ঢাকা, রবিবার, ১৭ ভাদ্র ১৪৩১, ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৬ সফর ১৪৪৬

জাতীয়

‘লাশগুলো পিকআপে তুলে আগুন দেওয়া হয়’

অতিথি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৪ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ২০২৪
‘লাশগুলো পিকআপে তুলে আগুন দেওয়া হয়’

সাভার (ঢাকা): একটি ভ্যানে বিছানার চাদর দিয়ে স্তূপ রাখা হয়েছিল কয়েকটি লাশ। সড়কে পরে থাকা আরও একটি লাশ চেংদোলা করে ভ্যানে তুলছেন দুই পুলিশ সদস্য।

 এমন একটি হৃদয় বিদারক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক ভাইরাল হয়। প্রত্যক্ষদর্শী ও নিহত আস-সাবুরের মা রাহেন জান্নাত ফেরদৌসের দাবি এ লাশগুলোই পিকআপে তুলে আগুন দেওয়া হয়।

 

শনিবার (৩১ আগস্ট) দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে অপর একটি ভিডিও বিশ্লেষণ করে ও নিহত আস-সাবুরের মা রাহেন জান্নাত ফেরদৌসের বক্তব্য অনুযায়ী লাশ পুড়িয়ে দেওয়ার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়।

রাহেন জান্নাত ফেরদৌস বাংলানিউজকে বলেন, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগের পর থানায় হামলা চালায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীরা। পুলিশ এ সময় গুলি ছুড়ে। এ সময় কয়েকজন আন্দোলনকারী মারা গেলেও খোঁজ পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে ৬ আগস্ট সকালে আশুলিয়া থানার সামনে একটি পিকআপে পুড়ে যাওয়া কয়েকজনের লাশের খোঁজ মেলে। আমার ছেলের পুড়ে যাওয়া লাশ ওই পিকআপেই পেয়েছি। আমার ছেলের পকেটে থাকা মোবাইলের সিম কার্ডের সূত্র থেকে আস-সাবুরের লাশ শনাক্ত করি। আজ ধারণা করছি ভাইরাল হওয়া ভিডিও'র লাশ গুলো ওই পিকআপে ভরে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। লাশ গুম করার জন্য তারা পিকআপে ভরে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছেন।

পুড়ে যাওয়া লাশের পাশে আইডি কার্ড দেখে সাজ্জাদ হোসেন সজলের পুড়ে যাওয়া লাশ শনাক্ত করেন মা শাহিনা বেগম। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ৫ আগস্ট সাড়ে ৩টা পর্যন্ত মোবাইল ফোনে কথা হয় সাজ্জাদের সঙ্গে। পরে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তার পরদিন সকালে থানার সামনে পুড়ে যাওয়া লাশের সঙ্গে থাকা আইডি কার্ড দেখে সাজ্জাদের পুড়ে কয়লা হওয়া লাশ শনাক্ত করি। সেখানে ছয়টি পোড়া লাশ ছিল। এছাড়া ওই পিকআপে তানজিল মাহমুদ সুজয়ের লাশ শনাক্ত করা হয়।

থানা ফটকের পাশে থাকা বাইপাইল কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা মোফাজ্জল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, সেদিন দুপুরের পর থেকে মসজিদে আসতে পারেনি। এশার নামাজ হয়েছিল। পরদিন সকালে পুড়ে যাওয়া ছয়টি মরদেহের জানাজা পড়ানো হয়েছে।

যে বাড়ি থেকে ভ্যানে লাশের স্তূপের ভিডিও ধারণ করা হয় সেই বাড়ির মালিক রাশিদা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, দুপুর ৩টা ২০ মিনিটে গুলির শব্দ শুরু হয়। এখানে অনেক মানুষ এসেছিল। মানুষ মরে পরে থাকতে দেখছি। তবে কখন গোলাগুলি শেষ হয়েছে বলতে পারবো না। আমরা অনেক ভয়ে ছিলাম। তাই থানার সামনে তাকাতেও পারিনি।

প্রত্যক্ষদর্শী ইমন বাংলানিউজকে বলেন, থানার বিভিন্ন গলিতে ছাত্র-জনতা প্রবেশ করলে তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে পুলিশ। এ সময় বেশ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হলে পুলিশ তাদের থানার সামনে নিয়ে যায়। সেখানে একটি পুলিশ ভ্যানে লাশগুলো রেখে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। ছাত্র জনতা পুলিশের গুলির মুখে পিছু হটে। থানার সামনে কোনো ছাত্র-জনতা ছিল না। সেখানে পিকআপে আগুন ধরালো কে? আগুন ওই পিকআপে পুলিশই লাগিয়েছে। পরে পুলিশকে সেনাবাহিনী সেনানিবাসে নিয়ে গেলে ছাত্র-জনতা থানায় প্রবেশ করে হামলা চালায়।

ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার আহম্মদ মুঈনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আজ সকালে ভিডিওটি আমি দেখেছি। এটি এনালাইসিস করা হচ্ছে। এছাড়া পুরো বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে।

প্রসঙ্গত, বৈষম্যবিরোধী কোটা আন্দোলনকারীরা গত ৫ আগস্ট নবীনগর চন্দ্রা মহাসড়কের বাইপাইল এলাকায় জমায়েত হতে থাকেন। পরে শেখ হাসিনার দেশ ত্যাগের খবরে আন্দোলনকারীরা আশুলিয়া থানার দিকে অগ্রসর হয়। এ সময় আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে পুলিশ। গত ৪ আগস্ট থেকে আজ পর্যন্ত বিভিন্ন হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী ৪২ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে (ভ্যানে লাশের স্তুপের হিসাব ছাড়া)।

আগের নিউজের লিংক >> গা-ঢাকা দিয়েছেন ভ্যানে লাশের স্তূপ করা সেই আরাফাত

                                          ভ্যানে লাশের স্তূপের ভাইরাল ভিডিওটি আশুলিয়ার

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৪ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ২০২৪
জেএইচ  

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।