ঢাকা, বুধবার, ২৯ মাঘ ১৪৩১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

ফরিদপুরের নদ-নদীতে দেদারসে চলছে নিষিদ্ধ উপকরণে মাছ ধরা

হারুন-অর-রশীদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০২৩
ফরিদপুরের নদ-নদীতে দেদারসে চলছে নিষিদ্ধ উপকরণে মাছ ধরা

ফরিদপুর: ফরিদপুরের পদ্মা, মধুমতি, আড়িয়াল খাঁ, কুমারসহ সব নদ-নদী ও খালে চলছে চায়না ও দুয়ারী জাল দিয়ে মাছের বংশ নির্মূলের মহোৎসব। মৎস্য সম্পদ ধ্বংসের এই যজ্ঞে প্রকাশ্যে কাজ করছে নদী পাড়ের হাজারো মানুষ।

তা যেন দেখার কেউ নেই।

ফরিদপুরের বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলে মৎস্যজীবী মানুষের বেশির ভাগই এখন ব্যবহার করছে নিষিদ্ধ চায়না জাল ও চায়না দুয়ারী। প্রকাশ্যেই তারা এসব উপকরণ দিয়ে ছোট-বড় সব ধরনের মাছ ধরে নিঃশেষ করে দিচ্ছে মৎস্য ভাণ্ডার। ফলে প্রতিবছরই কমে আসছে মাছের পরিমাণ।

এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আর এসব নদী থেকে মাছ আহরণ করতে পারবে না বলে শঙ্কা স্থানীয়দের। তাদের দাবি চায়না জাল ও দুয়ারী উৎপাদন যেন বন্ধ করা হয়, এসব উপকরণের সহজ লভ্যতার কারণেই জেলেরা উৎসাহিত হচ্ছে ব্যবহারে।

সরেজমিনে জেলা সদর উপজেলার পদ্মা নদী বেষ্টিত চরাঞ্চল ডিক্রিরচর ও নর্থচ্যানেল ইউনিয়নের পদ্মা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পদ্মার সংযোগ খালগুলোতে চায়না দুয়ারী পেতে রাখা হয়েছে। ভোর রাত থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত জালে আটকে থাকা মাছগুলো তুলছে জেলেরা। তবে দূর থেকে ট্রলার আসতে দেখে অনেক জেলে পালিয়ে যায়। গিয়ে পাওয়া যায় চারজন জেলেকে।

কথা হয় জেলেদের সঙ্গে। নিষিদ্ধ এসব উপকরণ দিয়ে মাছ শিকার আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ জেনেও জীবিকার অজুহাতে তারা এসব করছেন বলে স্বীকার করেন। তাদের দাবি বর্ষা মৌসুমে তাদের জন্য বিকল্প পেশার ব্যবস্থা বা প্রণোদনার।

কাশেম মল্লিক বলেন, নদী ভাঙনে আমার বসতবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। কোনো রকমে টিনের ছাপড়া উঠিয়ে স্ত্রী, সন্তানদের নিয়ে রয়েছি। চরাঞ্চলে তেমন কোনো কাজও নেই। তাই মাছ ধরে বিক্রি করে যা পাই তা দিয়েই কোনো রকমে সংসার চলছে।

তিনি আরও বলেন, এভাবে চায়না দুয়ারী দিয়ে মাছ ধরা অপরাধ জানি, কিন্তু কি করবো পেটের দায়ে এগুলো করতে হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে মাছ ধরা ছাড়া অন্য কোনো কাজ নেই, তাই মাছ মেরে জীবিকা নির্বাহ করি। ভয়ে ভয়ে থাকি কখন অভিযানে ধরা পড়ি, কিন্তু কি করবো, জীবন তো চলে না।

সালাম শেখ বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে বর্ষা মৌসুমে আমাদের প্রণোদনা দিলে আমরা মাছ ধরবো না। পেটের দায়ে এগুলো করি। চরে বসবাস করা কতটা কষ্টের আমরা ছাড়া কেউ বুঝবে না।  

