ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ আশ্বিন ১৪৩১, ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৪ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ভুয়া সার্টিফিকেট-জাল দলিল তৈরিই ছিল তাদের কাজ!

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৪ ঘণ্টা, জুলাই ১১, ২০২৩
ভুয়া সার্টিফিকেট-জাল দলিল তৈরিই ছিল তাদের কাজ!

রাজশাহী: ‘রাজশাহী মহানগর থেকে দুই প্রতারককে আটক করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। মুক্তিযোদ্ধাদের ভুয়া সার্টিফিকেট তৈরিসহ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন কাজের জন্য ভুয়া দলিল-দস্তাবেজ তৈরি করাই ছিল তাদের মূল কাজ।

ওই দুই প্রতারকের মধ্যে একজন চক্রটির মূলহোতা। ’

মঙ্গলবার (১১ জুলাই) দুপুরে র‌্যাব-৫- এর সদর দপ্তর থেকে গণমাধ্যদমে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।

আটকরা হলেন, রাজশাহী মহানগরের পূর্ব মোল্লাপাড়া এলাকার আনিসুর রহমান ওরফে রেজাউল (৬৬) এবং কোর্টবুলনপুর এলাকার রাজীব হোসেনের ছেলে শেখ রেজওয়ানুল করিম ওরফে সানিক (২২)। এর মধ্যে রেজাউলই এ চক্রের মূলহোতা।

ওই দুই প্রতারকের কাছ থেকে উদ্ধার করা সরঞ্জামাদির মধ্যে রয়েছে, ১৪টি স্বাধীনতা সংগ্রামের ভুয়া সনদপত্র, ১৫টি জয় বাংলা লেখা সম্বলিত ফাঁকা সনদপত্র, ২ হাজার ৫৪৮টি বাংলাদেশি স্ট্যাম্প, ৮৩৩টি পাকিস্তানি স্ট্যাম্প, ২৫৩টি ভারতীয় স্ট্যাম্প, ২০৫টি জালিয়াতির কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তার নামীয় ও পদবী সম্বলিত ভুয়া সিল, ২টি বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় মনোগ্রাম সম্বলিত লোহারপাত ও দুটি পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় মনোগ্রাম সম্বলিত লোহার পাত (এর সাহায্যে স্ট্যাম্পের পেছনে জল ছাপ দিয়ে জালিয়াতির সাহায্যে বিভিন্ন ভুয়া দলিল করা হয়), তিনটি জালিয়াতির কাজে ব্যবহৃত দোয়াত কলম, ১টি দোয়াত কালি, ১টি স্ট্যাম্প প্যাড।

র‌্যাব-৫ এর সদর দপ্তরের ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সোমবার (১০ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৬টায় দিকে রাজশাহী র‌্যাব-৫ মোল্লাপাড়া ক্যাম্পের সদস্যরা মহানগরের রাজপাড়া থানার পূর্ব মোল্লাপাড়া এলাকায় অভিযান চালায়। এ সময় মুক্তিযোদ্ধাদের জাল সার্টিফিকেট ও বিভিন্ন ধরনের জরুরি দলিল দস্তাবেজ তৈরির সরঞ্জামসহ দুইজনকে আটক করা হয়। পরে রাতভর তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদে র‌্যাব জানতে পারে রাজশাহীর রাজপাড়া থানাধীন পূর্ব মোল্লাপাড়ার আনিছুর রহমান ওরফে রেজাউল করিম তার বাড়িতে কতিপয় ব্যক্তিরা জালিয়াতির জন্য ভুয়া সিলমোহরের সাহায্যে জাল দলিল, ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট তৈরি করে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছে। তবে অভিযানের সময় র‌্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে কৌশলে পালানোর চেষ্টা করেন তারা। কিন্তু তাদের আটক করে র‌্যাব।

আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, আনিছুর রহমান দীর্ঘদিন ধরে ভুয়া দলিল দস্তাবেজ তৈরির কাজ করেন। তিনি সুকৌশলে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে প্রস্তুত করতেন এবং মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধে অংশগ্রহণের প্রমাণক হিসেবে ব্যবহৃত অস্ত্র জমা দেওয়ার জয় বাংলা লেখা সনদও প্রস্তুত করে দিতেন। তার কাছে কেউ ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদপত্র, ভুয়া জামানত, ভুয়া দলিল চাইলে বিভিন্ন অঙ্কের টাকার বিনিময়ে তিনি তা তৈরি করে দিতেন। ভুয়া দলিল দিয়ে জমি দখলদারদের তিনি পুরাতন পাকিস্তানি আমলের দলিলও নিজস্ব পন্থায় তৈরি করে দিতেন। আর জাল দলিল তৈরির জন্য কালি-কলম ব্যবহার করতেন তিনি। কারণ পাকিস্তান আমলে কালি-কলমে দলিল লেখা হত। তিনি পুরাতন দলিল প্রস্তুত কারণের ক্ষেত্রে সরকারি কর্মকর্তাদের সিল নিজে তৈরি করে ব্যবহার করতেন। তার কাছে বিভিন্ন কর্মকর্তার ২০৫টি ভুয়া সিলমোহরও পাওয়া যায়।

তিনি নিজেকে বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ ভুয়া জাল দলিল প্রস্তুতকারক হিসেবে দাবি করেন। তার কাছে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভুয়া দলিল প্রস্তুত করতে প্রতারক জমি দখলকারীরা যোগাযোগ করতেন। তিনি এ যাবৎ সহস্রাধিক জাল দলিলসহ অনেক মুক্তিযুদ্ধের জাল সনদ বানিয়েছেন। তিনি এজন্য বিশেষ কেমিক্যাল ব্যবহার করে দলিলকে পুরাতন দেখানোর পন্থা আবিষ্কার করেছেন। এর মাধ্যমে তিনি জাল দলিল প্রস্তুত করেন যা ধরার উপায় থাকে না।

আটককৃতরা স্বীকার করেছেন, তারা দুইজন পরস্পর যোগসাজসে দীর্ঘদিন ধরে জাল-জালিয়াতির উপকরণ তৈরি করে প্রতারণা করে আসছেন। এছাড়াও তিনি ২০১৩ সালে জাল জালিয়াতির মামলায় আটক হয়েছিলেন।

জিজ্ঞাসাবাদ শেষে মঙ্গলবার আটকদের মহানগরের রাজপাড়া থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। তাদের নামে জালিয়াতি ও প্রতারণা আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে বলেও ওই বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ২০২৩ ঘণ্টা, জুলাই ১১, ২০২৩
এসএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।