গোপালগঞ্জ: গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে মরা মধুমতি নদীতে একটি ব্রিজের অভাবে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন ১০ গ্রামের মানুষ। ব্রিজ না থাকায় ওপারের অন্তত ১০ হাজার মানুষকে যুগ যুগ ধরে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
এছাড়া এপারের পরানপুর, গোপালপুর, তিলছাড়া, ঘোনাপাড়া ও তারাইল গ্রামের মানুষের কয়েক হাজার একর জমি রয়েছে ওপারে। তাই এপারের মানুষকেও কৃষিকাজের জন্য ওপারে যেতে হয়।
ওপারে ইতনা, চরপরানপুর, চরপাচাইল ও পাংখারচর গ্রামে কোনো ক্লিনিক, প্রাইমারি স্কুল, মাদরাসা, পাকা রাস্তা, হাটবাজার ও ইন্টারনেটের লাইন নেই। এখানকার মানুষের সব রকম যোগাযোগ, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও কেনাকাটার জন্য কাশিয়ানীতে আসতে হয়। নদীতে ব্রিজ না থাকায় ওই এলাকার মানুষ সব সুযোগ সুবিধার দিক থেকে একবারেই অবহেলিত। জরুরি চিকিৎসা বা প্রয়োজনে তাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা খেয়াঘাটে অপেক্ষা করতে হয়।
ভুক্তভোগীরা মরা মধুমতির পরানপুর এলাকায় একটি ব্রিজের দাবিতে নানা কর্মসূচি ও দৌড়ঝাঁপ করলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। শুক্রবার (১০ নভেম্বর) বিকেলে কাশিয়ানী উপজেলার রাতইল ইউনিয়নের পরানপুর বাজারে একই দাবিতে জনতা সমাবেশ করেছে।
কাশিয়ানী উপজেলার ওড়াকান্দি ইউনিয়নের সৈয়েদুন্নেছা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক ফরিদ আহম্মেদ মিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জনসভায় প্রধান অতিথি ছিলেন এলজিইডি কাশিয়ানী উপজেলা প্রকৌশলী সজল দত্ত। সমাবেশে সমস্যা ও দুর্ভোগ তুলে ধরে বক্তব্য দেন- কাশিয়ানী উপজেলা স্থানীয় রাতইল ইউপি চেয়ারম্যান আঞ্জুরুল ইসলাম, রাতইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. রাজিব মোল্লা, সাধারণ সম্পাদক দিদারুল ইসলাম, রাতইল (অব.) সেনা কল্যাণ সমিতির সভাপতি ওসমান গনি মিনা, ইতনা গ্রামের মফিজুর রহমান, আশ্রাব আলী খান, পরানপুর গ্রামের নাসির খান, হেমায়েত মোল্লা, মো. সোহান প্রমুখ।
স্থানীয় পরানপুর গ্রামের নুর আলম মোল্লা বলেন, রাতইল ইউনিয়নের পরানপুর গরুর হাটের পার্শ্ববর্তী মরা মধুমতির পশ্চিম প্রান্তের ইতনা, চরপরানপুর, চরপাচাইল, পাংখারচর গ্রামে কোনো ক্লিনিক, প্রাইমারি স্কুল, মাদরাসা, পাকা রাস্তা, হাটবাজার ও ইন্টারনেট লাইন নেই। এখানকার মানুষের যোগাযোগ, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও কেনাকাটার জন্য কাশিয়ানীতে আসতে হয়। যে কারণে ওই এলাকার মানুষ সব সুযোগ সুবিধার দিক থেকে একবারেই অবহেলিত।
অন্যদিকে, পরানপুর গরুর হাট এলাকার মরা মধুমতির পূর্ব তীরের রাতইল ইউনিয়নের পরানপুর, গোপালপুর, তিলছাড়া, ঘোনাপাড়া ও তারাইল গ্রামের মানুষের কয়েক হাজার একর জমি রয়েছে। একটি ব্রিজের অভাবে সুষ্ঠু যাতায়াত করতে না পারায় এই এলাকার মানুষের জমি বছরের বেশিরভাগ সময়েই অনাবাদি থাকে। এ কারণে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, ইন্টারনেট সেবা ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের প্রাপ্তি সুবিধার জন্য পরানপুর গরুর হাট এলাকার মরা মধুমতি নদীতে একটি ব্রিজের দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।
তবে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এখানে একটি ব্রিজ নির্মাণের জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে। সেটি অনেক সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। এ কারণে আমরা এলাকাবাসী আমাদের ভোগান্তি নিরসনে এক্ষুনি বিকল্প যোগাযোগ ব্যবস্থা সৃষ্টি করার উদ্যোগ নিয়েছি। অচিরেই আমরা এলাকার সব শ্রেণীপেশার মানুষের অর্থায়নে ইউপি চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় এখানে একটি ড্রামব্রিজ বা বাশেঁর ব্রিজ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
এলজিইডি কাশিয়ানী উপজেলা প্রকৌশলী সজল দত্ত বলেন, প্রায় ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি ব্রিজের অভাবে বেশ কয়েকটি গ্রাম উন্নয়ন থেকে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। এখানে একটি ব্রিজ নির্মাণ করার জন্য এলজিইডি ইতোমধ্যে দাপ্তরিক কাজ শুরু করেছে। আশা করছি আগামী অর্থবছরে আমরা পরানপুর গরুর হাট এলাকার মরা মধুমতি নদীতে একটি ব্রিজ নির্মাণ করতে পারবো।
কাশিয়ানী উপজেলা চেয়ারম্যান সুব্রত ঠাকুর বলেন, এটা দীর্ঘ দিনের ভোগান্তি। সমস্যা সমাধানে কাজ করবেন বলেও তিনি জানান।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০২৩
আরএ