মৌলভীবাজার: বৃহত্তর সিলেটে ‘পান আপ্যায়ন’ একটি প্রচলিত প্রথা। এর মানে হলো বাড়িতে কোনো অতিথির আগমন ঘটলে তাকে পান দিয়ে বরণ করা হয়।
সিলেটি পানের কথা বললে সহজে যে পানের নামটি চলে আসে তা ‘খাসিয়া পান’। বাংলাদেশের অন্যতম নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী খাসিয়া সম্প্রদায়। তারাই এই খাসিয়া পানের আবিষ্কারক, পরিচর্যাকারী এবং মাতৃতুল্য চাষি। খাসিয়া নারীদের হাতেই এই পানের বিপণন।
খাসিয়া অধিবাসীরা যে পাহাড়ি এলাকায় বসবাস করে, সেটিকে পুঞ্জি বলা হয়। ‘খাসিয়া পুঞ্জি’ মানে খাসিয়াদের গৃহবসতি। পাহাড়ি এলাকাতেই সুস্বাদু এই পান চাষ করে পরিবার পরিজন নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে হয় তাদের।
তবে তারা যে খুব অভাব অনটনের মাঝে রয়েছেন তা কিন্তু একেবারেই নয়। অনেকেই পান চাষ করে তাদের সাংসারিক সচ্ছলতা নিয়ে এসেছেন। কেউ কেউ নিয়ে এসেছেন বিলাসবহুল জীবন।
বৃহত্তর সিলেট আদিবাসী ফোরাম সূত্রে জানা যায়, দেশের ৭৫টি আদিবাসী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী জনসংখ্যার শতকরা এক দশমিক ১৩ ভাগ বসবাস করে সিলেটে। এরমধ্যে মৌলভীবাজারের বিভিন্ন পুঞ্জিতে প্রায় ৩০ হাজার আদিবাসী খাসিয়া বংশ পরম্পরায় বসবাস করে আসছে। সিলেটে ১৩টি, হবিগঞ্জে তিনটি এবং মৌলভীবাজার জেলায় ৬৫টি খাসিয়া পানপুঞ্জি রয়েছে। তাদের জীবিকা নির্বাহের একমাত্র উৎস পানচাষ।
আলিয়াছড়া খাসিয়াপুঞ্জির জন তংপেয়ার জানান, খাসিয়া আদিবাসীরা মাতৃতান্ত্রিক পরিবার। তাই পরিবারে নারীদের অধিকারই বেশি।
তিনি বলেন, হিসেবে ১২টি পান পাতায় এক গুছি ও ১২টি গুছিতে এক কান্তা আর ১২ কান্তায় এক কুড়ি। নারী শ্রমিকরা শুধু নিজের পুঞ্জিতে পান গুছি করে। এক কুড়ি গুছি করলে তারা পারিশ্রমিক পেয়ে থাকেন ৪০ থেকে ৫০ টাকা।
তিনি আরও জানান, প্রায় ২৫-৩০ বছর আগে খাসিয়া আদিবাসী নারীরাই এ এলাকার বাজারে নিয়ে নিজেদের পান বিক্রি করত। তবে এখন স্থানীয় বাঙালি ক্রেতারা খাসিয়া পুঞ্জিগুলোর বাড়ি বাড়ি এসে খাসিয়া পান কেনেন নারীদের কাছ থেকে। খাসিয়া পানপাতায় সমতল অঞ্চলের পানের চেয়ে ঝাঁজ বেশি।
এই পানের দরদাম সম্পর্কে তংপেয়ার বলেন, বর্ষাকালে বৃষ্টিপাতের জন্য পানের উৎপাদন বেশি হওয়ায় পানের দাম কম থাকে। কুড়ি প্রতি খাসিয়া পানের দাম ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা হয়ে থাকে। আর শুকনো মৌসুমে পানের উৎপাদন কম হওয়ায় খাসিয়া পানের দাম কুড়ি প্রতি দুই হাজার ৫০০ থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রয় হয়। তবে গত বছরের তুলনায় এ বছর পানের দাম অনেক কম।
খাসিয়া পান এখন বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে বলে জানান তিনি।
খাসিয়া আদিবাসীরা পান জুমে কাজের সময় শরীরে ছোটখাটো আঘাত পেলে রক্ত বন্ধ করার জন্য বুনো ওষুধ হিসেবে পানপাতা ব্যবহার করে থাকে বলেও জানান তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বৃহত্তর সিলেট আদিবাসী ফোরামের এক নেতা বলেন, সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জের এলাকায় বন ও পাহাড়ে খাসিয়াদের বসবাস। পান চাষই আমাদের প্রধান জীবিকা। কিন্তু সাংবিধানিক স্বীকৃতি না থাকায় আমাদের প্রতিনিয়ত ভূমি দখল, বসতভিটা থেকে উচ্ছেদ, শারীরিক নির্যাতনসহ বিভিন্ন হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১০৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০২৩
বিবিবি/এসআইএ