ঢাকা, শুক্রবার, ২৪ মাঘ ১৪৩১, ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৭ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

বাবা-মা অসুস্থ, ইজিবাইক চালিয়ে সংসার চালান রুনা

সাজিদুর রহমান রাসেল, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩, ২০২৩
বাবা-মা অসুস্থ, ইজিবাইক চালিয়ে সংসার চালান রুনা

মানিকগঞ্জ: ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়, পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি। যে বয়সে পড়ালেখা কিংবা স্বামীর সংসার করার কথা ছিল, সেই সময় জীবন জীবিকার তাগিদে হাতে তুলে নিয়েছে লোহার হ্যান্ডেল।

ইজিবাইক চালিয়ে অসুস্থ বাবা-মা এবং ছোট ভাইয়ের মুখে দু’বেলা খাবার তুলে দিচ্ছেন রুনা আক্তার (২২) নামে এক তরুণী।  

রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) সকালে মানিকগঞ্জ পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের পৌলি এলাকায় ওই তরুণীর সঙ্গে কথা হয় প্রতিবেদকের। আর্থিক অনটনে পড়ালেখা না করায় ছোট্টবেলা থেকেই জীবন সংগ্রামে নামেন রুনা। পৌরসভার পৌলি এলাকার আলতাফ-জহুরা দম্পতির পাঁচ সন্তানের মধ্যে ৪র্থ রুনা।

জানা যায়, শহরের পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের পৌলি এলাকায় ভাঙা চারচালা ঘরে বসবাস করেন বাবা আলতাফ ও মা জহুরা এবং ছোট ভাইসহ রুনা। বড় ভাই কয়েক বছর আগে বিয়ে করে নিজ স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে আলাদা থাকছেন। দুই বোনের বিয়ে হয়েছে। বার্ধক্যজনিত কারণে আলতাফ-জহুরা দম্পতি আগের মতো আর কোনো কাজকর্ম করতে পারেন না।  

দিনমজুর বাবা আলতাফ হোসেন ২০১৬ সালে পরিবারের সচ্ছলতা আনতে জমি বিক্রি করে সেই টাকা দিয়ে রুনাকে সৌদি আরবে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু পা ভেঙে যাওয়ায় ফিরে আসতে হয় তাকে। বাধ্য হয়েই জীবন সংগ্রামের হাতিয়ার হিসেবে ইজিবাইক চালানো শুরু করেন রুনা।

প্রথমদিকে সমাজের অনেক মানুষের লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়েছে তাকে। সব বাধাকে পেছনে ফেলে প্রতিদিন ভোর বেলায় ভাড়ায় চালিত ইজিবাইক নিয়ে বের হন রুনা, সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হলে ফিরে আসেন নিজ গৃহে। সারাদিন যে আয় হয় তার বড় একটি অংশ (পাঁচশ টাকা) দিতে হয় ইজিবাইকের মালিককে বাকি টাকা দিয়ে অসুস্থ বাবা-মা’র ওষুধ এবং সংসারের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রয় করে রুনা।  

রুনার মা জহুরা বেগম বলেন, মেয়ের বয়স হচ্ছে বিয়ে দিতে হবে। কিন্তু অভাব অনটনের জন্য মেয়েকে বিয়েও দিতে পারছি না। আমরা দুজনেই অসুস্থ, অনেক ওষুধ খেতে হয় প্রতিদিন, সেই কারণেই রুনা লোক-লজ্জার ভয় না করে এখন ইজিবাইক চালাচ্ছে। অনেক ভয় করে, মেয়ে মানুষ, তারপরও আমাদের কথা চিন্তা করে সব ভয় মাথায় নিয়েই সংসারের যাবতীয় খরচ ওই বহন করে যাচ্ছে। বড় ছেলে বিয়ে করার পরপরই আলাদা হয়ে যায়, কোনো সময় সে আমাদের খোঁজ খবর রাখেনি। দুই মেয়েকে অনেক কষ্ট করে বিয়ে দিয়েছি, এখন ছোট ছেলে-মেয়েকে নিয়ে কোনোমতে চলছে আমাদের জীবন। জানি না কবে আল্লাহ আমাদের দিকে তাকাবেন।  

রুনা বলেন, আমি মেয়ে বলে কী আমার কোনো দায়িত্ব নেই বাবা-মায়ের প্রতি। যতদিন জীবন থাকবে ততদিন বাবা-মায়ের সেবা যত্ন করবো। তাদের সব ভরণ-পোষণ করাটা আমার একান্ত দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। তারা (বাবা-মা) সারাটা জীবন আমাদের পাঁচ ভাই-বোনদের জন্য অনেক কিছু করেছেন, এখন আমাদের পালা। বড় ভাই অনেক বছর আগেই বিয়ে করে আলাদা থাকেন, বাবা দুই বোনের বিয়ে দিয়েছেন, এখন (বাবা) অসুস্থ, কোনো কাজ করতে পারে না। তাদের তো আর না খাইয়ে মেরে ফেলা যাবে না, সেজন্য কোনো উপায় না পেয়ে আমি ইজিবাইক চালাচ্ছি। প্রতিদিন যে টাকা আয় করি মালিককে দিয়ে যা থাকে তা দিয়েই কোনোমতে চলে যাচ্ছে আমাদের চারজনের সংসার।  

মানিকগঞ্জ পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. কবির হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, রুনা আমার ওয়ার্ডের বাসিন্দা, তাকে এর আগে একটি ইজিবাইকের প্লেট দিয়েছিলাম। পৌরসভার মেয়রের সঙ্গে কথা বলে দেখি রুনার জন্য স্থায়ীভাবে কোনো কিছু করা যায় কিনা।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৩, ২০২৩
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।