ঢাকা, শুক্রবার, ২৪ মাঘ ১৪৩১, ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৭ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

ঢাকা কেন্দ্রিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে: ভূমিমন্ত্রী

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২, ২০২৩
ঢাকা কেন্দ্রিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে: ভূমিমন্ত্রী

ঢাকা: ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেছেন, আমাদের সবকিছু ঢাকা কেন্দ্রিক, এটাই বাস্তবতা, তবে এটা থেকে বের হয়ে আসতে হবে।

শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) ডিসিসিআই অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ঢাকার বিকেন্দ্রীকরণ এবং বাংলাদেশের টেকসই নগরায়ণ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এ কথা বলেন।

মন্ত্রী বলেন, সরকার ঢাকার বাইরেও অবকাঠমোখাতে উন্নয়ন করেছে এবং আশা প্রকাশ করেন এর সুফল দেশবাসী সহসাই পাবেন।

তিনি জানান, মেট্রোরেলের অবকাঠামোর সম্প্রসারণ আরও ১০-১৫ বছর চলমান থাকবে, যা শেষ হলে যানজট কমবে এবং নগরবাসী উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা উপভোগ করবেন। রাজধানীর ঢাকার উপশহরগুলোকে আরও উপযোগী করার জন্য সরকার নিরসলভাবে কাজ করছে বলে তিনি অবহিত করেন।

তিনি বলেন, বর্তমান সরকার অবকাঠামোখাতে উন্নয়ন ও শিল্পায়নে জোরারোপ করার কারণে আমাদের অর্থনীতিতে গতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। ব্যবসা পরিচালন ব্যয় হ্রাস ও সরকারি কার্যক্রম স্বচ্ছতা এবং সুশাসন নিশ্চিতকল্পে সরকার কাজ করছে।

মন্ত্রী বলেন, সিটি জরিপে কিছু ভুল পরিলক্ষিত হয়েছে, তবে সরকার ডিজিটাল সার্ভে গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছে, যা আগামী কয়েক বছরের মধ্যে সম্পন্ন হলে দেশবাসী আধুনিক সেবা সুবিধা পাবেন।

তিনি বলেন, তিন ফসলি জমিতে কোনো শিল্প-কারাখানা নয়, কারণ আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। সেই সঙ্গে দুই ফসলি জমিতেও শিল্প কারখানা স্থাপন না করার জন্য উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

পাশাপাশি কৃষিভিত্তিক শিল্প-কারখানায় আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের উপরও তিনি জোরারোপ করেন।

সেমিনারে সুশাসন, পরিকল্পনার যথাযথ বাস্তবায়ন, রাজনৈতিক সদিচ্ছা, প্রান্তিক পর্যায়ে অবকাঠামো উন্নয়ন, পর্যাপ্ত গণপরিবহন ব্যবস্থা এবং টেকসই অবকাঠামো উন্নয়ন ঢাকা শহরের বিকেন্দ্রীকরণ এবং বাংলাদেশের টেকসই নগারয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে মত দেন অংশগ্রহণকারী আলোচকরা।

অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তার বলেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে নগরায়ণ এমনভাবে গড়ে উঠেছে, যেখানে আমাদের জিডিপির ৬৫ শতাংশ আসছে শহরাঞ্চল হতে।  

তিনি বলেন, ঢাকা কেন্দ্রিক নগরায়ণের জন্য আমরা যেভাবে যানজট, পানি দূষণ, বায়ু দূষণ প্রভৃতি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছি, সেই সঙ্গে আমাদের কর্ম ঘণ্টা নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি বাড়ছে জ্বালানি খরচ ও স্বাস্থ্যঝুঁকি। এমতাবস্থায় ঢাকার বিকেন্দ্রীকরণের কোনো বিকল্প নেই।

গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন বলেন, গ্রাম উন্নয়নে শুধু প্রকল্প নিলেই হবে না, জীবনযাপনে সব প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার পাশাপাশি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বিস্তার করতে হবে, যেন গ্রামের মানুষ আর্থিকভাবে সক্ষম হয়। ইকোনমিক জোনের আশেপাশের জায়গায় শ্রমিকদের বাসস্থান তৈরিতে সরকার কাজ করছে বলে তিনি অভিহিত করেন।  

