নয়াদিল্লি থেকে: ভারতের কাছ থেকে পেঁয়াজ, তেল, গমসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্য আমদানির ক্ষেত্রে কোটা চেয়েছে বাংলাদেশ।
শনিবার (জুন ২২) দুপুরে হায়দ্রাবাদ হাউজে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
নরেন্দ্র মোদী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যকার বৈঠক নিয়ে পরে হোটেল তাজ প্যালেসে ব্রিফ করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব মো. নাঈমুল ইসলাম খান ও ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মোস্তাফিজুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, নিত্যপণ্য নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পেঁয়াজ, তেল, গম, চিনিসহ অনেকগুলো নিত্যপণ্য আমরা ভারত থেকে আমদানি করি। এগুলোর জন্য আমরা আগেও কোটা চেয়েছি, যাতে করে আমাদের জন্য একটা নির্দিষ্ট কোটা থাকে। হঠাৎ করে, মাঝে মধ্যে যে (রপ্তানি) বন্ধ করে দেওয়া হয় সেটা যাতে না হয়। সেটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।
এছাড়াও বৈঠকে কানেকটিভিটি, ভারতের পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর চট্টগাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার, সীমান্ত হত্যা, অভিন্ন নদীগুলো নিয়ে যৌথ নদী ব্যবস্থাপনা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সহযোগিতা, ব্রিকস (ব্রাজিল, রাশিয়া, ইন্ডিয়া, চীন, দক্ষিণ আফ্রিকা), তিস্তা প্রকল্পসহ বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনা হয়েছে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বৈঠকে বিভিন্ন ইস্যুতে অত্যন্ত আন্তরিক ও ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে।
ব্রিকসে যুক্ত হতে বাংলাদেশের আগ্রহের কথা জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ব্রিকসের সঙ্গে সংযুক্ত হতে চায়। সেটা যেকোনো ক্যাপাসিটিতে হোক। আমরা এ ব্যাপারে ভারত বর্ষের সহযোগিতা চেয়েছি। ভারতও ইতিবাচকও ভাবে সাড়া দিয়েছে।
হাছান মাহমুদ বলেন, যেকোনো ফরম্যাটে বাংলাদেশ ব্রিকসে যুক্ত হতে চায়। ব্রিকস যদি সিদ্ধান্ত নেয় নতুন দেশকে সদস্যভুক্ত করবে সেই ক্ষেত্রে বা যদি (পার্টনার কান্ট্রি) অংশীদার দেশ করে; যেভাবেই হোক আমরা ব্রিকসে যুক্ত হতে চাই।
দুই প্রধানমন্ত্রীর দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে তিস্তা প্রকল্পের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে হাছান বলেন, ভারতের পক্ষ থেকে টেকনিক্যাল টিম যাওয়া খুবই ইতিবাচক। আমাদের পক্ষ থেকেও (টেকনিক্যাল টিম নিয়ে) বসতে হবে। তাহলে আমরা বুঝতে পারবো কি করতে হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন, তারা (ভারত) যে আমাদের দেশে টেকনিক্যাল টিম পাঠাবে সেটা প্রস্তাবেরই অংশ। তিস্তা প্রকল্পে আমাদের সাহায্য করার জন্য ভারত আগ্রহী। অন্যান্য দেশও এ ব্যাপারে আগ্রহী। দুই দেশের (ভারত ও বাংলাদেশ) টেকনিক্যাল কমিটি বসে এই বিষয়ে আরও এগিয়ে যাবো।
সীমান্তে হত্যা নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, শান্তিপূর্ণ সীমান্ত নিশ্চিত করা, সীমান্তে হত্যা যাতে কমে সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আসলে সীমান্তে হত্যার ঘটনা শূন্যে নামিয়ে আনতে রাজনৈতিক পর্যায়ে দুই দেশ খুবই আগ্রহী।
অভিন্ন নদী ব্যবস্থাপনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ-ভারত ৫৪টি অভিন্ন নদী আছে। সেই ৫৪ নদী নিয়ে কীভাবে যৌথ নদী ব্যবস্থাপনা করা যায় তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সহযোগিতা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, ভারতের সঙ্গে আমরা ‘পাওয়ার শেয়ারিং’ করছি। সেটিকে কীভাবে আরও বিস্তৃত করা যায় তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ভুটান ও নেপাল থেকে আমরা জলবিদ্যুৎ আমদানি করতে চাই। ভুটানের সঙ্গে আমাদের চুক্তিও হয়েছে। ভারত আমাদের সুবিধা দিয়েছে। নেপালের সঙ্গে করতে যাচ্ছি, এ বিষয়ে ভারতের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। ভারত এ বিষয়ে অত্যন্ত ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে।
দুপুরে হায়দ্রাবাদ হাউজে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে শেখ হাসিনার একান্ত এবং দ্বিপাক্ষিক বৈঠক শেষে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ১০টি সমঝোতা স্মারক ও নথি সই করে বাংলাদেশ ও ভারত। এর মধ্যে পাঁচটি নতুন সমঝোতা স্মারক সই, ৩ সমঝোতা স্মারক নবায়ন এবং ভবিষ্যৎ কাজের ক্ষেত্র হিসেবে দুই যৌথ কার্যক্রমের নথি সই হয়।
ঢাকা ফেরার আগে বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুনরায় ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে যান এবং সেখানে তিনি ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎ করেন। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখারের সঙ্গেও সৌজন্য সাক্ষাত করেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪২ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০২২
এমইউএম/এমজে