ঢাকা: তামাকজাত পণ্যের ব্যবহার কমাতে ধোঁয়াযুক্ত ও ধোঁয়াবিহীন সব তামাকজাতপণ্যের মোড়কের ৯০ শতাংশ এলাকাজুড়ে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী দেওয়াসহ ছয় সুপারিশ জানিয়েছে টোব্যাকো কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চ সেল (টিসিআরসি)।
বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর) আইন অনুযায়ী তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী বাস্তবায়ন- বর্তমান অবস্থা শীর্ষক গবেষণার ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে এসব সুপারিশ জানায় তামাক বিরোধী এই সংস্থাটি।
অনুষ্ঠানে টিসিআরসির প্রজেক্ট ম্যানেজার ফারহানা জামান লিজা বলেন, দেশে প্রতি বছর প্রায় এক লাখ ৬২ হাজার মানুষ ধূমপানের কারণে সৃষ্ট বিভিন্ন রোগে মারা যায়। দেশের প্রায় চার কোটিরও বেশি মানুষ পরোক্ষ ধূমপানের শিকার। দেশের ৩৫ দশমিক তিন শতাংশ প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ এবং ছয় দশমিক নয় শতাংশ কিশোর-কিশোরী তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার করে। তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় তামাকজনিত অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি দিন দিন আরও বাড়ছে।
তিনি আরও বলেন, তামাকজনিত ব্যাধি ও অকাল মৃত্যুর কারণে বাংলাদেশ প্রতিবছর ৩০ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা বা তিন দশমিক ছয় বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে, যা ২০১৭-১৮ অর্থ বছরের জাতীয় আয়ের (জিডিপি) এক দশমিক চার শতাংশ। তামাকের ব্যবহার কমানো গেলে দেশের জনস্বাস্থ্য উন্নয়নের পাশাপাশি অর্থনৈতিক, কৃষি ও পরিবেশের উন্নয়নও সম্ভব। তাই তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নে শক্তিশালী সরকারি নজরদারি ও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া একান্ত প্রয়োজন।
এ সময় তিনি তামাকজাত পণ্যের মোড়কে স্বাস্থ্য সতর্কবাণী দেওয়া বিষয়ক গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরে বলেন, ৮৭ শতাংশ তামাকপণ্যের মোড়কে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী পাওয়া গেছে। এরমধ্যে ৩৩ শতাংশের মোড়কে পঞ্চাশ শতাংশ এলাকা জুড়ে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী মুদ্রণ করা হয়েছে। ৭৯ শতাংশের মোড়কের উভয়পাশে সচিত্র সতর্কবাণী মুদ্রণ করা হয়নি। ৮২ শতাংশের মোড়কে ছবির সঙ্গে লিখিত বার্তা দেওয়া হয়েছে। ৫৭ শতাংশের মোড়কের লিখিত সতর্কবাণী কালো জমিনে সাদা অক্ষরে মুদ্রিত হয়েছে। ২২ শতাংশের মোড়কের সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী স্ট্যাম্প বা ব্যান্ডরোল বা কাগজ দিয়ে ঢেকে থাকতে দেখা গেছে। ৩৫ শতাংশের মোড়কে ‘শুধুমাত্র বাংলাদেশে বিক্রয়ের জন্য অনুমোদিত’ মর্মে কোনো বাণী দেওয়া হয়েছে। ১০০ শতাংশ বিড়ির মোড়কের সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী ব্যান্ডরোল দিয়ে ঢেকে থাকতে দেখা গেছে।
এছাড়া কোনো সিগারেটের কার্টনেই সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী পাওয়া যায়নি। ৩৮ শতাংশের মোড়কে ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন নম্বর পাওয়া গেছে। ৩৪ শতাংশের মোড়কে ট্রেড লাইসেন্স নম্বর ছিল এবং ৬১ শতাংশের মোড়কে উৎপাদনের তারিখ ছিল।
২১৬টি তামাকপণ্যের তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া যায় বলে জানান ফারহানা জামান লিজা। এর মধ্যে ২৪টি সিগারেট, নয়টি বিড়ি, ১৬১টি জৰ্দ্দা ও ২২টি গুল ছিল। জরিপ করা তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কের মধ্যে ৩০টি কাগজের মোড়ক, ২৯টি টিনের কৌটা, ৭৯টি প্লাস্টিকের কৌটা, ৩৯টি পলি প্যাকেট, ৩৮টি বড় মোড়ক ও একটি কার্টন ছিল।
এ সময় তামাকজাত পণ্যের মোড়কে স্বাস্থ্য সতর্কবাণী বাস্তবায়নের প্রতিবন্ধকতা তুলে ধরে ছয় দফা সুপারিশ তুলে ধরেন তিনি।
সুপারিশগুলো হলো-
১। ধোঁয়াযুক্ত ও ধোঁয়াবিহীন সব তামাকজাতপণ্যের মোড়কের ৯০ শতাংশ এলাকাজুড়ে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী দেওয়া, এতে মোড়কের ওপরে বা নিচে ছবি দেওয়ার সমস্যারও সমাধান হবে।
২। বিড়ি, জর্দা ও গুলের ক্ষেত্রে মোড়কের ভিন্নতা, মানহীন মোড়ক, সাইজের ভিন্নতা, সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী দেওয়ার উপযুক্ত মোড়ক না থাকা, অতি ছোট মোড়ক, এসব সমস্যার একমাত্র সমাধান হতে পারে স্ট্যান্ডার্ড প্যাকেজিং প্রবর্তন করা।
৩। খুচরা শলাকা ও পানের সঙ্গে জর্দা বিক্রি বন্ধসহ, খোলা তামাক ও সাদা পাতাকে মোড়কের আওতায় আনার ব্যবস্থা নেওয়া।
৪। মোবাইল কোর্টের সংখ্যা বাড়ানো ও সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণীবিহীন তামাকপণ্য ধ্বংস করা এবং সংশ্লিষ্ট সবার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া।
৫। উৎপাদিত পণ্যের মোড়কে উৎপাদনকারী কোম্পানির নাম-ঠিকানা সুনির্দিষ্ট করে মুদ্রণ করার ব্যবস্থা নেওয়া এবং উৎপাদনের তারিখ দেওয়া বাধ্যতামূলক করা এবং
৬। আন্তর্জাতিক চুক্তি এফসিটিসির আলোকে দ্রুত প্লেইন প্যাকেজিং প্রবর্তন করা।
এইড ফাউন্ডেশনের প্রকল্প পরিচালক সাগুফতা সুলতানা সভাপতিত্বে এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন টিসিআরসির প্রকল্প পরিচালক সহযোগী অধ্যাপক মো. বজলুল রহমান, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হোসেন আলী খোন্দকার, ভাইটাল স্ট্রাটেজিসের টেকনিকাল অ্যাডভাইজর সৈয়দ মাহবুবুল আলম তাহিন, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের পরিচালক গাউস পিয়ারী মুক্তি, ডেভেলপমেন্ট এক্টিভিটি সোসাইটির সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার মোয়াজ্জেম হোসেন টিপু প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০২৩
এসসি/এসআইএ