ঢাকা: বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতিতে চা একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প। কিন্তু চা খাতে নিয়োজিত ক্রমবর্ধমান এ শ্রমজীবী গোষ্ঠী বাংলাদেশের সবচেয়ে সুবিধা বঞ্চিত ও প্রান্তিক মানুষগুলোর অন্যতম।
তাই নারী চা শ্রমিকদের কর্মক্ষেত্রে সব ধরনের নির্যাতন বন্ধের জন্য কার্যকর ভূমিকা পালন করার পাশাপাশি ৮ দফা দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ-বিলস।
মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সঙ্গে চা খাতে নিয়োজিত নারী শ্রমিকদের অধিকার ও শোভন কাজের বিদ্যমান পরিস্থিতি অবহিতকরণ ও মতবিনিময় সভায় এসব দাবির কথা বলা হয়।
মতবিনিময় সভার আয়োজন করে বিলস এবং সহযোগিতায় ছিল অক্সফাম ইন বাংলাদেশ ও সহ-অর্থায়নে ছিল ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন।
সভায় নারী চা শ্রমিকদের ওপর গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিলস গবেষণা বিভাগের উপ-পরিচালক মো মনিরুল ইসলাম।
এতে উপস্থিত বক্তারা বলেন, এখানে চাকরির কোনো নিরাপত্তা নেই, বাগান কর্তৃপক্ষ যেকোনো সময় মৌখিক নির্দেশে তাদের ছাঁটাই করে থাকেন। খুবই স্বল্প বেতনে শ্রমিকরা কাজ করেন এমনকি তাদের মজুরি ঠকানো হয়। নারী শ্রমিকদের ওপর নিঃশব্দে চলে নির্যাতন। কর্মক্ষেত্রে ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম সরবরাহ এবং রক্ষণাবেক্ষণ, মাতৃত্বকালীন সুরক্ষা ও নারী শ্রমিকদের প্রজনন স্বাস্থ্যবিধি বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ দেখা যায় না।
বক্তারা বলেন, নারী চা শ্রমিকরা নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন নয়। সরকারের পক্ষ থেকে নারী শ্রমিকের অধিকার লঙ্ঘনের তদারকি ব্যবস্থাপনাও খুব দুর্বল। কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকের কোনো নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র, সার্ভিস বুক, উপস্থিতি রেজিস্টার দেখতে পাওয়া যায় না। ঝড়-বৃষ্টি বা কোনো আকস্মিক সংকটে বাগানে শ্রমিকের নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা নেই।
অনুষ্ঠানে বলা হয়, অধিকাংশ নারী শ্রমিক পুষ্টিহীনতার শিকার। পাতা উত্তোলনের ক্ষেত্রে গর্ভবর্তী নারী শ্রমিকদের জন্য আলাদা কোনো ব্যবস্থাও নেই। চা বাগানে নারী শ্রমিকদের জন্য কোনো টয়লেট সুবিধা কিংবা তৃষ্ণা নিবারণের জন্য কোনো সুপেয় পানির ব্যবস্থা নেই। পরিবার, কর্মক্ষেত্র, সমাজে চা খাতে নিয়োজিত নারী শ্রমিকদের অবস্থা এবং অবস্থানের ইতিবাচক পরিবর্তন নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজন চা খাতে নিয়োজিত নারী শ্রমিকের ক্ষমতায়ন।
নারী চা শ্রমিকদের সুরক্ষায় বিলসের দাবিগুলো হলো-
১. শ্রমিক অধিকার ও শোভন কাজ বিষয়ে নারী শ্রমিকদের সঠিকভাবে জানানো।
২, ইউনিয়ন এবং বাগান পর্যায়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় নারী শ্রমিকের অংশগ্রহণ ও মতামত মূল্যায়ন করা।
৩. বিরোধ নিষ্পত্তি, দরকষাকষি এবং নেতৃত্বের উন্নয়ন বিষয়ে নারী নেতৃত্বকে প্রশিক্ষণ দেওয়া।
৪. কর্মক্ষেত্র ও কমিউনিটিতে নারীবান্ধব অভিযোগ গ্রহণ, কার্যকর নিষ্পত্তি নিশ্চিত করা ও নারী শ্রমিকরা বিষয়টি জানে তা নিশ্চিত করা।
৫. কর্মক্ষেত্রে নারী শ্রমিকদের প্রতি সব ধরনের নির্যাতন বন্ধের জন্য কার্যকর ভূমিকা পালন করা।
৬. কর্মক্ষেত্রে নারী শ্রমিকদের সমস্যা দেখাশোনা করার জন্য একটি নির্দিষ্ট কাঠামো ও প্রক্রিয়া তৈরি করা।
৭. নারী শ্রমিকদের তাদের অধিকার ও সুরক্ষায় সচেতন করা।
৮. নারী সুরক্ষা নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে সোচ্চার হওয়া।
বিলসের ভাইস চেয়ারম্যান মো. মজিবুর রহমান ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে ও উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য নাঈমুল হাসান জুয়েলের সঞ্চালনায় সভায় উপস্থিত ছিলেন- বিলসের পরিচালক কোহিনূর মাহমুদ, বিলসের নির্বাহী পরিষদের সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, ফেমিনিস্ট লিডারশিপ অ্যান্ড পার্টনারশিপ স্পেশালিস্ট অক্সফাম ইন বাংলাদেশ শাহজাদী বেগম, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব বুলবুল, বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের অর্থ সম্পাদক পরেশ কালিন্দি প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১২, ২০২৪
ইএসএস/আরবি