সচিব আরও বলেন, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কমপক্ষে ২৫ শতাংশ কৃষি জমি সুরক্ষা নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প নেই।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ বলেন, নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার পাশাপাশি আগামী প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর নগর আমাদের নিশ্চিত করতে হবে।

তিনি বলেন, আমাদের ব্যবহৃত প্লাস্টিক বর্জ্য দেশের জলবায়ু, নদী মারাত্বকভাবে দূষণ করছে, এর প্রতি আরও মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের সহ-সভাপতি এবং ভিত্তি স্থপতির ব্যবস্থাপনা পরিচালক স্থপতি ইকবাল হাবিব।  

তিনি বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ৩৩ শতাংশ লোক নগরে বাস করেন এবং ঢাকা মহানগরে প্রতিবছর নতুন করে পাঁচ লাখ লোক যোগ হচ্ছে।
 
তিনি উল্লেখ করেন, অপরিকল্পিত নগরায়ণের জন্য আমরা প্রতিনিয়ত গৃহহীন জনসংখ্যা বৃদ্ধি, বর্জ্য বৃদ্ধি, পানি ও বায়ু দূষণ, বৃক্ষ নিধন ও তাপমাত্রা বৃদ্ধি, জলাবদ্ধতা, যানজট ও স্বাস্থ্য সংকটের শিকার হচ্ছি।

তিনি জানান, রাজধানীতে বিদ্যমান সবুজের পরিমাণ মাত্র ৮ শতাংশ, যা প্রতিনিয়ত হ্রাস পাচ্ছে, সবুজ সুরক্ষা আমাদের আরো সচেতন হতে হবে।  

তিনি ঢাকার বিকেন্দ্রীকরণের ক্ষেত্রে পরিকল্পিত নগরায়ণ, শহরের বিকেন্দ্রীকরণ ও গ্রামীণ জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে আরও জোরারোপের আহ্বান জানান।

আলোচনায় অংশ নিয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের স্থপতি অধিদপ্তরের সাবেক প্রধান স্থপতি কাজী গোলাম নাসির বলেন, ঢাকায় মানুষের আসার প্রবণতা হ্রাসে রাজধানীর বাইরে জনগণের জীবনযাত্রা পরিচালনায় শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, আমরা অতিদ্রুত কৃষি জমি হারিয়ে ফেলছি, যা অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয় এবং খাদ্য নিরাপত্তায় কৃষিজমি সুরক্ষায় আমাদের আরও মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ঢাকা শহরের জন্য একটা ভিশন প্রয়োজন এবং এজন্য সুশাসনের পাশাপাশি জনগণের সম্পৃক্ততা একান্ত অপরিহার্য।

তিনি বলেন, রাজউকের পুনঃগঠন করা এখন সময়ের দাবি। এছাড়াও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার পাশাপাশি প্রতিটি শহরের মাস্টারপ্ল্যান থাকা প্রয়োজন বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি মোহাম্মদ ফজলে রেজা সুমন বলেন, ঢাকা শহরের নগরায়ণে গৃহীত পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সরকারি প্রতিষ্ঠানের উদাসীনতা পরিলক্ষিত হয়, তাই এ ধরনের পরিকল্পনা বাস্তয়নের ক্ষেত্রে আমাদের আরও মনোযোগী হতে হবে। এছাড়াও তিনি দেশের নগর পরিকল্পনাবিদের কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নে আরও সম্পৃক্ত করার ওপর জোরারোপ করেন।

মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে এখাতের প্রতিনিধিরা যানজট নিরসনে বহুতল বিশিষ্ট পার্কিং সুবিধা বৃদ্ধি, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে সংখ্যা বাড়ানো, বুড়িগঙ্গা নদীর নাব্যতা ও ব্যবহার উপযোগিতা বৃদ্ধি, পুরোনো ঢাকা হতে কেরানীগঞ্জে শিল্পকারখানা স্থানান্তরে অবকাঠামো উন্নয়ন ও প্রণোদনা সহায়তা দেওয়ার সুপারিশ করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০২, ২০২৩
এমকে/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।