ঢাকা, রবিবার, ১৭ ভাদ্র ১৪৩১, ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৬ সফর ১৪৪৬

জাতীয়

চারদিকে বন্যার পানি, ঘরের মেঝেতেই মাকে সমাহিত

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫৬ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ২০২৪
চারদিকে বন্যার পানি, ঘরের মেঝেতেই মাকে সমাহিত

ফেনী: ফেনী সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নে বন্যার পানির কারণে চিতায় সমাধি করতে না পারায় প্রিয় বালা বর্মণ নামে ৭০ বছর বয়সী এক বৃদ্ধাকে নিজের ঘরের মেঝেতেই সমাহিত করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) ইউনিয়নের ভগবানপুর গ্রামে সূর্য মাস্টার বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।

সরেজমিনে ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, প্রিয় বালা বর্মণ হৃদরোগে আক্রান্ত ছিলেন। গত ২১ আগস্ট সন্ধ্যার পর বন্যার পানি প্রথমে তাদের উঠানে ওঠে। অল্প সময়ের ব্যবধানে পানি ঘরে প্রবেশ করে। রাত বাড়ার সঙ্গে ঘরের পানিও বাড়তে থাকে। তখনও প্রিয় বালাকে নিয়ে ছেলে সুকুমার চন্দ্র বর্মণ, তার স্ত্রী ও সন্তানরা ঘরে অবস্থান করছিলেন। একপর্যায়ে মাকে পানি থেকে বাঁচাতে ঘরের মধ্যে মাচা করে সেখানে রাখেন ছেলেরা। খেয়ে না খেয়ে আতঙ্কের মধ্যে ছয় দিন কাটানোর পর মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) প্রিয় বালা অসুস্থ হয়ে পড়েন। দুপুরে ছেলে সুকুমার অনেক কষ্টে একটি নৌকা ভাড়া করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালের উদ্দেশে ফেনী রওয়ানা দেন। কিন্তু কিছুদূর যাওয়ার পরই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন প্রিয় বালা। রাস্তা থেকে মায়ের মরদেহ নিয়ে আবার ঘরে ফিরে আসেন সুকুমার। কিন্তু এলাকার চারদিকে তখনো থইথই পানি। প্রিয় বালা বৈষ্ণব হওয়ার কারণে দাহ করার কোনো নিয়ম নেই। শ্মশানে বসিয়ে সমাহিত করার নিয়ম রয়েছে। বুক পরিমাণ পানির কারণে শ্মশানে সমাধি করার মতো কোনো অবস্থা ছিল না। পরে নিরুপায় হয়ে ঘরের মেঝেতেই মাকে সমাহিত করেন তারা।

এ ব্যাপারে সুকুমার চন্দ্র বর্মণ বলেন, দর্জির কাজ করে অসুস্থ মা ও পরিবার নিয়ে কোনোমতে আমাদের সংসার চলতো। সেদিন মরদেহ নিয়ে বাড়ি ফিরে ঘরের মেঝেতে চারিদিকে বাঁধ দিয়ে সমাধিস্থ করার জন্য মাটি খোঁড়া শুরু করি। মাটি খোঁড়ার একপর্যায়ে গর্তের মধ্যে পানি উঠাতে শুরু করে। এর মধ্যেও সাড়ে তিন হাত মাটি খুঁড়তে হয়। একদিকে মাটি খুঁড়ছিলাম আরেকদিকে আমার স্ত্রী পানি সেচ ছিল। পরে কোনোরকমে মাকে সেখানে সমাহিত করেছি।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে সুকুমার আরও বলেন, এমন ভাগ্য কারো না হোক। কখনো এ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে ভাবতে পারিনি। বন্যায় মরদেহ পানিতে ভাসিয়ে দেওয়ার কথা জানলেও কোনোভাবে সাহস করতে পারিনি। সেজন্যই রান্নাঘরের মেঝেতে মাকে সমাহিত করেছি।

প্রিয় বালার বড় ছেলে সুকুমারের স্ত্রী রেখা রানী বর্মন বলেন, বন্যার পানি যখন বাড়তে থাকে তা দেখে আমার শাশুড়ি অনেক ভয় পেয়ে যায়। এতে আতঙ্কিত হয়ে আমার শাশুড়ি মারা যান।

প্রিয় বালার ছোট ছেলে সুধীর বর্মন বলেন, আমরা দরিদ্র অসহায় মানুষ। ছোট ফেনী নদীর কূলে আমাদের বাড়ি। বন্যার পানি আমাদের সবকিছু ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। এখন সবার সহযোগিতা পেলে আমরা বেঁচে থাকতে পারব।

প্রিয় বালা বর্মন ছিলেন একজন বৈষ্ণব। তার স্বামী স্বর্গীয় মনমোহন বর্মন। তাদের দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৬ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ২০২৪
এসএইচডি/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।