ঢাকা, রবিবার, ১৯ শ্রাবণ ১৪৩১, ০৪ আগস্ট ২০২৪, ২৮ মহররম ১৪৪৬

জাতীয়

ফুলগাজী-পরশুরামের ৭৪ গ্রাম প্লাবিত, পানিবন্দি ২৮ হাজার পরিবার

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫১ ঘণ্টা, আগস্ট ৩, ২০২৪
ফুলগাজী-পরশুরামের ৭৪ গ্রাম প্লাবিত, পানিবন্দি ২৮ হাজার পরিবার

ফেনী: ফুলগাজী ও পরশুরাম জেলার মুহুরি, কহুয়া ও সিলোনীয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ১৫ স্থান ভেঙে ৭৪ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে ২৮ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

৬৪ পরিবারকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। শনিবার (৩ আগস্ট) বিকেলে দিকে নদীর পানি বেড়ে বিপদসীমার ২২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানিয়া ভূইয়া জানান, গত ১ জুলাই প্রথম বন্যার কবলে পড়েছিল ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলাবাসী। শুক্রবার (২ আগস্ট) দ্বিতীয় দফায় মুহুরি, কহুয় ও ছিলনিয়া নদীর বাঁধ ভেঙে আবারও বন্যার কবলে পড়েছে এ দুই উপজেলার বাসিন্দারা।

টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে এসব নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। মুহুরি, সিলোনিয়া, কহুয়া নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে ফুলগাজী উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন প্লাবিত করেছে। ফুলগাজী ইউনিয়নের নিলক্ষী, গাবতলা, মনতলা, গোসাইপুর, শ্রীপুর, বাসুরা, দেড়পারা, উত্তর দৌলতপুর, মুন্সিরহাট ইউনিয়নের বদরপুর, মান্দারপুর, করইয়া, কালিকাপুর, কামাল্লা, নোয়াপুর, পৈথারা, জাম্মুরা, ফকিরের খিল, কমুয়া, বালুয়া, চানপুর, দক্ষিণ তাড়ালিয়া, দক্ষিণ শ্রীপুর, কুতুবপুর, ফতেহপুর, উত্তর আনন্দপুর, দরবারপুর ইউনিয়নের জগৎপুর, বসন্তপুর, ধলীয়া, চকবস্তা, উত্তর শ্রীপুর, বড়ইয়া, পশ্চিম দরবারপুর, পূর্ব দরবারপুর, আমজাদহাট ইউনিয়নের তালবারিয়া, উত্তরধর্মপুর, দক্ষিণ ধর্মপুর, মনিপুর, ইসলামিয়া বাজার, আনন্দপুর ইউনিয়নের বন্দুয়া, দৌলতপুর, তালপুকুরিয়া, জিএম হাট ইউনিয়নের মধ্যম শ্রীচন্দ্রপুরসহ মোট ৪৩ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

এসব এলাকার ৮ আট হাজার পরিবার পানিবন্দি। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাইবো) হতে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে পানি বিপদসীমার ১০ সেমি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

বর্তমানে ফেনী বিলোনিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কটি ফুলগাজী ও পরশুরাম অংশে প্লাবিত হওয়ায় কার্যত জেলা হেডকোয়ার্টারের সঙ্গে উপজেলার সড়কপথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

এখন পানি ঢুকে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। পরশুরাম ইউএনও আফরোজা হাবিব শাপলা জানান, অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে তার উপজেলায় বন্যায় পৌরসভার বেড়াবাড়ি ও বাউরখুমা দুটি স্থানে ভাঙন সৃষ্টি হয়। এতে বাউরখুমা, বাউরপাথর, বিলোনিয়া, দুবলাচাঁদ, বেড়াবাড়িয়া, উত্তর গুথুমা, কোলাপাড়া ও বাসপদুয়া গ্রামে প্রায় ৭০০০ হাজার পরিবার পানিবন্দি।

মির্জানগর ইউনিয়নের পশ্চিম মির্জানগর ও কাউতলী দুইটি স্থানে ভাঙনের ফলে উত্তর মণিপুর, দক্ষিণ মণিপুর, কালী কৃষ্ণনগর, গদানগর, উত্তর কাউতলী, দক্ষিণ কাউতলী, দাসপাড়া, চম্পকনগর, মেলাঘর, গ্রামের প্রায় ২০০০ পরিবার পানিবন্দি।

চিথলিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ শালধর, মালীপাথর,পশ্চিম অলকার দুটি স্থানসহ মোট ৪ জায়গায় ভাঙনের সৃষ্টি হয়। এতে পূর্ব অলকা, পশ্চিম অলকা, নোয়াপুর, ধনীকুন্ডা, দক্ষিণ শালধর, জংঙ্গলঘোনা, কুন্ডেরপাড়, মালীপাথর ও পাগলীরকুল গ্রামে প্রায় ৯০০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

বক্সমাহমুদ ইউনিয়নের টেটেশ্বর ও সাতকুচিয়ায় ভাঙনর সৃষ্টি হয়ে সাতকুচিয়া জমিয়ারগাঁও, বাঘমারা, চারিগ্রাম টেটেশ্বর, কহুয়া, তালবাড়িয়া গ্রামে প্রায় ২০০০ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

পাউবোর তথ্যমতে, মুহুরি নদীর পানি বিপদসীমার ১৫০ সেমি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানিবন্দি পরিবারের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। ফুলগাজী উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৩০০ পরিবারকে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। আরও ২৫০ প্যাকেট খাবার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ১৩ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে; ৫ মেট্রিক টন মজুদ রাখা হয়েছে। পরশুরাম উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৫৫০ প্যাকেট শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে।

পরশুরামে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে শনিবার স্থানীয় সংসদ সদস্য আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম, জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানিয়া ভূইয়াসহ জনপ্রতিনিধিবৃন্দ ভাঙন কবলিত স্থান পরিদর্শন করেছেন।

মির্জানগর এলাকার বাসিন্দা আবু আব্দুল্লাহ বলেন, এতো প্রবল স্রোতে পানি প্রবেশ করতে এর আগে কখনো দেখিনি। বাড়িতে পানি উঠে গেছে। খুব কষ্টে রাত পার করছি আমরা। মো. খলিল উল্লাহ নামে আরেকজন বলেন, এই দিকের এলাকা উঁচু হওয়ায় সাধারণত বন্যার পানি প্রবেশ করে না। কিন্তু এবার ভারী বর্ষণে রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, ফসলি জমি ও মাছের ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে। পানি আরও বাড়লে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে। খুব খারাপ অবস্থা যাচ্ছে আমাদের। মির্জানগর ইউনিয়নের মেম্বার ফজলুল বারী বলেন, ১৯৯৮, ২০০৪ ও ২০১৮ সালের বন্যা নিজ চোখে দেখেছি। কখনো বাড়িতে পানি ওঠেনি। এবারই প্রথম আমার বাড়িতে পানি উঠল। পুরো এলাকার পরিস্থিতি ভয়াবহ। নদীর পানি না কমলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।

চিথলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফিলতির কারণে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে বারবার লোকালয় প্লাবিত হচ্ছে। একমাস আগে ভেঙে যাওয়া বাঁধ সংস্কারে গড়িমসি করার কারণে আবারও একই স্থানে ভাঙনের দেখা দিয়েছে।

ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. আবুল কাশেম বলেন, এর আগে কখনো এতো পানি দেখা যায়নি। গত দুদিনের ভারী বর্ষণ ও উজানের পানিতে মুহুরি ও কহুয়া নদীর পানি বিপদসীমার ২২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ১৫টি স্থানে ভাঙনের তথ্য পেয়েছি। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে বাঁধের আরও কয়েকটি অংশে ভাঙন সৃষ্টি হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

তবে বৃষ্টিপাত কমে গেলে নতুন করে আর ভাঙনের শঙ্কা নেই। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য বলছে, জুলাই মাসে প্রতিরক্ষা বাঁধের ১১৫ মিটার অংশ ভেঙেছে। এটি মেরামতে তাদের ব্যয় হয়েছে ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, পরশুরামের যে অংশ ৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ে মেরামত করা হয়েছে, এবার বন্যায় সবার আগে সে অংশটি ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকেছে। পরিকল্পিতভাবে কাজ না করে এমন ভাঙা-গড়ার খেলা চলতে থাকলে তারা কোনো দিন এ দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাবে না।

বাংলাদেশ সময়: ২০৫০ ঘণ্টা, আগস্ট ৩, ২০২৪
এসএইচডি/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।