ঢাকা, শনিবার, ১ ভাদ্র ১৪৩১, ১৭ আগস্ট ২০২৪, ১১ সফর ১৪৪৬

জাতীয়

পদত্যাগ করলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ সমন্বয়ক

ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৩০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০২৪
পদত্যাগ করলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ সমন্বয়ক

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়: সমন্বয়হীনতার অভিযোগ তুলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) পাঁচজন সমন্বয়ক ও সহ-সমন্বয়ক পদত্যাগ করেছেন। তবে সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে সমন্বয়কদের আহ্বানে ছাত্রদের যেকোনো যৌক্তিক আন্দোলনে থাকবেন বলে জানান তারা।

শুক্রবার (১৬ আগস্ট) বিকেল ৫টায় চবি সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারা পদত্যাগের বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানান।

পদত্যাগকারীরা হলেন- সমন্বয়ক সুমাইয়া শিকদার, সহ-সমন্বয়ক আল মাসনুন, ধ্রুব বড়ুয়া, ঈশা দে ও সাইদুজ্জামান রেদোয়ান।  

লিখিত বক্তব্যে তারা বলেন, বৈষমাবিরোধী ছাত্র আন্দোলন একটি সফল গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরাচারের পতন ঘটালেও পরে নানা সমন্বয়হীনতা দেখা দিয়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে সমন্বয়করা জবাবদিহিতা করছে না এবং নানা ধরনের সাফাই দিচ্ছেন যা অনেকাংশেই এক পাক্ষিক। প্রথম থেকেই যেসব সমন্বয়হীনতা ও অপরাজনীতির আভাস পেয়েছি, আমরা সেগুলোর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছি।

তারা আরও বলেন, প্রক্টর ও প্রভোস্টদের পদত্যাগের যৌক্তিকতা ও অযৌক্তিকতা বিষয়ে নানা ধরনের বিতর্ক উঠে আসছিল। আমরাও তাদের পদত্যাগ চেয়েছিলাম, কিন্তু সেটা ধাপে ধাপে। ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের আগমন, তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ও সব প্রকার লেজুড়বৃত্তিক ও দখলদারি দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধকরণের ব্যবস্থা করেই যেন ভিসি পদত্যাগ করেন। কিন্তু কোনো মতামতকে যাচাই-বাছাই না করেই সমন্বয়করা ক্যাম্পাসের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে ফেলে। শিক্ষার্থীদের মতামত নিয়ে সমালোচনার সঠিক কোনো প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি।

তারা আরও বলেন, আন্দোলনের সময়ে চবির সমন্বয়ক সংখ্যা ছিল ২২ জন। কিন্তু পরে ৫ আগস্ট চবিতে সমন্বয়ক সদস্য সংখ্যা হয় ৩০ জন। নতুন যে কয়জন কমিটিতে যুক্ত হয়েছে তাদের বিষয় নিয়েও মূল সমন্বয়করা কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি। এসব ঘটনা আমাদের মনে স্বাভাবিক প্রশ্নের জন্ম দেয়। ক্যাম্পাস সংস্কারের কাজে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিতে তারা তৎপর নন, প্রভোস্টদের পদত্যাগ না করিয়ে হলে শিক্ষার্থীদের উঠানোর ব্যাপারে আরও ভালো সিদ্ধান্ত তারা নিতে পারতেন।

তাই আমরা নিজ নিজ সমন্বয়ক পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা করছি। আগামীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে যেসব কর্মসূচি পালন হবে তার সঙ্গে আমাদের কোনো যোগাযোগ নেই। সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে আমরা সবসময় ছিলাম এবং আগামীতেও থাকবো।

সংবাদ সম্মেলনে নিজদের মধ্যে সমন্বয়হীনতার বিষয়টি তুলে ধরে পদত্যাগকারী সহ-সমন্বয়ক আল মাশনুন বলেন, সমন্বয়কদের কাজ হলো সব শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বসে তারা তাদের কাজ চালিয়ে যাবে। তবে সমন্বয়করা সেটা না করে চট্টগ্রামে বিভিন্ন কর্মসূচি পালনে নিজেদের ব্যস্ত রেখেছে। আজও চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে আলোচনা সভা ছিল, আমরা সেটা বর্জন করেছি। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন ইস্যুতে আমরা ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তারা আলোচনা করেনি।

পদত্যাগের বিষয়ে তিনি আরও বলেন, সমন্বয়ক হিসেবে আমাদের আর থাকার কোনো যৌক্তিকতা নেই। যেহেতু আমাদের আন্দোলন শেষ, দেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আছে, তাই আমাদেরও দায়িত্ব শেষ। আমরা সমন্বয়ক হিসেবে আর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে থাকতে চাই না। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে সমন্বয়কদের আহ্বানে ছাত্রদের যেকোনো যৌক্তিক আন্দোলনে আমরা থাকবো।

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় সহ-সমন্বয়ক তালাত মাহমুদ রাফি বলেন, আমরা সব সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীদের মতামতের ওপর ভিত্তি করেই নিয়ে আসছি, এখনও নিচ্ছি। এখানে সবকিছুই পরিষ্কার। কেউ ব্যক্তিগত অপারগতা প্রকাশ করে পদত্যাগ করলে আমরা জোর করতে পারি না। সমন্বয়ক কমিটিতে অনেকেই নিরাপত্তার জন্য আসতে চায়নি বলে কমিটি দিয়েও আমরা তা বিলুপ্ত করতে বাধ্য হয়েছি। যারা সাহস দেখিয়ে এগিয়ে এসেছে তাদের নিয়ে বর্তমান সমন্বয়ক কমিটি। এটা নিয়ে কোনো বিতর্ক থাকার কথা নয়। আমাদের বিপ্লব চলমান। সাধারণ শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি আদায়ে কেউ বিরোধিতা করলে আমরা মোকাবিলা করতে প্রস্তুত।

এর আগে গত ৩০ জুলাই ২২ জন সদস্য করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক কমিটি ঘোষণা করে পরে নিরাপত্তাজনিত কারণে কমিটি বাতিল ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মোহাম্মদ রাসেল আহমেদ। এরপর ৫ আগস্ট মোট ৩০ জনকে সদস্য করে পুনরায় সমন্বয়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ২৩২৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০২৪
আরবি
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।