ঢাকা: দেশজুড়ে বয়ে যাচ্ছে তীব্র তাপদাহ। অসহ্য গরমে বিপর্যস্ত জনজীবন।
মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর ফার্মগেট, আগারগাঁও, শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া ও মিরপুর এলাকা ঘুরে তীব্র তাপদাহে ট্রাফিক পুলিশদের দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়।
এদিন দেখা যায়, মিরপুর-১০ নম্বর গোল চত্বরের দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশরা ছাতা মাথায় সিগন্যাল ধরছেন, আবার ছাড়ছেন। তবে ফার্মগেট সিগনালে দায়িত্বরত ট্রাফিকদের ছাতা ব্যবহার করতে দেখা যায়নি। রোদে দাঁড়িয়ে আর ঘামে ভিজেই দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে ট্রাফিক পুলিশদের।
মিরপুর-১০ নম্বর গোল চত্বরে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ মো. আবুল কালাম বলেন, রোস্টার অনুযায়ী আমাদের ডিউটি থাকে। একদিন সকাল থেকে দুপুর, অন্যদিন দুপুর থেকে রাত। আমাদের ডিউটিতে রোদ, বৃষ্টি ও শীত নেই। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তীব্র তাপদাহ আর শৈত্যপ্রবাহ দেখার সুযোগ নেই। এটাই আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য।
ফার্মগেট সিগন্যালে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ মো. আলমগীর বাংলানিউজকে বলেন, রোদ-বৃষ্টি বলে কোনো কথা নেই। পুলিশের চাকরি করি, এটা আমার কর্তব্য। এখন যদি বলি, রোদে অসুবিধা হবে তাহলে তো আর দায়িত্ব পালন হবে না। এখন রাস্তা ছেড়ে দিলে জ্যাম লেগে যাবে। তখন শতশত মানুষের অসুবিধা হবে আমার জন্য। ফলে রোদ-বৃষ্টি যাই হোক না কেন, দায়িত্ব ছাড়ার কোনো সুযোগ নাই। গরমের সময় আমাদের সাবধানে কাজ করতে বলা হয়েছে। স্যালাইন-পানি নিয়মিত খাচ্ছি।
তেজগাঁও ট্র্যাফিক বিভাগের সার্জেন্ট মো. সারোয়ার হোসেন জানান, আমরা সব সময় যেভাবে ডিউটি করে থাকি, রোদের মধ্যেও একইভাবে ডিউটি করছি। তবে অন্য সময়ের চেয়ে এখন কষ্ট একটু বেশি। রোদ থেকে বাঁচার জন্য আমাদেরকে ছাতা দেওয়া হয়েছে, পানি খাওয়ানো হচ্ছে, স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে। যখন রাস্তাঘাটে গাড়ির চাপ কম থাকে, তখন আমরা একটু ১০-১৫ মিনিট বসে বিশ্রাম করার সুযোগ পাই। তার মানে এই না যে রাস্তা একেবারে খালি থাকে। আমাদের কেউ না কেউ তখন ডিউটিতে অবশ্যই থাকেন। আবার বিশ্রাম শেষে রাস্তায় নেমে আসি। এভাবে রোদের মধ্যেই আমাদের ডিউটি চলছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্র্যাফিক রমনা জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. সাকিব হোসাইন জানান, আমাদের যেসব সদস্য মাঠ পর্যায়ে কাজ করেন, তারা অনেক কষ্টের মধ্য দিয়ে কাজ করছেন। বাইরে প্রচণ্ড রোদের মধ্যে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে কাজ করা আসলেই কঠিন। তাদের জন্য আইজিপি, কমিশনার ও ডিসি স্যার ছাতা দিয়েছেন, নিয়মিত স্যালাইন ও গ্লুকোজ দিচ্ছেন।
তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে বয়স্ক সদস্যদের অথবা যারা একটু অসুস্থ রয়েছেন, তাদের একটু সহজ জায়গায় ডিউটির ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাদের বলা হয়েছে, আপনারা ডিউটিতে থাকাকালে ৩০ মিনিট পরপর একটু বসে বিশ্রাম করে আবার ডিউটি করবেন। এভাবে অল্টারনেটিভ করে কনস্টেবলরা মাঠ পর্যায়ে ডিউটি করছেন। আমাদের সার্জেন্টরাও ডিউটি করছেন। সকাল সাড়ে ৬টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত আমাদের যে ডিউটি থাকে, এই সময় পর্যন্ত প্রচণ্ড হিট থাকে। এর মধ্যে যদি সবাই একসঙ্গে ডিউটিতে দাঁড়ায় তাহলে বেশিক্ষণ ডিউটি করতে পারবে না। এজন্য বিশ্রাম নিয়ে ডিউটি করতে বলা হয়েছে।
কেউ অসুস্থ হলে সেক্ষেত্রে কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে সাকিব হোসাইন বলেন, আমাদের পুলিশ হাসপাতাল রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন জোনের আশপাশে যেসব হাসপাতাল রয়েছে, তাদের সেখানে দ্রুত নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। যদিও আমাদের এখন পর্যন্ত এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। আমরা পরিকল্পনা করে রেখেছি, যদি কেউ অসুস্থ হয়ে যায় তাহলে সঙ্গে সঙ্গে যেন তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া যায়। এছাড়া আমাদের হেল্পলাইন এবং নিজস্ব অ্যাম্বুলেন্স ব্যবস্থাও রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০২৪
এমএমআই/এসআইএ