ঢাকা: আসন্ন দুর্গাপূজায় সরকার চাইলে হামলার ঘটনা ঘটবে না, না চাইলে ঘটবে, এটাই আজকের বাংলাদেশের বাস্তবতা বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. রানা দাশগুপ্ত।
রোববার (১ অক্টোবর) সরকারি দলের সংখ্যালঘু বান্ধব নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের দাবিতে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের মহাসমাবেশের তারিখ পরিবর্তন সংক্রান্ত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।
জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে যৌথভাবে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ও ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু সংগঠনসমূহের ঐক্যমোর্চা।
সংবাদ সম্মেলনে আসন্ন দুর্গাপূজার নিরাপত্তা বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে রানা দাশগুপ্ত বলেন, শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সরকারের আইনশৃঙ্খলা কমিটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি বৈঠক হয়েছিল। সেখানে কীভাবে দুর্গাপূজায় শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করা যায়, সেটি নিয়ে কথা হয়েছে। আমরা সেখানে পরিষ্কারভাবে বলেছি, ২০২২ সালে শারদীয় দুর্গাপূজায় কোনো ঘটনা ঘটেনি। যা ঘটেছিল, তা ২০২১ সালে। অর্থাৎ, সরকার চাইলে ঘটবে না, সরকার না চাইলেই ঘটবে, এটাই বাস্তবতা আজকের বাংলাদেশে।
তিনি সরকারি দল, বিরোধী দলসহ সমস্ত রাজনৈতিক শক্তিকে একজোট হয়ে সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের স্বার্থে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান। পাশাপাশি পূজার সময় যাতে কোনো গণ্ডগোল না হয়, সেজন্য সবাইকে সচেষ্ট থাকার অনুরোধ করেন।
এছাড়া দুর্গাপূজার সময় রাজনৈতিক কর্মসূচি না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় বিএনপিকে ধন্যবাদ জানিয়ে রানা দাশগুপ্ত বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল গতকাল শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) তাদের স্থায়ী কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আগামী ২০-২৪ অক্টোবর শারদীয় দুর্গোৎসবের দিনগুলোতে তারা কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি দেবে না। আমরা এজন্য তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ কৃতজ্ঞতা জানাই।
২০২১ সালে কুমিল্লার নানুয়ারদীঘি পাড়ে পূজামণ্ডপে হামলার ঘটনা উল্লেখ করে রানা দাশগুপ্ত বলেন, কুমিল্লার ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া ইকবালকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেপ্তার করলেও পরে তাকে বলা হলো, সে পাগল। ওই ঘটনার মূল চক্রান্তকারীদের গ্রেপ্তার করা হয়নি। তাদের গ্রেপ্তার করা গেলে দুর্গোৎসবের আগে পূজার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ও উদ্বেগ থাকতো না।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ড. নিমচন্দ্র ভৌমিক বলেন, অনেক রাজনৈতিক দল মুখে মুক্তিযুদ্ধের কথা বললেও বাস্তবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধ বাস্তবায়নে তেমন কোনো ভূমিকা রাখে না। চলতি সংসদের শেষ অধিবেশনে বৈষম্যবিলোপ আইন, দেবোত্তর সম্পত্তি আইনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে আশা করছি। তবে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন, সংখ্যালঘু কমিশন গঠনের দাবিতে আমাদের আন্দোলন চলমান থাকবে।
এ সময় সরকারি দলের সংখ্যালঘু বান্ধব নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের দাবিতে আগামী ৪ নভেম্বর রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ করার কথা জানান বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতারা। পাশাপাশি ৬ অক্টোবর বিকেল ৪টায় রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে সমাবেশ ও মিছিল করার কথাও জানান তারা।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সহ-সভাপতি ও মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি মনীন্দ্র কুমার নাথ, জগন্নাথ হল অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি মিলন কান্তি দত্ত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রঞ্জন কর্মকার, বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের নির্বাহী মহাসচিব পলাশ কান্তি দে, ওয়ার্ল্ড হিন্দু ফেডারেশনের বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের সভাপতি বরুণ চন্দ্র সরকার, শারদাঞ্জলি ফোরামের সভাপতি রতন চন্দ্র পাল, ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতা স্বপ্না বিশ্বাস, অ্যাড. অপূর্ব ভট্টাচার্য্য, সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য্য, সুবীর দত্ত, বাপ্পাদিত্য বসু, মঞ্জু রাণী প্রামাণিক প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ০১, ২০২৩
এসসি/এমজেএফ