এছাড়াও জেলার সদরপুর উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চল দিয়ারা নারিকেলবাড়িয়া, চর নাসিরপুর, আকোটেরচর এবং চরভদ্রাসন উপজেলার চরাঞ্চলের ইউনিয়নগুলোতে পদ্মা নদীতেও একই অবস্থা। কিছুদূর পর পরই চায়না দুয়ারী পেতে রাখা হয়েছে। কোথাও কোথাও আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে মাছ শিকার করা হচ্ছে।  

দুর্গম চরাঞ্চল হওয়ায় যাতায়াত কষ্টকর হওয়ায় কেউই সেখানে যায় না। তাই নির্বিঘ্নে অবাধে জেলেরা মাছ শিকার করে থাকে। এসব জেলেদের নিজস্ব লোকজন থাকে অদূরে, ট্রলার দেখা মাত্রই তারা ইশারা দেন জেলেদের, সংকেত পেলেই জাল ফেলে রেখে পালিয়ে যায় তারা। এ কারণে তাদের আটক করাও অসম্ভব হয়ে পড়ে।

দিয়ারা নারিকেলবাড়িয়ার বাসিন্দা শহিদুল খলিফা বলেন, চায়না দুয়ারী দিয়ে মাছ শিকার করায় অনেক ক্ষতি হচ্ছে। এই জাল দিয়ে মাছ শিকার করলে সব ধরনের মাছ জালে আটকে পড়ে। ছোট বড় সব ধরনের মাছ আটকে যায়। ভবিষ্যতে দেশীয় মাছ আর পাওয়া যাবে না।

তিনি আরও বলেন, জেলেরা পেটের দায়ে এই জাল দিয়ে মার মারছে, কিন্তু কিছুদিন পরেই দেশীয় মাছের সংকট দেখা দেবে। এই জাল যেখানে তৈরি ও বিক্রি করা হয় সেখানে অভিযান চালিয়ে বন্ধ করে দিতে হবে। জাল না পেলে জেলেরাও মাছ শিকার করতে পারবে না। আগে যেভাবে অন্য জাল দিয়ে মাছ শিকার করতো, সেই জাল দিয়ে শিকার করলে এই ধরনের ক্ষতি হবে না।

এদিকে দুর্গম চরাঞ্চলে মাঝে মধ্যেই ভ্রাম্যমাণ আদালত ও মৎস্য অধিদপ্তর অভিযান পরিচালনা করে জেল জরিমানা ও জাল পুড়িয়ে ধ্বংস করলেও থামছে না চায়না দুয়ারী দিয়ে মাছ শিকার।  

ফরিদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার সরকার বলেন, কারেন্ট জাল ও চায়না দুয়ারী জাল ধ্বংস করতে চালানো হচ্ছে অভিযান। বিভিন্ন সময়ে অভিযান চালিয়ে একাধিক ব্যক্তিকে জেল জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া কয়েকশ চায়না দুয়ারী জাল জব্দ করে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, চায়না দুয়ারী জাল যারা তৈরি এবং বিক্রি করছে তাদের বিরুদ্ধেও অভিযান চালানো হবে। দুর্গম চরাঞ্চলে এই সব জাল দিয়ে মাছ শিকার করা হচ্ছে। ওই সব এলাকায় অভিযান চালানোও কঠিন, তারপরও ঝুঁকি নিয়েই প্রতিনিয়ত আমরা অভিযান পরিচালনা করছি।  

মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, নদ নদী বেষ্টিত এই জেলাটিতে ১৫ হাজারের বেশি মৎস্যজীবী রয়েছে। বছরে মাছের চাহিদার তুলনায় উদ্বৃত্ত উৎপাদন ৮৪৪ মেট্রিক টন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০২৩
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।