ঢাকা, রবিবার, ২৫ মাঘ ১৪৩১, ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

বাংলা সনের পরিবর্তে ভূমি উন্নয়ন কর আদায় হবে অর্থবছরে

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১০, ২০২৩
বাংলা সনের পরিবর্তে ভূমি উন্নয়ন কর আদায় হবে অর্থবছরে

ঢাকা: বিদ্যমান বাংলা সনের পরিবর্তে ভূমি উন্নয়ন কর আদায় হবে অর্থবছরে (জুলাই-জুন)। এমন বিধান যুক্ত করে ‘ভূমি উন্নয়ন কর বিল ২০২৩’ পাস হয়েছে।

এই আইনে কৃষি জমির মোট পরিমাণ ২৫ বিঘা পর্যন্ত হলে ভূমি উন্নয়ন কর দিতে হবে না।

রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) জাতীয় সংসদে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বিলটি পাসের জন্য প্রস্তাব করলে তা কণ্ঠ ভোটে পাস হয়। ১৯৭৬ সালের ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ট্যাক্স অর্ডিন্যান্স রদ করে নতুন আইনটি পাস হলো। খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবান এই তিন পার্বত্য জেলায় এই আইন কার্যকর হবে না।

এ বিলের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে বিরোধী দলের সদস্যরা ভূমি অব্যবস্থাপনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেন, সাধারণ মানুষকে এসব হয়রানির থেকে রেহাই দিতে বিভিন্ন সংস্কার কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে। অনলাইনে রাজস্ব আদায়ের কাজ শুরু হওয়ায় অনেক হয়রানি কমে আসছে। প্রতিদিন সরকার অনলাইনেই পাঁচ কোটি টাকার ওপরে রাজস্ব পাচ্ছে। এটা বিশাল অগ্রগতি।

পাস হওয়া বিলে বলা হয়েছে, একনাগাড়ে তিন বছর ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ না করা হলে প্রথম থেকে তৃতীয় বছর পর্যন্ত বার্ষিক ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ হারে জরিমানা হবে। তৃতীয় বছর শেষে বকেয়া ভূমি উন্নয়ন কর সার্টিফিকেট মামলা করে আদায় করা হবে। কৃষি কাজের ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তি বা পরিবারভিত্তিক কৃষি জমির মোট পরিমাণ ৮ দশমিক ২৫ একর বা ২৫ বিঘা পর্যন্ত হলে ভূমি উন্নয়ন কর দিতে হবে না। তবে এই জমির পরিমাণ ২৫ বিঘার বেশি হলে সম্পূর্ণ কৃষি ভূমির ওপর ভূমি উন্নয়ন কর দিতে হবে।

এ ছাড়া বর্তমানে বাংলা সন (বৈশাখ–চৈত্র) হিসাবে ভূমি উন্নয়ন কর আদায় করা হয়। পাস হওয়া বিলে বলা হয়েছে, ভূমি উন্নয়ন কর আদায় হবে জুলাই–জুন অর্থবছর হিসাবে। প্রতিবছর জুলাইয়ের ১ তারিখ থেকে পরবর্তী বছরের ৩০ জুনের মধ্যে ভূমি উন্নয়ন কর জরিমানা ছাড়া দেওয়া যাবে।

এতে আরও বলা হয়, আখ ও লবণ চাষের ভূমি এবং কৃষকের পুকুরও (বাণিজ্যিক মৎস্য চাষ ব্যতীত) মওকুফের আওতায় থাকবে। এতে বলা হয়েছে, কৃষি ভূমি পল্লি এলাকা বা পৌর এলাকা যেকোনো স্থানে অবস্থিত হোক, সব ক্ষেত্রে অভিন্ন ভূমি উন্নয়ন কর হার ও শর্ত প্রযোজ্য হবে। সরকার যেকোনো ব্যক্তি বা শ্রেণির ব্যক্তিবর্গ বা সংস্থার উন্নয়ন কর মওকুফ করতে পারবে।

ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা প্রতিবছর জুলাইয়ের মধ্যে এলাকা পরিদর্শন করে ভূমির ব্যবহারভিত্তিক অবস্থা বিবেচনায় নির্ধারিত ফরমে সব মৌজার ভূমি উন্নয়ন কর নির্ধারণ করে, তা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে পাঠাবেন। সহকারী কমিশনার তা পরীক্ষা করে অনুমোদন করবেন। ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে ভূমি উন্নয়ন কর আদায় করা যাবে। ইলেকট্রনিক পদ্ধতি সারা দেশে পূর্ণরূপে প্রবর্তিত না হওয়া পর্যন্ত এই পদ্ধতির পাশাপাশি প্রচলিত পদ্ধতিতে যেকোনো ব্যাংকের মাধ্যমে ভূমি উন্নয়ন কর আদায়ের ব্যবস্থা নিতে পারবে।

এ দিকে বিলের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির সদস্য রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, ভূমি জরিপ পুরানো নিয়মে চলছে। জরিপ মানুষকে ফকির বানিয়ে দেয়। যেখানে জরিপ, সেখানেই মানুষ হচ্ছে গরিব। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে নয়-ছয় করে, কাগজ নাই, এটা নাই ওইটা নাই বলে টাকা নেয়। যারা চালাক মানুষ তারা ভূমি কর্মকর্তাদের কাছে গিয়ে সমস্যার সমাধান করতে পারেন। কিন্তু সাধারণ মানুষের তো কোন প্রতিকার পান না। মানুষ জরিপে হয়রানির শিকার হচ্ছে।

৯০ শতাংশ জরিপকারী দুর্নীতিবাজ বলেও দাবি করেন জাপার এই সদস্য। তহশিলদারদের সম্পর্কে মানুষের খারাপ ধারণা রয়েছে উল্লেখ করে ইউএনও, এসিল্যান্ডদের ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ভূমিমন্ত্রীর প্রতি আহবান জানান তিনি।

কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, মূল্য নির্ধারণ করে সাব-রেজিস্টাররা। তারা নিজেদের ইচ্ছেমতো মৌজা রেট বসিয়ে দেয় বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, মন্ত্রী যদি এসিল্যান্ড, সার্ভেয়ার, কানুনগো, সাব-রেজিস্টারদের সমন্বয়ে বসেন তাহলে দেখা যাবে সবচেয়ে কম রেটের মৌজায় বেশি দাম দিয়েছে, আর সবচেয়ে বেশি যেটা হওয়া উচিত সেখানে সরকারকে কর ফাঁকি দিচ্ছে। সবচেয়ে কম রেটে মানুষ কেনাবেচা করছে।

গণফোরাম সদস্য মোকাব্বির খান বলেন, বাংলাদেশের যেসকল সেক্টরে দুর্নীতি হয়, তার মধ্যে ভূমি মন্ত্রণালয় অন্যতম। সিভিল মামলার কয়েক লাখই প্রত্যক্ষা বা পরোক্ষভাবে ভূমি সংক্রান্ত। ২০ থেকে ৩০ বছর মামলার পেছনে ব্যয় করেও মানুষ কোন আদেশ বা নির্দেশনা পাচ্ছে না। অনেক মানুষ জীবদ্দশায় মামলার  রায় দেখে যেতে পারে না। অনেক মানুষ নিস্ব হয়ে যাচ্ছে। এরজন্য দায়ী হচ্ছে ভূমি অফিসের অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। ভূমির কোনো সেবা ঘুষ দেওয়া ছাড়া পাওয়া যায় না। সাবরেজেস্ট্রি অফিসে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকা অবৈধ লেনদেন হচ্ছে। ফলে মানুষ হয়রানি হচ্ছে, আর সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ২১৩৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১০, ২০২৩
এসকে/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