ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৩ মাঘ ১৪৩১, ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৬ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

শ্রীপুরে ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী

মো. রাজীব সরকার, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২১ ঘণ্টা, আগস্ট ২৪, ২০২৩
শ্রীপুরে ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী

গাজীপুর: গাজীপুরের শ্রীপুরে ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছে এলাকাবাসী। এসব ময়লা-আবর্জনায় বিস্তার করছে মশা-মাছি।

এছাড়া বিভিন্ন রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে বিভিন্ন পেশার মানুষ।  

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বেড়াইদের চালা এলাকায় তানজিল চৌধুরী মুকুট নামে এক ব্যক্তি ময়লা আবর্জনার স্তূপ করছে। ময়লা আবর্জনার স্তূপ থেকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন বাসাবাড়ি ও কল-কারখানায়। এতে দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে এলাকাবাসী।  

এছাড়াও আবর্জনার স্তূপের পাশ দিয়ে ওই এলাকার একমাত্র রাস্তা দিয়েও মানুষ দুর্গন্ধের কারণে চলাচল করতে পারছে না। নাক মুখ চেপে ধরে চলাচল করতে হচ্ছে মানুষকে। একমাত্র সড়কটি দিয়ে বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, পোশাক কারখানার শ্রমিকসহ বিভিন্ন পেশার হাজার হাজার মানুষ চলাচল করে। এসব মানুষের দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বিশাল এই ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। বিভিন্ন বাসাবাড়ি থেকে ভ্যানগাড়ি দিয়ে ময়লা-আবর্জনা এনে অপরিকল্পিতভাবে ফেলা হচ্ছে ওই এলাকায়। এজন্য ওইসব বাসা বাড়ি থেকে প্রতি মাসে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

এভাবে ময়লা-আবর্জনা ফেলা নিয়ে এলাকাবাসীর অভিযোগের শেষ নেই। বৃষ্টি ও বাতাসে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে পুরো এলাকায়। আবর্জনায় বংশবিস্তার করা মশা-মাছি বিভিন্ন বাসাবাড়িতে খাবারে বসছে। ময়লা-আবর্জনার কারণে মশা-মাছির মাধ্যমে ছড়িয়ে ডায়রিয়া, কলেরা, ডেঙ্গু জ্বরসহ বিভিন্ন রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। এছাড়া এলাকাটিতে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন পোশাক কারখানা। ওইসব পোশাক কারখানার শ্রমিকরা অসুস্থ হয়ে নিয়মিত কারখানায় আসতে পারছে না। দুর্গন্ধের কারণে পরিবেশ নষ্ট হয়ে ওইসব শিল্প কারখানায় বিদেশি ক্রেতারা আসা কমিয়ে দিচ্ছে। এতে সরকারের রাজস্ব কমে যাচ্ছে।  

ওই এলাকার কয়েকটি শিল্প কারখানা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধ শ্রমিকরা তাদের কাছে অভিযোগ জানাচ্ছেন। অনেক পোশাক শ্রমিক বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। অসুস্থতার কারণে শ্রমিকদের ছুটির মাত্রাও দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। পোশাক কারখানার ক্রেতারা এলাকার এমন পরিবেশ দেখে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। এতে‌ পোশাক উৎপাদনের অর্ডারও কমে যাচ্ছে।  

স্থানীয় একটি পোশাক কারখানার শ্রমিক ফারুক হোসেন জানান, প্রতিদিন ময়লা-আবর্জনার পাশের রাস্তা দিয়ে হেঁটে অথবা অটোরিকশা করে যাতায়াত করতে হয়। ময়লা-আবর্জনা থেকে উঠে আসা মশা-মাছি শরীরে বসে। এতে শরীরের জামা-কাপড় নোংরা হয়ে যায়। এছাড়াও বাসাবাড়ি, দোকানপাট ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বসে খাওয়া-দাওয়া করতে গেলে ওইসব মশা-মাছি খাবারে বসে খাবার নষ্ট করে ফেলছে। ওইসব খাবার খেয়ে মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। বাতাসে ও বৃষ্টিতে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে ব্যাপকভাবে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে।  

স্থানীয় বাসিন্দা ফরিদা বেগম বলেন, ময়লা আবর্জনার দুর্গন্ধ বাতাসে ভেসে আসে। দুর্গন্ধে ঘর দুয়ারে থাকা যায় না। অনেক সময় বমি আসে। এসব আবর্জনার কারণে মশা-মাছি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এলাকাবাসী ও আমাদের স্বার্থে এখানে ময়লা ফেলা বন্ধ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।
 
তানজিল চৌধুরী মুকুট জানান, বেড়াইদের চালা এলাকায় আমার নিচু জমিটি ভরাট করতে ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা লাগতো। তাই বিভিন্ন বাসাবাড়ি থেকে ময়লা-আবর্জনা এনে জমিটি ভরাট করছি। এসব ময়লা-আবর্জনা বাসা বাড়ি থেকে না আনলে সেখানেও দুর্গন্ধ হতো। আমার লাভের জন্য আমি এখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলছি।  

শ্রীপুর পৌরসভার সাত নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. হাবিবুল্লাহ বলেন, ময়লা আবর্জনার দুর্গন্ধে মানুষের সমস্যা হচ্ছে সেটা ঠিক। আমরা অনেকবার চেষ্টা করেছি এখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা বন্ধ করতে। কিন্তু তানজিল চৌধুরী নামের এক ব্যক্তি ময়লা আবর্জনা দিয়ে তার নিজের জমি ভরাট করছে। এছাড়া ময়লা ফেলার কোন জায়গা না থাকায় আমরা এটা দেখেও না দেখার মতো থাকছি। আবার সবার সাথে কথা বলে দেখি এখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা বন্ধ করার ব্যবস্থা করছি।  

গাজীপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. নয়ন মিয়া জানান, গাজীপুরে সিটি করপোরেশন এবং পৌরসভার ময়লা ফেলার কোন জায়গা নেই। ফলে বিভিন্ন বাসাবাড়ির গৃহস্থলী ময়লা-আবর্জনাগুলো হয় নদীতে ফেলছে নয়তো রাস্তার পাশে ফেলা হচ্ছে। এটার সমাধান সিটি করপোরেশন ও পৌরসভায় দিতে পারবে। এরপরও আমরা পৌরসভাকে বিষয়টি অব্যাহতি করছি, দেখি কি করা যায়।  

শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে এলাকাবাসী অভিযোগ করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১২২০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৪, ২০২৩
আরএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।