকনিক স্পটে শীত মওসুমে অগণিত পিকনিক পার্টি আসে। শীত মওসুম ছাড়াও সারা বছরজুড়ে লোকজন এখানে বেড়াতে আসেন। স্বপ্নপুরীতে বেড়াতে আসা লোকজনের অভিযোগ, ভাত থেকে শুরু করে যেসব জিনিস এখানে পাওয়া যায়, তার দাম বাইরের চেয়ে অনেক বেশি, আবার মানও খারাপ।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০২৩
এসআরএস/এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।