বরগুনা: স্মার্ট ভূমি অফিস বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বরগুনায় মাঠপর্যায়ে ভূমি কর্মকর্তাদের জন্য প্রশিক্ষণ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শুক্রবার (১১ আগস্ট) বরগুনা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে দিনব্যাপী এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত থেকে বক্তব্য দেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. খলিলুর রহমান।
উদ্বোধনী পর্বে জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহা. রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে ভূমি সচিব খলিলুর রহমান বলেন, সারা দেশের মধ্যে বরগুনাকে এ কর্মশালার জন্য ৩৬তম জেলা হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে। এ জেলায় সরাসরি অফিসে উপস্থিত না হয়ে সেবা প্রত্যাশী সাধারণ জনগণ অনলাইনে জমির নামখারিজ, নামজারি, বিভিন্ন ফি জমাদান, রশিদ উত্তোলনসহ জমি সংক্রান্ত সব সেবা মোবাইলফোনের মাধ্যমে সম্পন্ন করতে পারবেন। ফলে তারা দীর্ঘদিনের মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য থেকে মুক্তি পাবেন।
ক্যাশলেস ভূমি সেবা প্রসঙ্গে বিশেষ অতিথি ভূমি সংস্কার বোর্ডের সদস্য শশাঙ্ক শেখর ভৌমিক ভূমি ব্যবস্থাপনায় সরকারের সম্ভব সব রকমের প্রচেষ্টা ও সক্ষমতার কথা তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, সেবাপ্রদানে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সৎ হতে হবে। সততা ছাড়া ক্যাশলেস হলেও সেবা কার্যক্রম যথাযথ হবে না।
ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তাদের এ প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে ই-নামজারি বাস্তবায়নে কারিগরি সমস্যা-সমাধান, ড্যাশবোর্ডের মাধ্যমে ই-নামজারি কার্যক্রম মনিটরিং কৌশল, অনলাইন খতিয়ান ও ম্যাপ সেবার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সবাইকে জানানো হয়, একজন নাগরিক এই স্মার্ট ভূমি ব্যবস্থাপনায় বাসায় বসেই ভূমি সংক্রান্ত সব সেবা নিতে পারবেন।
এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে ভার্চ্যুয়ালি আরও যুক্ত ছিলেন বরিশাল বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার মো. শওকত আলী, ভূমি সংস্কার বোর্ডের সদস্য শশাঙ্ক শেখর ভৌমিক ও ভূমি প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের পরিচালক (যুগ্ম সচিব) মো. আরিফ।
প্রশিক্ষণে রিসোর্স পারসন হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ড. জাহিদ হোসেন পনির বিপিএএ ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব সেলিম আহমেদ।
কর্মশালায় অন্যদের মধ্যে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) পিজুস চন্দ্র দে, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ফয়সাল আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
প্রশিক্ষণ প্রসঙ্গে ড. পনির জানান, ক্যাশলেস ভূমি অফিস বাস্তবায়নে সমস্যা চিহ্নিতকরণ ও সেবার মান বাড়াতে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মন্ত্রণায়ের সঙ্গে তথ্য সংযুক্তির বিষয়ে কাজ চলছে। যাতে একই তথ্য একজন নাগরিককে ভিন্ন ভিন্ন মন্ত্রণালয়ে বারবার দিতে না হয়। স্মার্ট ভূমি ব্যবস্থাপনায় সব নাগরিকের প্রয়োজনীয় সব তথ্য একটি ডেটাব্যাংকে রাখা হবে। এতে কোনো নাগরিককে কোনো তথ্য বা কাগজপত্র বারবার ভিন্ন ভিন্ন মন্ত্রণালয়ে কাজের জন্য জমা দিতে হবে না।
তিনি বলেন, ভূমি অফিসের অনলাইন সেবা বাস্তবায়নে বিশেষ গুরুত্ব ও কার্যকর ভূমিকা নেওয়া হচ্ছে।
এসব প্রসঙ্গে যুগ্ম সচিব বলেন, গ্রাহকপর্যায়ে প্রাথমিক আবেদন করতে নিবন্ধিত এজেন্ট ব্যবস্থা চালু হবে।
উপ-সচিব সেলিম আহমেদ বলেন, ডিজিটাল ভূমি সেবা বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়াতে কাজ চলছে। গণমাধ্যম জনসচেতনতা সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখতে পারে।
কর্মশালায় জানানো হয়, বর্তমান সরকার উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণে স্মার্ট বাংলাদেশ ভিশন-২০৪১ প্রতিষ্ঠা এবং স্মার্ট বাংলাদেশ রোডম্যাপে চারটি পিলার যথাক্রমে- স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট সোসাইটি, স্মার্ট ইকোনমি এবং স্মার্ট গভর্নেন্স অন্তর্ভুক্ত করে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ভূমি সেবাকে মানুষের কাছে আরও সহজলভ্য করার লক্ষ্যে ভূমি মন্ত্রণালয় বেশকিছু কার্যক্রম নিয়েছে, যার মধ্যে ডিজিটাল ও ক্যাশলেস ভূমিসেবা অন্যতম।
ভূমি ব্যবস্থাপনা অটোমেশন সফটওয়্যারের মাধ্যমে ভূমি সংক্রান্ত সব কাজে গতিশীলতা ও স্বচ্ছতা বেড়েছে। এছাড়া চালু হয়েছে ই-মিউটেশন, অনলাইন ভূমি উন্নয়ন কর আদায় সিস্টেম, ডিজিটাল রেকর্ড রুম, ডাকযোগে খতিয়ান ও পর্চা প্রাপ্তি, ডিজিটাল সার্ভেয়িং এবং ম্যাপিং, অনলাইন জলমহাল ইজারা, ল্যান্ড জোনিং, অনলাইন শুনানি সিস্টেম, হটলাইন সেবা (১৬১২২) ইত্যাদি যার মাধ্যমে ভূমিসেবা পৌঁছে যাচ্ছে সাধারণ জনগণের দোরগোড়ায়।
জেলা প্রশাসনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এ প্রশিক্ষণে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন বরগুনা প্রেসক্লাবের সভাপতি অ্যাডভোকেট সঞ্জীব কুমার দাস, বরগুনা জেলা টেলিভিশন সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি অ্যাডভোকেট সোহেল হাফিজ।
প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে অংশ নেন জেলার ছয় উপজেলার ছয় সহকারী কমিশনার (ভূমি) এবং ৩৫ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সময়: ২১৪৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১১, ২০২৩
এসআরএস